Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিংগাইর ও সরাইলে সংঘর্ষে নিহত ৩

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইলে সংঘর্ষে একই পরিবারের ২ জনসহ নিহত হয়েছে ৩ জন। এদিকে পিরোজপুরের জিয়ানগরে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সিংগাইর সদর ইউনিয়নের গোবিন্ধল উত্তর পাড়া গ্রামে গতকাল রোববার সকালে জমি সংক্রান্ত ও টাকা পয়সা লেনদেনের জের ধরে একই পরিবারের ২জন খুন হয়েছে। নিহতরা হচ্ছেন, ওই গ্রামের মৃত দিরগজ মোল্লার ২ পুত্র টেনডল (৫৬) ও তার চাচাতো ভাই রহিম মোল্লার পুত্র আব্দুল আজিজ (৫০)। সেই সঙ্গে আহত হয়েছে আরো ৩জন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গোবিন্ধল গ্রামের মৃত দিরগজ মোল্লার কন্যা হাসনা বেগম দীর্ঘদিন প্রবাসে (বাহরাইন) থাকা অবস্থায় গত ৪/৫ মাস আগে সেখানে মারা যান। হাসনার উপার্জিত রেখে যাওয়া অর্থ সম্পত্তি তার বড় বোন রাজিয়ার স্বামী সামছুল ও পুত্র জাহিদ, রশিদ ও জসিম ভোগ করতে থাকে। হাসিনার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার অপর ৩ ভাই টেনডল মোল্লা, করিম মোল্লা, অহেদ মোল্লা ও বোন হেলেনা ওয়ারিশান হিসেবে দাবি করলেও ওই অর্থ ও জমি আত্মসাতের পায়তারা করে আসছিল বোন জামাই সামছুল ও তার পুত্ররা। এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হলে দফায় দফায় সালিশ বৈঠক হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় জামটি মার্কেটের নুরুল ইসলামের চায়ের দোকানে নিহতদের ওপর হামলা চালায় সামছুল ও তার পুত্রগণ। এ বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার সকাল ৮ টার দিকে সামছুলের বাড়িতে মিমাংসার জন্য একত্রিত হয় টেনডলগংরা। এ সময় সামছুলের পুত্র জাহিদ, জসিম, রশিদ হামলা চালায় টেনডল, আজিজ, করিম, রমজান ও আলামিনের ওপর। প্রথমে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম ও পরে বল্লম দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই টেনডল মোল্লা ও আজিজ মোল্লা মারা যায়। আহত হয়েছেন ৩ জন। গুরুতর আহত করিম মোল্লাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। অপর দু’জন রমজান (২৭), টেনডলের পুত্র আলামিনকে (১৬) সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের দাবি, সামছুল ও তার পুত্ররা তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এ হত্যাকা-ে সামছুলের পরিবারের লোকজন ছাড়াও তার পুত্র জসিমের শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রতিবেশী রশিদ, সিদ্দিক, জিয়াউদ্দিনসহ ১৫/২০জন অংশ নিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। সিংগাইর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিঠু বলেন, মৃত হাসিনার রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে একাধিক সালিশ বৈঠকে মিমাংসা না হওয়ায় এ হত্যাকা- সংঘঠিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর থানার ওসি মোঃ সৈয়দুজ্জামান বলেন, এক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মিমাংসা করে দেয়া হয়েছিল। সে মিমাংসা সামছুল পক্ষ মেনে না নিয়ে এ হত্যাকা- ঘটায়। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিল। জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরে গত শনিবার রাত নয়টার দিকে ব্যাপারীপাড়া ও মালিগাঁও গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে কিরন মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তিনি উপজেলার ব্যাপারীপাড়া গ্রামের টেলহা মিয়ার ছেলে। সংঘর্ষে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শের আলম মিয়া ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আরশাদসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্র জানায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া গ্রামের রামিন মিয়া (২০) একই গ্রামের মুরসালিন মিয়া (২১) গত শনিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলা সদরের প্রাতঃবাজার এলাকায় নান্নু মিয়ার (৫০) দোকানেরর সামনে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। এসময় নান্নু মিয়া, তার ছাট ভাই সানু মিয়া (৪০) ও চাচাত ভাই কামাল মিয়া (৩৫) রামিন ও মুরসালিনকে মারধর করে। নান্নু মিয়া উপজেলা সদরের মালিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে উভয় গ্রামের লোকজন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুইঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আরশাদ, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহাদৎ হোসেন, জহির মিয়া ও আবদুল মান্নানসহ উভয় পক্ষের অন্ততঃ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কিরন মিয়াকে রাত দেড়টার ঢাকায় নেওয়া পথে তিনি মারা যান। গতকাল রোববার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে কিরন মিয়ার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আহতদের মধ্যে মালিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৫ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সরাইল থানার ওসি মো. আলী আরশাদ জানান, সংঘর্ষে ৩ রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।
পিরোজপুর জেলা সংবাতদাতা জানান, পিরোজপুরের জিয়ানগরে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পাড়েরহাটের নলবুনিয়া গ্রাম থেকে ইন্দুরকানী থানা পুলিশ রফিকুল ইসলাম (২০) নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। ইন্দুরকানী থানার উপপরিদর্শক মোতাহার হোসেন জানান, রফিকুল উপজেলার পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ শঙ্করপাশা গ্রামের হারুন খলিফার ছেলে। রফিকুলের লাশ নলবুনিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার গলায় দাগ রয়েছে। ডাক্তারের প্রতিবেদন না পাওয়ার পূর্বে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা বলা যাচ্ছে না।
স্থানীয় এক সূত্রে জানা যায়, একুশের প্রথম প্রহরে অস্থায়ী ভাবে নির্মিত একটি শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কিছু যুবকেরা। তারা বাড়ি ফেরার পথে একটি বাতাবি লেবু গাছের নিচে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিংগাইর ও সরাইলে সংঘর্ষে নিহত ৩

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ