পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মনে রাখতে হবে, ছাত্ররাজনীতি আমরা করব। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং সবার আগের কাজ। ছাত্রলীগ দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা প্রত্যেক নেতা-কর্মীর পড়া উচিত এবং পড়ে সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করলে, দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারলে সেই সম্পদটা থাকে। ছাত্রদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছাত্রলীগের যে নীতি, সেই নীতিটা কী? আমি আমাদের বললাম। আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, তারপরেও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, সেটা তো ভুলতে পারি না। সেখান থেকেই তো রাজনীতিতে হাতেখড়ি। সেখান থেকেই শিখেছি শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় একজন শিক্ষার্থীর জীবনকে দেশ ও জাতির জন্য অনেক মূল্যবান আখ্যায়িত করে বলেন, কারণ তারা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারবে। কিন্তু নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে, এটা কখনও হয়না। হতে দেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, যখন খালেদা জিয়া হুমকি দিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে তার ছাত্রদলই যথেষ্ট, তখন আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে কাগজ, কলম, বই তুলে দিয়ে বলেছিলাম- ওটা পথ না। পথ হচ্ছে শিক্ষার পথ। আমরা বাংলাদেশকে নিরক্ষরতা মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
সম্পদ অর্জনের বিষয়ে নিজের পরিবারের উদাহরণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি এবং রেহানা, আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা কথা সব সময় শেখাই; সেটা হলো আমরা একটাই সম্পদ তোমাদের দিয়ে যেতে পারি, সেটা হলো শিক্ষা। শিক্ষা গ্রহণ করলে কোনো হাইজ্যাকাররা হাইজ্যাক করতে পারবে না। কেউ চুরি করতে পারবে না, কেড়ে নিতে পারবে না। শিক্ষাই হচ্ছে চলার পথের পাথেয়। শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু নিজের জীবন নয়, দেশ ও জাতিকে কিছু দেওয়া যেতে পারে।
জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এগুলোর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মাদকাসক্তি শুধু মানুষ নয়, একটা পরিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
জঙ্গিবাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই, মানুষ খুন করার কথা বলেনি। আত্মঘাতী হলে দোজখে যেতে হয়, কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, খুব অবাক লাগে, যখন দেখি ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েও এই জঙ্গিবাদের পথে চলে যাচ্ছে। একটা ভালো অর্থশালী পরিবারের সন্তান হয়ে, উচ্চশিক্ষা নিয়ে কীভাবে জঙ্গিবাদের পথে যেতে পারে? কিসের আশায়? জঙ্গিবাদের পথে তারা বেহেশতে যাবে? এ পর্যন্ত যারা গেছে, তারা কি বেহেশতে গিয়ে খবর পাঠিয়েছে যে তারা বেহেশতে গেছে। সেই খবর তো তারা দিতে পারেনি। কেউ বলতে পারবে? কেউ তো বলতে পারবে না। তাহলে তারা এই পথে কেন যাবে?
শিক্ষার্থীদের যারা বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদে উসকানি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে অনুরোধ করব, মাদক ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। এ পথে যারা যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অশিক্ষিত ব্যক্তিদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের বিদ্যা অর্জনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, তাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়লে দেশের কী দুরবস্থা হতে পারে, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, ’৭৫ সালের পর থেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মিরজাফর মোসতাক ক্ষমতায় গিয়ে তিন মাসও টিকতে পারেনি। তার পেছন থেকে এসে ক্ষমতায় নিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ছিলেন মেট্রিক পাস। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন মেট্রিক ফেল। তাদের সময়ে শিক্ষার হার কমেছিল, সাক্ষরতার হার কমেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের রক্তেরঞ্জিত পতাকা দিয়েছে, রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে। যারা এদের মদদ দিয়েছে, তাদের বিচারও বাংলার মাটিতে একদিন হতেই হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে। কারণ, জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই আমরা রাজনীতি করি। কারও কাছে ভিক্ষা চেয়ে হাত পেতে চলা নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। যতটুকু সম্পদ আমাদের আছে, ততটুকু দেশ গড়তে কাজে লাগাব। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংগঠনটির আজীবন সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের নিজ নিজ দেশ, গ্রাম-এলাকা আছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে দেখতে হবে অন্তত নিজের এলাকায় কোনো নিরক্ষর মানুষ আছে কি না। তাদের খোঁজ নিতে হবে এবং নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দিতে হবে। বাংলাদেশকে দ্রুত নিরক্ষরমুক্ত করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারলে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব না কেন? ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের বর্তমান উন্নয়ন অগ্রগতিকে ‘আলোর পথের যাত্রা’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তার ভাষণে বলেন, আলোর পথের যাত্রা আমরা শুরু করেছি। দেশকে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায় সেজন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে নিজেকে তৈরী করতে হবে। কেননা, এই দেশ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় একদিন তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ উঠে আসবে।
বক্তৃতার শুরুতে নিজেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই ছাত্রলীগের নেতা নয় একজন কর্মী ছিলাম এবং এখনো কর্মীই আছি।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস-বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কারণ ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলাকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাংলাকে বাদ দেবার ঘোষণা যখন পাকিস্তানি শাসকরা দিল তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি তখন ছাত্রলীগ সংগঠন গড়ে তোলেন এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে মর্যাদা দেয়ার জন্য ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগের মতো আদর্শিক সংগঠন থাকলে কেউ বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারবে না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম নির্দেশ দিতেন ছাত্রলীগকে। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যিনি দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাকে কেন রক্ত দিতে হয়, তাকে কেন জীবন দিতে হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হবে তা পাকিস্তানিরা মানতে পারেনি। তাদের এ দেশের দোসররা তা মানতে পারেনি। তাই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। এরপর আমরা দেখেছি দেশের একের পর এক কত ক্যু আর হত্যা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের টিকে থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর পাকিস্তানি শাসকচক্র ও এদেশে তাদের দোসররা ভেবেছিল বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ আর দাঁড়াতে পারবে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করবে, স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দেবে। কিন্তু তারা পারেনি। কারণ বঙ্গবন্ধু আদর্শ রেখে গেছেন, ছাত্রলীগের মতো সংগঠন রেখে গেছেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, এস এম জাকির হোসেইন প্রমুখ। মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৩ টায় সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। তাঁর আগমনে সোহরাওয়ার্র্দি উদ্যানসহ আশপাশের এলাকাটি নবীন-প্রবীন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এই মিলনমেলা এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে পায়রা উড়িয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পুনর্মিলনীর থিম সঙ রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ পরিবেশিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।