পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাশক্তি থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে দূরে থাকতে হবে। সচ্চরিত্রের আদর্শবান হয়ে বাংলাদেশকে যেন আগামী দিনে নেতৃত্ব দিতে পারে, আমাদের আজকের ছেলে-মেয়েদেরকে সেভাবেই নিজেদের গড়ে তোলার আমি আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদফতর আয়োজিত ৪৬তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চায় সমান গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের শিশুদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটে। খেলাধুলা, সঙ্গীত চর্চা, সাংস্কৃৃতিক প্রতিযোগিতাÑ লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রচনা, হস্তলেখা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের শিশুদের মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ হয়। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুক্ত থাকলে শিক্ষার্থীরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকবে বলেও এ সময় ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় শুধু লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত না রাখার জন্য শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা শিক্ষক তাদেরকে আমি বলব, তারা এদিকে আরো মনযোগী হবেন। শুধু সারাদিন যদি ওই-‘পড়’, ‘পড়’, ‘পড়’- বলতে থাকেন তাহলে এটা কারোই ভালো লাগে না।
আজকে আমাদের প্রতিবন্ধীরাও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অনেক পুরস্কার নিয়ে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পড়াশোনার সময় পড়াশোনাও করতে হবে সেইসাথে খেলাধুলাটাও থাকতে হবে। সংস্কৃতি চর্চা ও থাকতে হবে। সেইদিকে মনযোগ দিয়েই আমি সবাইকে কাজ করার আহ্বান জনাচ্ছি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল এবং বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে প্রায় এক বছর ধরে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যারা এই জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছে তাদের সবাইকে জানান আন্তরিক অভিনন্দন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দকে একটা কথা বলতে চাইÑ এই দেশটা আমাদের। অমরাই এদেশটাকে স্বাধীন করেছিÑ আমাদের মহান নেতা সর্বকারের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর তিনি নিজে যেহেতু খেলাধুলা করতেন এবং খেলাধুলার প্রতি তার যথেষ্ট আকর্ষণ ছিল, তাই তখনি তিনি বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতি গঠন করেন এবং জাতির পিতাই ছিলেন তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং ১৯৭২ সাল থেকেই এই খেলাধুলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই ’৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখনই আমরা এই খেলাধূলার প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দেই। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে এসে খেলাধুলা বিশেষ করে আমাদের দেশীয় খেলাগুলোকে আমরা গুরুত্ব দিই এবং তৃণমূল পর্যায়ে জেলা-উপজেলা থেকেই ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কাবাডি, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা, সাঁতারসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ নেই। তাই আজকে তৃণমূল পর্যায় থেকে এসব প্রতিযোগীরা উঠে এসেছে। যারা ভবিষ্যতে আরো উন্নত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে এখানে যে খেলাধুলা হলো, তাতে ১৬ হাজার ১০১টি বিদ্যালয়, সাত হাজার ৬১১টি মাদরাসা থেকে সাতটি ইভেন্টে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। যার মধ্যে ১৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০৮ জন প্রতিযোগী জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আমি সত্যই অনেক আনন্দিত কারণ, এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অনেক মেধাবী ক্রীড়াবিদরা উঠে আসবে। যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পর্যায়ক্রমে তাদের সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারবে।
উল্লেখ্য, সারাদেশের ষষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যায়ের স্কুল, মাদরাসা ও করিগরি সম্পর্কিত ১৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০৮ জন ক্রীড়াবিদ নিয়ে ১৬ জানুয়ারি মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শিক্ষা বোর্ডগুলোকেÑ বকুল, গোলাপ, পদ্ম ও চম্পা- এই চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতা।
৪৪৪ জন ছেলে এবং ৩৪৪ জন মেয়ে ক্রীড়াবিদ নিয়ে এবারের প্রতিযোগিতায় অ্যাথলেটিক্স, হকি, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিসসহ মোট সাতটি আইটেমে ৪২টি ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
প্রধানমন্ত্রী হকিতে ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন (পদ্ম অঞ্চল) আরমানীটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং রানার্স আপ শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ স্কুল ও কলেজের অধিনায়ক ও কর্মকর্তার হাতে ট্রফি, প্রাইজমানি ও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পুরস্কার তুলে দেন।
মেয়েদের হকিতে (পদ্ম অঞ্চল) চ্যাম্পিয়ন আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয় এবং রানার্স আপ সালন্দর উচ্চ বিদ্যালয়। ক্রিকেটে (পদ্ম অঞ্চল) ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও রানার্স আপ রংপুর জেলা স্কুল এবং মেয়েদের ক্রিকেটে (পদ্ম অঞ্চল) চ্যাম্পিয়ন আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এবং রানার্স আপ দেবীগঞ্জ রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়সহ সকল বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে বিজয়ীর ট্রফি, পুরস্কারের অর্থের চেক এবং সনদপত্র গ্রহণ করেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও অন্যান্য দলগত ইভেন্টের বিজয়ীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
অ্যাথলেটিক্সে গোলাপ অঞ্চল জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এবং পদ্ম অঞ্চল জাতীয় রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করায় বরিশাল ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদ্বয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।