Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরশাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে আবারো আন্দোলনে নামব -মহিউদ্দিন চৌধুরী

‘চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস’ পালিত

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : স্বৈরাচার এরশাদের সহযোগীদের দল থেকে বের করে দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মতো গণহত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে বহুল আলোচিত গণহত্যা দিবস পালন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর লালদীঘিতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার বর্ষপূর্তিতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ২৯ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নারকীয় এই হত্যাকা-কে ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আওয়ামী লীগ। আদালতের প্রবেশমুখে নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এসময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ইছহাক মিয়া, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বৈরাচারের দোসরদের দল ও সংসদ থেকে বের করে দেয়ার দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জের ধরে সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সেদিন যারা স্বৈরাচারের সহযোগী ছিল তাদের অনেকে এমপি হয়েছে। এমপি হয়ে বন্দরের সম্পদ লুটপাট করছে। মাদকের ব্যবসা করছে। আর আমাদের  নেতাদের কেউ কেউ সেই বন্দর লুটেরা আর মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে।
তিনি বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে লুটেরা আর মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় যারা দিচ্ছে তাদের ক্ষমা করব না। তাদের জায়গা সংগঠনে হবে না। আর এরশাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আবারও আন্দোলনে নামব। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের নেতাকর্মীদের রক্ত বৃথা যায়নি। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। যারা দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অবশ্যই জয়ী হব।
সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র  ফেরানোর জন্য আমাদের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক নেতাকর্মী জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। অনেক  নেতাকর্মীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করে আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি।
সেদিন অনেকে স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে আমাদের আন্দোলন  ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল। স্বৈরাচারের সহযোগীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করার জন্য চট্টগ্রামের রাস্তায় বোমা নিয়ে ঘুরত। তাদের আমরা গণদুশমন ঘোষণা করেছিলাম।  কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর সেই গণদুশমনদের অনেকে লেবাস পাল্টে বিভিন্ন ফাঁকফোকরে আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে গেছে। চট্টগ্রামের সেই গণদুশমনদের অনেকে এখন এমপি হয়ে সংসদেও আছে।
তৎকালীন ছাত্রনেতা খোরশেদ আলম সুজন আরো বলেন,  স্বৈরাচারের সহযোগী গণদুশমনদের সংসদে দেখলে, দলের  ভেতরে দেখলে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এটা আমাদের  মেনে নিতে কষ্ট হয়।  একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সাহস এবং দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। সেই গণদুশমনদেরও দল এবং সংসদ থেকে বের করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য নেত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।
একই প্রসঙ্গ টেনে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রক্ত-ঘামে  দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছিল। নেতাকর্মীদের রক্তের বিনিময়েই আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় গিয়েছিল। নেতাকর্মীদের ত্যাগের কারণেই আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। এই  নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়ে অনেককে মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছে, সংসদে পাঠিয়েছে। অথচ সেই নেতাকর্মীদের স্মরণ করার সময় এখন এমপি-মন্ত্রী কারো নেই।  দলে এত নেতা, এত এমপি, নিজের দলের সভানেত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, ২৪ জন প্রাণ দিয়েছিল। সেই দিবসের সমাবেশে আসার সময় এমপি- নেতাদের নেই।  এসব নেতার দলে থাকা উচিত নয়।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ২৯ বছর আগে এই দিনে  স্বৈরাচার সামরিক সরকারের নির্দেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ লক্ষ-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালায়। এই দিন ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছিল।  যাদের রক্তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছিল তাদের অবশ্যই স্মরণ করতে হবে।
সমাবেশে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও জহিরুল আলম  দোভাষ, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।  স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ