Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

১/১১ কুশিলবদের বিচারে তদন্ত কমিশন গঠন করুন : মওদুদ আহমদ

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ওইটি সরকার ছিলো না মিলিটারি ক্যু ছিলো -এমাজউদ্দীন
 স্টাফ রিপোর্টার : ১/১১‘র সেনা সমর্থিত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে অভিযোগ করে পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী তাদের বিচারে ‘ইনকোয়ারি কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের চার মন্ত্রীকে তৎকালে বুটের লাথিতে এদিক থেকে ওদিকে নিয়েছে এমন তথ্য রয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এসব কথা বলেন। তার দল ক্ষমতায় গেলে তদন্ত (ইনকোয়ারি) কমিশন করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন তিনি। একই সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ১/১১ নামের যে সরকার ছিলো সেটা কোনো সরকারের পর্যায়ে পড়েনা। দি ওয়াজ অ্যাবসুলেটলি মিলিটারি টেকওভার, মিলিটারি ক্যু ছাড়া এর ভিন্ন কোনো পরিচিত হতে পারে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যেহেতু বর্তমান সংবিধানে আছে যে, অসাংবিধানিকভাবে কেউ যদি ক্ষমতা দখল করে বা রাষ্ট্রপরিচালনা করে তার সাজা হলো মৃত্যুদ-। যদি সেটাই সংবিধানে থাকে, তাহলে ২০০৭-এ যারা ক্ষমতায় আসলেন। অসাংবিধানিকভাবে তারা দুই বছর দেশকে শাসন করে গেছেন, অর্থনীতি ধ্বংস করে গেছেন, প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গেছেন। তাদের বিচার..?
আমি বলতে চাই, যারা অসাংবিধানিকভাবে, বেআইনিভাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের এতো বড় ক্ষতি করে গেছেন। মইনউদ্দিন, ফখরুদ্দিন, আমার বইতে ৭টা নাম দিয়েছি। আমি সুপ্রিম কোর্টের  একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিশন এ্যাক্টের অধীনে একটি উচ্চ পর্যায়ের ইনকোয়ারি কমিশন করার দাবি জানাচ্ছি।
১/১১’র ‘কুশীলবদের বিচারের অঙ্গিকার পূনর্ব্যক্ত করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে ইনশাল্লাহ ইনকোয়ারি কমিশন করবো। যারা এর পেছনে ছিলেন, যারা এর সাথে ছিলেন, যারা এর নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সকলের শাস্তির ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ করবে।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ড. খন্দকার মোশাররফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ‘জরুরি আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭-০৮)’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ত্ব বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. খন্দকার মোশাররফের এটি নবম গ্রন্থ। আহমেদ পাবলিশিং হাউজের প্রকাশনায় ৩৫৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের দাম ধরা হয়েছে ৬শ’ টাকা।
গ্রন্থের লেখক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১/১১’র সরকার রাষ্ট্রকে কালো অন্ধকারে নেয়ার একটি ইতিহাস। জনগণের শাসনকে তারা বুটের নিচে দাবিয়ে যে সরকার গঠন করেছিলো সেটা ছিলো জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনা সমর্থিত সরকার, অসাংবিধানিক সরকার ও অস্বাভাবিক সরকার। তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছেন, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধুলিসাৎ করে দেশ-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলো। আমার বইতে ওই সময়ে অস্বাভাবিক সরকারের চাল-চিত্র তুলে ধরেছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ বলেন, ১/১১ ছিলো একটি মহলের বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র করার গভীর ষড়যন্ত্র। ফখরুদ্দিন আহমেদের নিয়োগটাই ছিলো অসাংবিধানিক। আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ করে গেছে ওই দুই বছরের সরকার। সব প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করে দিয়েছিলো।
১/১১ সময়ে তাকে গ্রেফতার ও কারাগারের ঘটনার অংশ বিশেষ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে যখন চোখ বেঁধে নিয়ে তারা (সেনা কর্মকর্তারা) আমরা পরামর্শ চাইলেন। আমি বললাম, আমাকে সারাদিন এতো নির্যাতন করা হলো, আমার বিরুদ্ধে কি না বলা হয়েছে। আর এখন রাত্রিবেলা ২টার সময়ে এসেছেন পরামর্শ চাইতে। তারা সিনিয়র অফিসার হবে- রাবী-টারিরা আরো যারা আছেন, আমার সঙ্গে আলাপ করতে। তখন আমার চোখ বন্ধ ছিলো। আমি ওই অবস্থায় বললাম, আপনারা কী করতে চান। তারা বললেন, আমরা আমাদের সেনা নায়ককে দেশের প্রেসিডেন্ট করতে চাই। আমি বললাম, অসম্ভব। আমি বললাম কী করে করবো? তারা বললেন, দুই নেত্রীর মাইনাস হয়ে যাবেন, তাদের বাইরে পাঠিয়ে দেবো আর তখন দেশে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হবে সেখানে আমাদের আর্মির চীফ অব স্টাফ দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন। সেজন্য তারা নির্বাচনের দিকে না গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে মইনউদ্দিনের যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়ন করতে বিরাজনীতিকরণ ও রাজনৈতিক সংস্কারকরণ কাজ শুরু করলো।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এদিকে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টা মামলা হলো এবং সুপ্রিম কোর্টে জামিন পাইনি এরকম মামলাও ছিলো। ওভার নাইট সমঝোতা হয়ে যাওয়ার পরে তার (শেখ হাসিনা) সমস্ত মামলাগুলো নিচের কোর্টে তার অনুপস্থিতিতে স্থগিত করার ব্যবস্থা করা হলো। তার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হলো, তার সমস্ত দলিল-পত্র যা সেনাবাহিনী ও যৌথবাহিনী নিয়েছিলো, তা ফিরিয়ে দেয়া হলো। তার বিদেশে যাওয়ার জন্য সমস্ত আয়োজন সরকার করলো। প্রধান উপদেষ্টা (ফখরুদ্দিন আহমেদ) নিজে তাকে ফোন করলো। চারজন উপদেষ্টা ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আসলেন। কী করে ওই সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছে, তা আমাদের জানতে হবে।
বর্তমান সরকারের এই মন্ত্রিসভায় চারজন সদস্যের নাম না উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বর্তমান সরকারের চারজন মন্ত্রী এখন আছেন, যাদেরকে যৌথবাহিনী ওই সময়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছিলো। আমি নাম বলবো না, তিনি নিজে আমাকে বলেছেন, তাকে বুটে লাথি এদিক থেকে ওদিকে নিয়েছে। তিনি এখন মন্ত্রী আছেন। সুতরাং আমরা ভুলি নাই সেই নির্যাতনের কথা। এই সরকার ওদেরকে এক্সিট দিয়েছেন সমঝোতার মাধ্যমে। ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছে সেটি সমঝোতার নির্বাচন হয়েছে। এই সরকার মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের ধারাবাহিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। সেই সমঝোতায় আজকে মঈন উদ্দিন দেশে নাই, বিদেশে আছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১/১১’র সরকারের সাথে আপোষ করেননি বলেও মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
সভাপতির বক্তব্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ২০০৭ এর ১১ জানুয়ারি যে সরকারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সেটা সেনা সমর্থিত সরকার নয়, সেটা কোনো সরকারের কোনো পর্যায়ে পড়েনা। দি ওয়াজ অ্যাবসুলেটলি মিলিটারি টেকওভার, মিলিটারি ক্যু ছাড়া এর ভিন্ন কোনো পরিচিত হতে পারে না।
কেনো করতে চাইলো তারা। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক রাজনীতির যে ভু-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, তার যে ডিনামিক্স, দ্যাট ওয়াজ  অ্যাসেন্সিয়াল ইন সাউথ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে শক্তিশালী করার জন্য তার প্রতিবেশী যে রাষ্ট্রগুলো নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ-শ্রীলংকা-এগুলোকে যেন কমপ্লাইন্ড সরকার এসব রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয়, এটি ছিলো প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য এদেশের সামরিকবাহিনী ছাড়া অন্যকোনো পন্থা ছিলো না। সেজন্য ওই সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বেসেডর বা হাইকমিশনাররা টুইজ ডে কমিটি প্রতি মঙ্গলবার বসতেন।
সুপ্রিম কোর্টের নবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুুল হাই শিকদার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ