ভাষার টানে বইপ্রেমীদের ঢল
প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : ‘মুখে একটি পতাকা এঁকে দেব?’ কথাটি শুনে বাবার হাত ধরে দাঁড়াল চার বছরের শিশু নাবিল হাসান। মা-বাবার সঙ্গে বইমেলায় যাচ্ছিল ও। টিএসটি থেকে ওর পিছু নেয় আঁকা-আঁকিয়েরা। মা-বাবার মন গললো। নাবিলের গালে আঁকা হলো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। ভালো মত কথা না বলতে পারলেও মা-বাবার হাত ধরে আঁকা শেষে আবার বইমেলার দিকে হাঁটতে শুরু করলো শিশুটি। নাবিল নয় তার মত হাজারো শিশু মা-বাবার হাত ধরে এসেছে বইমেলায়। শুধু শিশুরা নয় গতকাল সব বয়সের মানুষের ঢল ছিলো বইমেলায়।
শিশুদের মা-বাবাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শিশু মেলায় নিয়ে আসার মূল কারণ ছোট থেকেই তাদের মধ্যে চেতনা জাগ্রত করা। এছাড়াও শিশুদের ভাষাকে সুন্দর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই কেনা তাদের উদ্দেশ্য।
এদিকে গতকাল মা-মাটি ও মানুষের আবেগের দিন ছিলো। মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সর্বত্রই ছিলো উপচেপড়া ভিড়। ভিড় ছিলো একুশে বইমেলাতেও। বইমেলা যেন ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভাষাপ্রেমী মানুষদের অধিকাংশরাই ভিড় জামান একুশের বইমেলায়। একুশে বইমেলা পায় ভিন্ন রুপ। সেজেগুজে, নানা রঙে-ঢঙে দল বেঁধে বান্ধবী, বন্ধু কিংবা, সপরিবারে এসেছে ব মেলায়। স্টলে স্টলে বেশ ভিড় লক্ষ করার মতো।
এছাড়াও মেলার অনেক স্টলেই বেজেছে একুশের গান ও কবিতা। বিভিন্ন স্টলে একুশ আঙ্গিকের কবিতার বই, ও গল্প উপন্যাসের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। আবৃত্তি হয়েছে একুশের কবিতা। গান বাজছে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।
প্রকাশকদের দেয়া তথ্যমতে, বইমেলায় ছিলো সবচেয়ে বেশি ভিড়। ভাষাপ্রেমীদের ঢল দিনজুড়েই বইমেলায়। অন্যদিনের থেকে অনেক ভালো বিক্রি হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহ সরকারি স্কুলের শিক্ষক আলম হোসেন জানান, ঢাকায় আসা কম হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি শুক্রবারের ছুটির সঙ্গে আরও কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে ছুটে এসেছেন ভাষার টান ও বইমেলার টানে। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ঘুরতে এসেছে বইমেলায়। স্টল ঘুরে কিনেছেন ব্যাগভর্তি বই।
নতুন বই : মেলায় নতুন বই এসেছে ২১০টি এবং গতকাল পর্যন্ত (১-২১) মেলায় নতুন বই এসেছে ২৬০৬টি।
মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় অমর গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০১৬। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আবাসন : বিশ্বে ও বাংলাদেশে শীর্ষক একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর আনিসুজ্জামান বলেন, আজকের একুশে বক্তৃতার এই সময়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা-আন্দোলনে আহত সংগ্রামীরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন হাসপাতালে, ভাষা শহীদদের কারো কারো লাশ ছিল মর্গে, মেডিকেল কলেজে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ছাত্রদের বক্তৃতা চলছিল, প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক পরিষদেও ছড়িয়ে পড়েছিল আন্দোলনের উত্তাপ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি হেরে গেলাম। কিন্তু শেষ বিচারে বাংলা ভাষা ও আমাদেরই বিজয় ঘোষিত হলো।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শাহ্ আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রফেসর আবুল হাসান চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, শরদিন্দু ভট্টাচার্য, সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্ব করবেন প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী।