Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার মিলনমেলা

কাঁটাতার উপেক্ষা করে ভাষাপ্রেমীদের ঢল

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষার টানে দুই বাংলার হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট নোমান্সল্যান্ড এলাকায়। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে গতকাল রোববার সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করেই কার্যত দলে দলে মানুষ যোগ দেন ২১ শের মিলনমেলায়।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাংগানো ২১ ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ এই সেøাগান নিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধায় মাথানত করতে বাংলাদেশের বাঙালিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার মানুষ, রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ীক ও সংস্কৃতিক দল এবং সরকারের প্রতিনিধিরাও। দু’দেশের বেনাপোল ও বনগাঁও পৌরসভা যৌথভাবে এই মিলনমেলার আয়োজন করেন।
নোমান্স ল্যান্ডে নির্র্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল ৯টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ মন্ত্রী শ্রী উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। সাথে ছিলেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এসএম কামাল হোসেন, সহ-সম্পাদক আব্দুল মজিদ, বেনাপোল বন্দরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র সেন, মিলনমেলার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন এবং পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও অঞ্চলের এমপি শ্রী মমতা ঠাকুর, উত্তর ২৪পরগনা জেলার সভাপতি শ্রীমতি রহিমা মন্ডল, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাও পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য, উত্তর ২৪পরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, জাতীয় সংগীত শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফকির আলমগীর ও নাট্য ব্যক্তিত্ব পিযুষ বন্ধ্যপাধ্যায় ও উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে।
দু’দেশের সীমান্ত রেখা ভুলে নিরাপত্তা বেস্টনি পেরিয়ে ভাষাপ্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়ে। ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে মিষ্টি বিতরণ করে উভয়কে বরন করে নেয়া।
দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ।
বেনাপোল-পেট্রোপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।
ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচছা জানায়। এরপর দু’দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে। এ সময় ভাষার টানে বাঙালির বাঁধনহারা আবেগের কাছে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। এর মধ্যদিয়ে বোঝা গেল রফিক, শফিক, বরকত ও সালামের তরতাজা রক্ত বৃথা যায়নি। ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আবেক ও প্রীতিময় হতে পারে তাও বুঝিয়ে দিল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।
সমগ্র অনুষ্ঠানে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে। বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে দুই সীমান্তে। সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ কাঁটাতারের বেষ্টনী ও বাঁশের বেড়া দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। দুই বাংলার নামী-দামী শিল্পীদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী জাতীয় সংগীত শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফকির আলমগীর ২১-এর সংগীত পরিবেশন ও আবৃতি করেন। কবি মাহবুব আজিজও কবিতা আবৃতি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার মিলনমেলা
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ