Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরিষার হলুদ বর্ণে বর্ণিল কুমিল্লার বিভিন্ন গ্রাম

বাম্পার ফলন ঘিরে ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ধান-পাট ও চায়ের পর অর্থকরী ফসল হিসেবে সরিষার চাহিদা কোনো অংশেই কম নয়। এক সময় কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলায় সরিষার আবাদ হতো। বর্তমানে সরিষা আবাদে গোটা জেলাতেই বিস্তৃতি ঘটেছে। বাড়ছে সরিষা আবাদে আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা।
আমনের বাম্পার ফলন শেষে একই জমিতে সরিষার ব্যাপক ফলনে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে কুমিল্লার সরিষাচাষিদের মুখে। কৃষিবিদরা মনে করছেন, প্রতি বছরই সরিষা আবাদে কখনো লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করছে, কখনো লক্ষ্যমাত্রা ছুঁইছে। প্রতি বছর সরিষার বাম্পার ফলন ঘিরে একসময় এই কৃষিপণ্যটি ঘিরে কুমিল্লায় অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। প্রয়োজন শুধু সরিষার চাষ প্রণালীর বিষয়ে কৃষকদের আরো প্রশিক্ষিত করে তোলা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ, সহযোগিতা ও মাঠপর্যায়ে নিবিড় তদারকি।  
সরিষার হলুদ বর্ণে বর্ণিল কুমিল্লার ১৫টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। এক সময় কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলায় সরিষার আবাদ হতো। বর্তমানে সরিষার আবাদে কৃষকদের আগ্রহ অনেক গুণ বেড়েছে। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাড়া মুরাদনগর, আদর্শ সদর, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস ও চান্দিনায় সরিষার ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। এবারের মৌসুমেও এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ আলোয় জ্বলে উঠেছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার কুমিল্লা জেলায় ৮ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টিপাত লেগে থাকায় সরিষার বীজ বপন করা যায়নি অনেক উপজেলায়। কারণ সরিষা বপনের সময় হচ্ছে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। তারপরও কুমিল্লার ওই সব উপজেলার ৭ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে এবারের মৌসুমে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অন্যান্যবারের মতো এবারও সরিষা আবাদে মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট ও হোমনা উপজেলা শীর্ষে রয়েছে। কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দুলছে সরিষা আর সরিষা। কৃষক পরম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সরিষার মাঠে। মাঘের শেষের দিকে ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা হবে। তারপর এসব সরিষা যাবে তেল তৈরির মিল-কারখানায়।
কুমিল্লার মুরাদনগর ও নাঙ্গলকোট উপজেলার কৃষকরা জানান, কম পুঁজিতে সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভ হয়। সরিষা আবাদ প্রণালীর ব্যাপারে কৃষকরা আরো ভালো ধারণা নিতে পারলে সরিষা ফলনে কুমিল্লায় বিপ্লব ঘটানো অসম্ভব কিছু না। সদরের পাঁচথুবী এলাকার কৃষক রিপন মিয়া, আবদুস সালাম, ফরিদ মিয়া, রমজান আলী, নাসির মিয়াসহ অনেকে বলেন, প্রায় দশ বছর ধরেই তারা সরিষা চাষ করে আসছেন। সরিষা আবাদ করে তারা স্বাবলম্বী। সদরের আমড়াতলির পিরাতলি গ্রামের কৃষক কাজী ফরিদের ছেলে কৃষক কাজী সিরাজ জানান, আমনের পর মাঠ খালি থাকায় সরিষা আবাদে নেমে পড়েন। প্রতি বছরই এ সময়টিতে সরিষা আবাদ করে থাকেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সামসুল ইসলাম হাদী জানান, ‘আমন-বোরোর মাঝখানের সময়টি সরিষা আবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী সময়। সরিষা অত্যন্ত লাভজনক পণ্য। আমরা সব সময় কৃষকদের চাষাবাদের ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ আন্তরিকতার সাথে দিয়ে থাকি। নভেম্বরের শুরুতে প্রতিকূল আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও এ মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় ৮ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি।’
কুমিল্লার বেশ ক’জন কৃষিবিদ জানান, আমন-বোরোর মাঝখানের সময়টি সরিষা আবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী সময়। সরিষা অত্যন্ত লাভজনক পণ্য। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েক বছর ধরে সরিষার ব্যাপক ফলন হচ্ছে। সরিষা আবাদের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলে কুমিল্লার কৃষিনির্ভর গ্রামগুলোর আমন, ইরি,  বোরো চাষিরা সেরা সরিষাবান্ধব চাষি হয়ে উঠবে। আর এ অঞ্চলের হলুদ সরিষা ঘিরে এমন একটি সোনালি সময় দেখা দেবে যখন কুমিল্লার সরিষা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ