Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুরু হচ্ছে ট্রাম্পের যুগ

বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা-২

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : ট্রাম্পের মন্তব্য নিশ্চিতভাবে ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দুই নেত্রী অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও থেরেসা মে’কে পীড়া দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ বা ব্রেক্সিট-এ ব্রিটেনের ভোটের জন্য ট্রাম্পের ঔৎসুক্য সাধারণভাবে মে’র উপর উল্লেখযোগ্য রকম চাপ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ব্রিটেনের দ্রুত ও অনুকূল বাণিজ্য চুক্তি  করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যে চুক্তি কমপক্ষে দু’ বছরের আগে কার্যকর হবে না যতদিন না ব্রিটেন ই ইউ পরিত্যাগ করে।
মার্কেল তার বাস্তববাদিতার জন্য পরিচিত। তিনি ট্রাম্পের সর্বশেষ সমালোচনা উপেক্ষা করে বলেন, তিনি অফিসে বসার পর কি করেন সেটাই দেখার বিষয়। আমি তার শপথ গ্রহণের অপেক্ষা করছি। তখন আমি তার সাথে একসঙ্গে কাজ করব।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার ততটা নিশ্চিত নন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মাসিক বৈঠকের আগে সোমবার ব্রাসেলসে তিনি বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বিস্ময় ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে, আর আমি নিশ্চিত যে তা শুধু ব্রাসেলসেই নয়।  
স্টেইনমায়ার বলেন যে, তিনি এইমাত্র ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।  এ সামরিক জোটের মধ্যে ট্রাম্পের মন্তব্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য কয়েকদিন মাত্র আগে মনোনীত তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে যায়। আমাদের দেখতে হবে যে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে এটা কি ফল বয়ে আনে। একই কথা বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিশ^ বাণিজ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন করবে বলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে পারি।
অন্যরা ট্রাম্পের কথাকে আক্ষরিকভাবে না নেয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন, অন্তত এখনকার জন্য। লল্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের পরিচালক রবিন নিবলেট বলেন, আমি এক চিমটে লবণের সাথে এসব কিছু নিচ্ছি। আমি মনে করি ট্রাম্প সব পথ খোলা রাখার চেষ্টা করছেন। শুধু বর্তমান নীতি অবস্থানের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন না।
জার্মানিতে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জন বি. এমারসন জার্মানদের শান্ত থাকার জন্য এবং ট্রাম্পের টুইটার পোস্টগুলোকে অতিব্যাখ্যা না করা বা চূড়ান্ত পররাষ্ট্র নীতি হিসেবে না দেখার জন্য তাদের প্রতি আবেদন জানাতে সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতাগুলো ব্যবহার করেছেন।  এমারসন গুরুত্ব আরোপ করেন যে যখন অধিকতর ব্যাখ্যা প্রয়োজন তখন এ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যে ট্রাম্প ন্যাটো এবং ইউরোপীয় মিত্রদেরকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে মূল্য দিচ্ছেন।
এমারসন বলেন, এটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তা শুধু ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য নয়, আমেরিকার নিরাপত্তার জন্যও। তিনি উল্লেখ করেন যে, ওবামা ও  ট্রাম্প ন্যাটোর পূর্ণ অঙ্গীকারের ব্যাপারে ইউরোপীয় অংশীদারদের পুনরাশ^স্ত করতে তাদের সাথে সাক্ষাতের অব্যবহিত পর ওবামা যখন এখানে সফরে আসেন তখন ট্রাম্প তাকে ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। এখন আমাদের দেখা প্রয়োজন যে এর অর্থ কী। নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও জার্মানি ও সম্ভবত ইটালিতে নির্বাচনসহ ইউরোপ এখন সম্ভাব্য রূপান্তরপ্রবণ একটি রাজনৈতিক বছরের দিকে তাকিয়ে আছে। পপুলিস্ট পার্টিগুলোর বিজয় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। বহু ইউরোপীয় কর্মকর্তা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্পের আক্রমণ তাদের ক্ষতি করছে।  
স্টেইনমায়ার ও জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্টিন শেফার ইউরোপীয় ইউনিয়ন মূলত জার্মানির আজ্ঞাবহ বলে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যখন বিশ^ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে, এ রকম সময়ে আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা আমরা চাই তা হল অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেফার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর জার্মান অবস্থানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন যে বৃহত্তর ইউরোপীয় জোটের মাধ্যমে ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়েই শান্তি ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা রয়েছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-মার্ক আয়রল্ট বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকাতে জোটের প্রতি ট্রাম্পের আমন্ত্রণ। তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের ঘটনার পর ইউরোপকে রক্ষা করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে ঐক্য এবং এটাই হচ্ছে আমন্ত্রণ যা ট্রাম্প আমাদের জানিয়েছেন। তাই আমাদের করণীয় হচ্ছে জোট হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং এ কথা ভুলে না যাওয়া যে ইউরোপীয়দের শক্তি নিহিত তাদের ঐক্যে।
ব্রেক্সিটের সমর্থক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরিস জনসন অ্যাংলো-আমেরিকান সম্পর্ক বিষয়ে ট্রাম্পের উষ্ণ মন্তব্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।  তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি একটি অত্যন্ত ভালো সংবাদ যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সাথে একটি ভালো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে চায় এবং দ্রুতই তা করতে চায়। স্পষ্টতই এটা এমন চুক্তি হতে হবে যা ব্যাপকভাবে দু’ পক্ষেরই স্বার্থে করা হবে। আমার সন্দেহ নেই যে এ চুক্তি হবে। (শেষ)  
 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ