Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

তিনমাসের মধ্যে যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ খনন

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হৃদকম্পন শুরু হয়েছে নদের দু’পাড়ের অবৈধ দখলদারদের
মিজানুর রহমান তোতা : বহুকাল পর অবশেষে যশোরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ খনন শুরু হচ্ছে। আগামী তিনমাসের মধ্যে খনন কাজের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ভৈরব নদ খননের জন্য ২শ’ ৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই অর্থ ব্যয় হবে ৯৬ কিলোমিটার ভৈরব নদীর খনন ও ড্রেজিংয়ে। ইতোমধ্যে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ভৈরব নদ খননের আগে নদের সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসাথে উচ্ছেদ করা হবে অবৈধ দখলদার। জানা যায়, সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নদ খনন প্রকল্পটি গ্রহণ করে। একনেকের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে (পাউবো) যশোর শহরের বাবলাতলা থেকে আফ্রাঘাট পর্যন্ত খনন ও ড্রেজিং এর যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে যশোর শহরের চেহারা পাল্টে যাবে।
ভৈরব নদ খননে মাধ্যমে দুইপাড়ে পায়ে হাঁটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বহুদিন ধরে ভৈরব নদ খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোর শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন যশোরের মানুষ। মন্ত্রী ও এমপিরা বরাবরই কথা দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেননি। এবার বাস্তবায়ন হওয়ায় যশোরের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে প্রত্যাশা রেখেছেন, যাতে সত্যিকারার্থে নিরপেক্ষভাবে নদের সীমানা পরিমাপসহ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে ভৈরবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোন পক্ষ থেকে গড়িমসি করা হবে না। ভৈরব নদ খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের খবরে ইতোমধ্যে হৃদকম্পন শুরু হয়েছে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো নদের জমি দখল করে বাড়িঘর দোকানপাট নির্মাণকারী ভোগদখলকারীদের। আনুমানিক কতটুকু নদের জমি দখল হয়েছে বিভিন্নসময়ে তা ভেঙ্গে ফেললে বড় ধরনের ক্ষতি হবে কিনা নিজেরা পরিমাপ করে দেখতে শুরু করেছেন দখলদাররা।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ও সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, ভৈরব নদের রিভার বেসিন এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভৈরব নদের প্রকল্পটি গ্রহণ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে যশোরের চৌগাছার তাহেরপুর থেকে যশোরের আফ্রাঘাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার ভৈরব নদ খনন বাবদ ১৯৫৮১.০৯. লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আফ্রাঘাট থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত চার কিলোমিটার নদ ড্রেজিং বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ১৩৯২.৩৬ লাখ টাকা, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার জীবননগর বুড়ি ভৈবর (আপার ভৈরব) নদের সঙ্গে মাথাভাঙ্গা নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য ৩৩ কিলোমিটার নদী খনন বাবদ ২৮৭৯.৯৬ লাখ টাকা, ২০ কিলোমিটার দাইতলা খাল খনন বাবদ ২৩২৫.৫৮ টাকা. ৪.৪৭৫ কিলোমিটার চারটি সংযোগ খাল খনন বাবদ ১৭৬.৮৬ লাখ টাকা ও যশোর শহর এলাকার ভৈরব নদীর দুইপাড়ে ১০ কিলোমিটার হেরিংবন্ড রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৭২.১৯ লাখ টাকা।
সুত্র জানায়, ইতোমধ্যে ভৈরব নদের দুইপাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে একটি সার্ভে টিম গঠন করেছে। উচ্ছেদ কাজ দ্রুত শুরু হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, ভৈরব নদের জমি দখল করে দুইপাড়ে বেশকিছু ভবন ও অসংখ্য দোকানপাট নির্মিত হয়েছে। যার দখলদাররা প্রভাবশালী। ওয়ান ইলেভেনের সময় কিছু উচ্ছেদ হলেও আবার তা বহাল তবিয়তে নির্মিত হয়। ৮০-এর দশক থেকে মূলতঃ নদ দখল শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে বাঁশের খুঁটি তারপর কংক্রিটের পিলার, পরবর্তীতে বিশাল বিশাল অট্টালিকা, একপর্যায়ে হয়ে যায় পৈত্রিক সম্পত্তি।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ঐহিত্যবাহী ভৈরব নদটি গঙ্গা থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভেতর দিয়ে সীমান্ত জেলা মেহেরপুরে ঢুকেছে। মেহেরপুরের সুবলপুর পয়েন্টে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে। ভৈরব আর মাথাভাঙ্গা অভিন্ন ধারায় দর্শনা রেলস্টেশন এলাকা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। কিন্তু ১৮৬১ সালে শিয়ালদহ-কুষ্টিয়া রেলপথ স্থাপনের সময় ভৈরব নদ ভরাট করে মাথাভাঙ্গা নদীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ওই পয়েন্ট থেকে দর্শনা ও জীবননগর হয়ে ভৈরব নদ এসে মিশেছে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষের সাথে। সেখান থেকে ভৈরব নদ যশোর ও শিল্পশহর নওয়াপাড়া হয়ে শিল্পনগরী খুলনা ছুঁয়ে সুন্দরবনের পশুরনদীতে গিয়ে মিশেছে। ভৈরব নদকে ঘিরেই মূলত যশোর, নওয়াপাড়া ও খুলনায় নগর, শহর ও শিল্প গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হয়। ভৈরব নদে একসময় বড় বড় জাহাজ ভিড়তো। এখন ভৈরবে নদীপথ নেই বললেই চলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ