Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাহী বিভাগের সাথে আর কোনো দ্বন্দ্ব চাই না -প্রধান বিচারপতি

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিচার বিভাগকে ‘ওন’ করতে নির্বাহী বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, নির্বাহী বিভাগের সাথে তিনি আর কোনো দ্বন্দ্ব চান না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের আদালত ভবন এলাকায় নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বার, বেঞ্চ ও প্রশাসনের দ্বন্দ্ব পৃথিবীর সব দেশেই আছে উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতের উদাহরণ এবং নিজের অভিজ্ঞতার কথাও বলেন প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ ধরে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, মাননীয় আইনমন্ত্রী আপনি আইনের শাসনের কথা বলেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বার, বেঞ্চ এবং প্রশাসনে দ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। এটা আমি সবসময় বলে আসছি। এটা সত্য, এটা শুধু আমার বাংলাদেশে না, পৃথিবীর সব দেশেই, সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ আমেরিকা যে সারাবিশ্বকে হাত নাড়িয়ে চালায়, তাদের দেশেও প্রশাসন ও বিচার বিভাগের টানাটানি আছে।
তিনি বলেন, বারাক ওবামা, তিনি রিকমান্ডেশন করার পরও সুপ্রিম  কোর্টে একজন বিচারক নিতে পারলেন না, ইংল্যান্ডে হচ্ছে না। ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি ঠাকুর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সামনে চোখের জল ফেললেন। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম  কোর্টে বিচারকের স্বল্পতা এবং সমন্বয়ের অভাবে বিচারক নিয়োগ দিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, এক্সিকিউটিভ, বিচার বিভাগকে ওন করতে হবে। মুখে বললে হবে না। যদি ওন না করে মুখে বলে, বিচার বিভাগ  কোনোদিনই এটা করতে পারবে না।
আমি কি বলতে চাচ্ছি এক্সিকিউটিভ ভালো করে জানে। আমি আর কোনো দ্বন্দ্ব চাই না। আমি চাই যে, এক্সিকিউটিভ বিচার বিভাগকে ওন করে কাজ করবে। তাহলে আমাদের অনেকগুলা দূরত্ব দূরীভূত হবে।
প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বিচারক স্বল্পতা, জুডিশিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা, ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি না থাকা, বিচারকদের আবাসনের জন্য জুডিশিয়াল কমপ্লেক্স নির্মাণ, নতুন আইন বিষয়ে বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, চট্টগ্রামের হাইকোর্ট বেঞ্চসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।  
আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে      
অনুষ্ঠানে মানবপাচার মামলায় এক আইনজীবী ও তার স্ত্রীর জামিনকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের এজলাস ভাঙচুরের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে একে ‘ন্যক্কারজনক’ অভিহিত করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, এ ঘটনায় আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আজকে আমার খুবই খুশির দিন হওয়ার কথা। কিন্তু আমি ভারাক্রান্ত এবং মর্মাহত। সিলেটের পর সবসময় গুরুত্ব দিয়ে আসছি চিটাগাংকে। ঢাকার ওপর আমি চিটাগাংকে অগ্রাধিকার দেই।
কিন্তু সকালে যখন এয়ারপোর্টে এসে পত্রিকা পড়লাম। যে খবর পড়লাম। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমার চিটাগাং বারে এই ভবন উদ্বোধনের জন্য যাওয়া উচিত কি না? এরপর আমি নিজেকে আবার প্রশ্নœ করলাম, মান-অভিমানের চেয়ে বিচার বিভাগের স্বার্থ সবচেয়ে বড় জিনিস। আমাকে বিচার বিভাগের স্বার্থে আসতে হলো।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। গতকাল যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল। নিজে এতদিন গর্ববোধ করতাম যে, আমি প্রথমে একজন আইনজীবী। এরপর আমার পরিচয় হলো বিচারক। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য চলাকালে পুরো অনুষ্ঠানস্থলে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা একজন অপরাধীর পক্ষে দাঁড়ান, সেটা করেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সে আদৌ অপরাধ করেছে কি না, যদি করে থাকে তার অপরাধের মাত্রা কতটুকু। তার কতটুকু আইনের প্রটেকশন পাওয়া উচিত।
চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো: হেলাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো: জহিরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার  জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার  মো: রুহুল আমীন এবং চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ