পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : ব্যাট হাতে ক্রিজে প্রস্তুত বিএনপির ডাকসাইটে নেতা সতের বছরের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকা মিজানুর রহমান মিনু অন্যদিকে বোলিং প্রান্তে বল হাতে উদীয়মান নেতা বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গত শুক্রবার সকালে শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেটের ৩২তম টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়েন বিএনপির এ দুই নেতা। ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। শুরু হয় মন্তব্য। মিনু কি ওভার বাউন্ডারি মারবেন নাকি বোল্ড আউট হবেন। বুলবুল কি পারবেন আউট করতে...।
অন্য সময় হলে এমন ছবি নিয়ে কোনো আলোচনায় হতো না। কিন্তু সময়টা এখন ভিন্ন। দলে দুই পক্ষে দু’জনের অবস্থান। সম্প্রতি বিএনপির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলের চিত্র পাল্টে গেছে। দীর্ঘদিন মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকার পর সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে ছিটকে পড়েছেন রাজনীতির মাঠের ঝানু খেলোয়াড় মিজানুর রহমান মিনু। সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বর্তমান মেয়র উদীয়মান নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। কমিটিতে মিনুর ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের খুব একটা ঠাঁই মেলেনি। এ নিয়ে ফুঁসে উঠেছে তার ঘনিষ্ঠরা। এমনিতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভালো অবস্থানে মিনু ঠাঁই না পাওয়াতে ক্ষুব্ধ ছিল। তারপর আবার মহানগর কমিটি থেকেও আউট। এমন পরিস্থিতিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে মিনু সমর্থকরা। গঠন করেছে বিএনপি রক্ষা কমিটি। দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করছে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে আলাদাভাবে। তাদের অভিযোগ হলো ত্যাগী নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে হাইকমান্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে নিষ্ক্রিয়দের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এতে করে দল শক্তিশালী নয় বরং দুর্বল করা হয়েছে। তাছাড়া রাজশাহী বিএনপির রাজনীতিতে মিনুর বিকল্প তৈরি হয়নি। তাকে সম্মানজনক পদে রেখে কমিটি করতে হবে। মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলছেন, হাইকমান্ড সব খোঁজখবর নিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এমন আস্থা নিয়ে নতুন কমিটি দিয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক তোলার অর্থ হলো হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, যা মোটেও উচিত নয়। বরং সবাই মিলেমিশে জাতির ক্রান্তিকালে কাজ করা দরকার। এসব ব্যাপারে রাজনীতির মাঠের ঝানু খোলোয়াড় মিনু তার স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলেন, বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। বিএনপি রক্ষা কমিটি প্রসঙ্গে বলেন যে, কমিটি ঘোষিত হয়েছে। তাতে সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে হয়। তাদের ক্ষোভের ব্যাপারটি হলো অনেক সিনিয়র নেতা এবারের কমিটিতে ঠাঁই পাননি। তাদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে। জেল-জুলুমের ঝড় বয়ে গেছে। এখনো ডজন ডজন মামলা রয়েছে। তবে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে মিনু বনাম বুলবুলের মধ্যকার দ্বন্দ তুঙ্গে উঠেছে। যদিও দু’জনেই কোনো রকমের দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেন না। তারপরও গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী কলেজ মাঠে ৩২তম শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করতে হাজির হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। এসেছিলেন সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। দেখা যায় বর্তমান ও বিএনপির রক্ষা কমিটির ক’জনকেও। ক্রিকেট মাঠে দুই নেতা এক হলেও রাজনীতির মাঠে দু’জনের অবস্থান আপাতত দু’মেরুতে তা স্পúষ্ট। অনেকেই মনে করছেন ক্রিকেট মাঠের মতো সব বিরোধ মিটে যাবে। একত্রিশ বছর ধরে রাজশাহী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, যা শুরু থেকে উদ্বোধন করে আসছেন মিজানুর রহমান মিনু। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী কিংবা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসেছেন বুলবুলও। এবারও এসেছিলেন। উদ্বোধনের পর ক্রিকেট হাতে ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। আর বোলিংয়ে দাঁড়ান বুলবুল। এমন দৃশ্য ধারণ করতে তৎপর ছিলেন অনেকে। আর এই ছবি ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। চলে শেয়ার আর নানা মন্তব্য। ওভার বাউন্ডারি না বোল্ড। এমন মন্তব্য ছিল। রাজনীতির ঝানু খোলোয়াড় কি করবেন? যে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ মাঠে মিনু ক্রিকেটের উদ্বোধন করলেন। সেখানে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনীতির মাঠে যাত্রা শুরু করেন। হাঁকিয়েছেন অনেক চার- ছয়। রাজনীতিতে খেলতে খেলতে হয়েছেন পাক্কা খেলোয়াড়। টানা সতের বছর সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাথে পাঁচ বছরের এমপি। দলের শীর্ষ নেতার প্রচ- ¯েœহ ও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অতঃপর যুগ্ম মহাসচিবের পদটিও ছিল। এরপর কি হলো? একেবারে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তার ওপর এখন নিজ ঘরের মাঠ থেকে আউট। এ কথা অনস্বীকার্য, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার শেকড় বিস্তৃত করেছেন অনেকদুর পর্যন্ত। তার কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা কম নয়। এমন নক্ষত্রের পতনকে অনেকে সহজভাবে মেনে নেয়নি। তাদের ভাষায় মিনুর বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। তার বিরুদ্ধ পক্ষরা বলছেন, এমনভাবে ছিটকে যাওয়ার কারণ হলো আন্দোলনের নামে লুকোচুরি খেলায় হাইকমান্ড অসন্তুষ্ট। আবার কেউ বলেন, যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর সাথে সম্পর্কের অবনতি। বিশেষ করে এক অনুষ্ঠানে রিজভীকে পচা ডিম ছুড়ে অপমান করা হয়েছিল। যার মধুর প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে সুযোগ বুঝে। যদিও এমন কথা মানতে নারাজ রিজভী। কারণ জেলা ও মহানগরেও রিজভীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিতদের অনেকে ঠাঁই পায়নি। এ নিয়ে তাদেরও মন খারাপ। দোষ দেয়া হচ্ছে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতকে। গত ২৭ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর থেকে চলছে পাল্টাপাল্টি। শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকীও পালন হয়েছে পাল্টাপাল্টিভাবে। রাজশাহী বিএনপির এমন বেহাল দশা দেখে ক্ষুব্ধ হতাশ সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। রাজনৈতিক সিডরে বিধ্বস্ত বিএনপির যেখানে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর কথা। সেখানে উল্টো বিভাজন চলছে। যা দলকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দলের এমন বেহাল অবস্থার জন্য একে অপরকে ‘র’-এর এজেন্ট বলতেও কসুর করছে না। সবার চাওয়া প্রবীণ ও নবীন সমন্বয়ে বিএনপি এগিয়ে চলুক। বিতর্কিতদের দিয়ে নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।