Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে পোল্ট্রি শিল্পে উৎকণ্ঠা

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সঠিক পরিসংখ্যান নেই
নাছিম উল আলম : একদিনের বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধির সাথে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পোল্ট্রি শিল্পে অশনিসংকেত দেখছেন খামার মালিকরা। এ শিল্পের সাথে জড়িত অন্তত ৫০ হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চয়তার কবলে। এমনকি যেসব খামার মালিক ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাঝারী ও ক্ষুদ্র পোল্ট্রি গড়ে তুলেছিলেন, তাদের ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চয়তার কবলে।
গত কয়েক মাসে হ্যাচারী মালিকগণ ক্রমাগত একদিনের বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধি করায় এ শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে আসছে। ব্রয়লার, কক, সোনালী ও লেয়ারের দাম গত ছয়মাসে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের খামার মালিকগণ। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে খামার থেকে শুরু করে মুরগির সংখ্যাও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক্ষেত্রে তেমন কোন হেলদোলও নেই। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণিসম্পদের সঠিক কোন পরিসংখ্যানও অধিদফতরের জেলা অফিসগুলোসহ বিভাগীয় অফিসেও নেই। গত ছয়মাসে দক্ষিণাঞ্চলে একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৭৫ টাকা করে। যা ছয়মাস আগেও ছিল ৫০ টাকার নিচে। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা করে। ফলে এসব ব্রয়লারের বাচ্চা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত খাবার ও লালন-পালনে যে পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, তা আর এখন উঠছে না। এমনকি শীতের কারণে খামারগুলোত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করে তাপমাত্রা ঠিক রাখতেও খামার মালিকরা আরো পুঁজি হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে লেয়ার মুরগির একদিনের বাচ্চা এখন বিক্রি হচ্ছেÑ ১০৯-১১০ টাকা করে। আর এসবস মুরগি লালন-পালন করে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করত হচ্ছে। ফলে পুঁজি হারাচ্ছেন খামার মালিকরা। একদিনের বাচ্চার এ মূল্যবৃদ্ধি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে পোল্ট্রি শিল্পকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ খামার মালিকদের। বরিশালে কাজী ফার্মস-এর নিজস্ব হ্যাচারী থেকে একদিনের বাচ্চা বিক্রি করা হলেও গত ছয়মাসে এর মূল্যবৃদ্ধির সঠিক কারণ তারা বলতে পারেননি।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় অফিসের সর্বশেষ পরিসংখ্যানটি দক্ষিণাঞ্চলের পোল্ট্রি শিল্পের ভয়াবহ পরিস্থতির জানান দিচ্ছে। ২০০৭ সালে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় যেখানে ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজারের মত মোরগ-মুরগির সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে, সেখানে তা ২০১০ সালে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের মার্চের পরিসংখ্যানে এ বিভাগের ৬টি জেলায় সর্বমোট মোরগ-মুরগির সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ২৫ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার ২০১৬ পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বরিশাল বিভাগে মোরগ-মুরগির সংখ্যা পুনরায় ১ কোটি ৩৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৭টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ হিসাবটি ২০১০ সালের হিসাবের সাথে হুবহু মিল থাকলেও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তা নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। তবে ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে মাঠ পর্যায়ের কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এঅঞ্চলের মাঠ পর্যায়ে কোন জরিপও পরিচালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ পোল্ট্রি শিল্প মালিকদের তরফ থেকে।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে বিষয়টি সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করে তাদের জনবল সংকটের কথা বলা হয়েছে। এ বিভাগে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনুমোদিত প্রায় সাড়ে ৫শ’ মঞ্জুরীকৃত জনবলের অর্ধেকেরও বেশী পদশূন্য রয়েছে। বিভাগের ৪২টি উপজেলার অর্ধেকেরও বেশীতেই কোন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেই। আর দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলায় কোন ভেটেরিনারী সার্জন পর্যন্ত নেই। এমনকি পুরো বিভাগেই বছরের পর বছর ধরে প্রাণিসম্পদ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট আরো অনেক পদশূন্য থাকলেও বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কোন হেলদোল নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ