Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বোদায় থমকে আছে কমলা চাষ

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ লিহাজ উদ্দীন মানিক, বোদা (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা মুখ থুবড়ে আছে। ফলে এ উপজেলায় রসালো ফল কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকার পরেও কিছুটা ভাটা পড়েছে। তার পরও উপজেলায় কমলা চাষীর সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ জন্য জেলা ও উপজেলা মিলে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় ২ শতাধিক কমলার বাগান। অনেক চাষী কমলা চাষ করে লাভবান হয়েছে। চাষীরা বর্তমানে কমলার বাগানগুলো পরিচর্যা করছে, কারণ যাতে তারা এবার গাছে বেশি ফলন দেখতে পায়। ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসে এ অঞ্চলের কমলা গাছগুলোতে মুকুল আসে বলে চাষীরা জানিয়েছে। এখন কমলা গাছের নতুন পাতা গজাতে শুরু হয়েছে। এই নতুন পাতা থেকে ফুল তার পরে ফল আসবে। একটি কমলা গাছে পাঁচ থেকে ছয়শত কমলা ধরে বলে বোদা পৌর শহরের কমলা চাষী আজিম উদ্দীন বাচ্চু এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। আগে এ অঞ্চলের কমলা চাষীরা কমলা উত্তোলন করে বিক্রিও করতো আর নিজেদের খাবার জন্য রেখে দিতো। কমলা গাছ রোপনের পর অল্প পরিশ্রমে ভাল ফলন ও ভাল মূল্য পাওয়ায় অনেক কমলা চাষীর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি পরীক্ষা করে জানা যায়, কমলা চাষের জন্য এ মাটি ও জলবায়ু অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার কমলা স্বাদে ও গন্ধে ভারতীয় কমলা বা বাজারের অন্যান্য কমলার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি তাই এ অঞ্চলের অনেক কৃষক কমলা চাষে এগিয়ে এসেছেন। অল্প খরচ ও খুব কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফা পাওয়ায় কমলা চাষ বাড়তে শুরু করে। বোদাসহ এ জেলার চাষীরা তাদের উৎপাদিত লাখ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছে। কমলা একটি লাভজনক অর্থকারী ফসল হওয়ায় কেউ বা বাড়ির আঙিনার খোলা জায়গায় কমলার বাগান গড়ে তুলেছে। এ সব বাগানে কমলা গাছের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। পঞ্চগড়ের কমলা খুবই সুস্বাদু এবং রসালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কমলার ফলনও ভালো হয়। এ কমলা ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় বাজারে অন্যান্য কমলার চাইতে এর চাহিদা অনেক বেশি। ফলে পঞ্চগড়ের কমলা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রফতানি হচ্ছে। এ অঞ্চলের কমলা চাষীদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার কমলা উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফলে কমলা চাষীরা তেমন সুযোগ-সুবিধা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না। সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় অনেক কমলা চাষী আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। কমলা প্রকল্প শেষ হওয়ায় আর কেউ চাষীদের লাগানো কমলা গাছ দেখতে যাচ্ছেন না। খোঁজখবর না নেয়ায় অনেক কমলা চাষী তাদের গাছের ঠিকমতো যতœ নিচ্ছেন না। ফলে গাছে বিভিন্ন ধরণের পোকা আক্রমন করছে। এর সঠিক পরামর্শও পাচ্ছেন না তারা। এ অঞ্চলের কমলা যাতে টক না হয় এর জন্য সিলভাম্যাক্স নামক ট্যাবলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে দেয়া হতো। প্রকল্প শেষ হওয়ায় কোন চাষী আর এ ট্যাবলেটও পাচ্ছেন না। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম দিকে এ অঞ্চলে কয়েকজন কমলা চাষী শখের বশে বাড়ির আঙিনায় কমলার চারা রোপণ করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই বাগানে ফল আসায় তারা বৃহৎ আকারে কমলা চাষের উদ্যোগ নেন। চাষীদের আগ্রহ দেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০০৬ সালে ৫ বছর মেয়াদি কমলা উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনামূল্যে কমলার চারা বিতরণ করতে শুরু করে। বর্তমানে কমলা চাষে অনেক কৃষক এগিয়ে আসলেও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারছে না। এ ব্যাপারে পৌর শহরের সর্দারপাড়া গ্রামের কমলা চাষী অচিন্ত্য কুমার কারকুন জানান, তিনি প্রায় ১ বিঘা জমিতে কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ বাগান থেকে ভাল ফল উত্তোলন করেন। নিজে খেয়েও বাজারে বিক্রি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তার কমলার বাগানের অবস্থা ভাল নেই। গাছ হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। কমলা উন্নয়ন প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর কেউ কমলার বাগান দেখতে আসেন না বলে তিনি জানান। ফলে কমলা চাষ সম্পর্কে কাউকে উদ্ধুদ্ধ বা ট্রেনিং না করায় কমলা চাষে কিছু স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে এ ব্যাপারে উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের কমলা চাষী শ্যামল ও বড়শশী ইউনিয়নের কমলা চাষী মিন্টু সাথে কথা বললে তারা জানান, এরা দু’জনে এক একর জমিতে কমলার বাগান গড়ে তুলেছেন। অন্যান ফসলের পাশাপাশি তারা বাণিজ্যিক ভাবে কমলার চাষ শুরু করেছেন। তাদের বাগান গুলোতে তিন শতাধিক কমলার গাছ রয়েছে। তারা গত বছর লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে কমলা বাগানে সেচ দিয়েছেন। এ মাসের মধ্যে তাদের বাগানে মুকুল আসা শুরু করবে বলে তারা জানান, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তারা চলতি মৌসুমে অনেক বেশি কমলা উৎপাদন করতে পারবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। এ জন্য তারা কমলা চাষ সম্পর্কে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিুকল ইসলাম জানান, দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বেশ কয়েক বছর ধরে এ জেলায় ছোট বড় প্রায় ২ শতাধিক কমলার বাগান গড়ে উঠেছে। এই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কমলার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। কমলা চাষীরা এতে লাভবান হচ্ছে। কমলা উন্নয়ন প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। তবে চাষীদের কথা বিবেচনা করে সাইট্রিস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কমলা চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ফলে এতে তারা উপকৃত হবে এবং কমলার চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আল-মামুন-অর-রশিদ জানান, কমলা চাষ একটি লাভজনক ফসল, আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকদের কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এ বছর উপজেলায় ৪০ শতক জমির প্লট করে ২৮ টি কমলা প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এতে ২৮ শত কমলার চারা সরকারিভাবে বিতরণ করা হয়েছে। আরো বাণিজ্যিক ভাবে কমলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ভাবে কমলা চাষে এ অঞ্চলের কৃষকরা এগিয়ে আসলে তারা অনেক লাভবান হতে পারবে। দেশ অর্থনেতিকভাবে এগিয়ে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বোদায় থমকে আছে কমলা চাষ
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ