পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধর্ম নিয়ে কটূক্তির সত্যতা পাওয়াও যায়নি
স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে এম সেলিম ওসমানের নির্দেশেই শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর সত্যতা পাওয়া গেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে। তবে শিক্ষক ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন, এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে। গতকাল রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
এ সময় হাইকোর্ট বলেছেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনের চোখে সবাই সমান। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। লাঞ্ছনার ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরি আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অবিলম্বে ওই জিডির নথি ঢাকায় প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম।
প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
পরে এম কে রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেলিম ওসমানের নির্দেশেই শিক্ষককে কান ধরে ওঠবসের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। শ্যামল কান্তি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন, এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া স্কুলছাত্র মো. রিফাত হাসানকে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে
আদালত আদেশে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন নিরপেক্ষ ও বৈষম্য ছাড়া প্রয়োগ করা। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন, সবাই আইনের অধীন এটি আইনের শাসনের মর্মবাণী। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বিচারের স্বার্থে এটি যথাযথ বলে প্রতীয়মান হয়।
মোট ৬৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে আরো নথিপত্র রয়েছে। তদন্তকালে মোট ২৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে ছয়টি সিদ্ধান্ত এসেছে।
প্রথম সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, শ্যামল কান্তি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে গত বছরের ৮ মে মারধর করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে ওই শিক্ষক কটূক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তৃতীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৩ মে ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় জনৈক শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সভাকক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অপু ছাড়া বাকি ১০-১২ জনের নাম কোনো সাক্ষীই প্রকাশ করেননি।
তদন্ত প্রতিবেদনের চতুর্থ সিদ্ধান্ত, গত বছরের ১৩ মে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা প্রদান করা হয় যে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন ওই শিক্ষক। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এমন ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে।
পঞ্চম সিদ্ধান্তে আছে, পাঁচটার দিকে সেলিম ওসমান প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে তাকে গাল-কানজুড়ে দুই হাত দিয়ে পরপর চারটি থাপ্পড় দিয়েছেন এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
শেষ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য হয়েছেন ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য ওই নির্দেশ দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।