Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অনির্দিষ্টকাল পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের প্রথমদিনেই স্থবির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিদ্ধান্ত ছাড়াই খুলনায় বৈঠক শেষ : আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক
খুলনা ব্যুরো : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ১২ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার। সোমবার প্রথমদিনেই স্থবির হয়ে যায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলার জনপদ। পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের দাবি না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়। গতকাল বিকালে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে স্থানীয় সার্কিট হাউসে ধর্মঘট আহ্বানকারীদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় সে বৈঠক। তবে দ্রুত পচনশীল পণ্য-দ্রব্য পরিবহন ধর্মঘটের আওতামুক্ত ঘোষণা করেছেন নেতৃবৃন্দ। গত শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকলরীও ধর্মঘটের সাথে যুক্ত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ট্যাংকলরী বন্ধ রেখে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ ছিল। পরিবহন বন্ধ থাকায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল সংকট দেখা দিতে পারে।
সংগঠনের পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম বক্স দুদু বলেন, সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অতিদ্রুত পচনশীল পণ্য-দ্রব্যের পরিবহন ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবিষয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই কোন একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
খুলনা সার্কিট হাউসে বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, কেএমপি, বিআরটিএ এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সংগঠনের আহ্বায়ক আব্দুল গফফার বিশ্বাস বলেন, আমাদের ১২ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দাবিসমূহ হলÑ পরিবহনে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই না করতে প্রেস নোট জারি, অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন, ওয়েব্রিজে জরিমানা বাতিল, ১২ হাজার টাকা স্কেল জরিমানা প্রত্যাহার, ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি ও অনিয়ম বন্ধ, কাগজপত্র পরীক্ষার নামে হয়রানি বন্ধ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ, ব্রিজের টোল কমানো, অপ্রয়োজনীয় স্পিড ব্রেকার অপসারণ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, জ্বালানি তেলের দাম কমানো, ভারতের পেট্রোপোল বন্দরে চালকদের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। একই সাথে গত বছরের সীতাকুন্ড থানায় ৪০০ জন অজ্ঞাত ট্রাক চালকদের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ধর্মঘটে খুলনা বিভাগের সর্ব বৃহৎ সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী হাজারও ট্রাক।
বেনাপোল বন্দরে পণ্য জট : পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১২ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল ধরনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় সোমবার সকাল থেকে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য চালান কাসটমস থেকে শুল্ককরাদি পরিশোধ করার পরও ট্রাকের অভাবে খালাস নিতে পারেনি আমদানিকারকরা। ৭০ ট্রাক পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক ধর্মঘটের মধ্যে পড়ে বেনাপোল কাস্টমসের বাঁশকলের সামনে আটকা রয়েছে। বন্দর থেকে পণ্য বের হতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে পণ্যজটের। তবে ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারত থেকে আসা রফতানি পণ্যবোঝাই ট্রাক খালি করা হচ্ছে। আমদানি-রফতানিসহ বন্দর ও শুল্কভবনের সকল কাজকর্ম স্বাভাবিক রয়েছে। হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা কাজ করছে শুধু আমদানি পণ্য নিয়ে কোন ট্রাক কিম্বা কভার্ডভ্যান বন্দর ছাড়ছে না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, সকালের দিকে কয়েকটি ট্রাকে পেঁয়াজ লোড হয়ে বন্দর থেকে বের হয়ে প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে আছে। বন্দরের সামনে সড়কের দু’পাশে শত শত ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে পণ্য পরিবহনের জন্য। তবে বন্দরের মধ্যে কাজকর্ম ও আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচশ’ ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে যায়। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় বেনাপোল বন্দরে কাঁচামাল পেঁয়াজের অন্তত ৭০টি ট্রাক আটকে আছে। দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে।
সাতক্ষীরা ঃ পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে আটকা পড়ে পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক।
ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ শওকাত আলী জানান, দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।  
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু জানান, ভারত থেকে মালামাল আসলেও আমদানিকৃত পণ্য ভোমরা বন্দর থেকে দেশের কোথাও ব্যবসায়িরা পাঠাতে পারছেন না। ধর্মঘটের কারণে অনেক কাঁচামাল আটকা পড়েছে ভোমরা বন্দরে। দ্রুত সংকট নিরসন না হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ