Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শ্রমিকের জীবনের মূল্য মাত্র ৬০ হাজার টাকা

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : সিরাজগঞ্জে চাল কলের বয়লারে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে দরিদ্র স্বামী-স্ত্রীসহ তিন শ্রমিককে। প্রভাবশালী চাতাল মালিকের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বৈঠক বসে প্রতিজন শ্রমিকের জীবনের মূল্য মাত্র ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। একদিকে একসাথে বাবা-মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। অন্যদিকে, ছোট্ট শিশু জাকারিয়া একমাত্র সম্বল মাকে হারিয়ে শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে পথের দিকে। ক্ষণে ক্ষণে বলছে বাবা অনেক আগেই চলে গেছেন মাকেও হারালাম এখন আমরা তিন ভাই-বোন কি নিয়ে বাঁচব? কে আমাদের দেখবে?। অন্যদিকে, পুলিশ বলছে অভিযোগ না থাকায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। উলেখ্য ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চাতালে কাজ করছিলেন পাঁচ শ্রমিক। ক্রটির কারণে হঠাৎ বিকটশব্দে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে শিয়ালকোল গ্রামের ছবের আলী, তার স্ত্রী জাহানারা খাতুন ও মৃত সাইদের স্ত্রী সাকেরা বেওয়া গুরতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় দিন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মঙ্গলবার বিকেলে ইন্তেকাল করেন। বুধবার সকালে তিনজনের লাশ সিরাজগঞ্জে পৌঁছলে, পরিবারের স্বজনদের আহাজারি শুরু হয়। লাশ রেখেই স্থানীয় মুরব্বিরা দেন-দরবার শুরু করেন। মামলা না করার জন্য পরিবারের সদস্যের চাপ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বৈঠক বসে ওই তিন শ্রমিকের প্রতিজনকে ৬০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় আগুন দেয়া অবস্থায় বয়লারটিতে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছিল। এ সময় চাতাল মালিক শামিম তালুকদার দু’টি গ্যাস পাইপ খুলে দিয়ে গ্যাস বের করে পুরান কাপড় দিয়ে বয়লারটি বেঁধে দিয়ে পুনরায় কাজ করতে বলেন। এ সময় পুনরায় গ্যাস পাইপ দুটি বন্ধ করে দেয়ার কিছুক্ষণ পরই বয়লারটি বিস্ফোরণ ঘটে। মূলত বয়লার ত্রুটির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর চিকিৎসা সেবার গাফিলতির কারণেই একদিনেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। নিহত ছবের আলীর বড় ভাই ও ভাতিজা জানান, সকালে মুরব্বিরা বলল, তোমরা মামলা করো না, মামলায় টিকে থাকতে পারবে না বরং আমরা মীমাংসা করে দেই। তাছাড়া তোমরা গরিব-অসহায় কিভাবে মামলা চালাবে? সে জন্যেই মুরব্বিদের কথা মেনে নিয়েছি। আর মুরব্বিরা প্রতিজনকে মাত্র ৬০ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলেছেন। নিহত সাকেরার শিশু ছেলে জাকারিয়া নির্বাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে বাবা মারা গেছে। মা চাতালে কাজ করে আমাদের তিনভাই বোনের মুখে আহার তুলে দিতেন। এখন মাও চলে গেলেন। আমরা কোথায় দাঁড়াব? কে আমাদের দেখবে? এ সময় শিশু জাকারিয়া মায়ের এ পরিণতির জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির দাবি করে। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা জামাল তালুকদার জানান, নিহতের স্বজনদের কোনো দাবি-দাওয়া ছিল না। এ জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়ে লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়াও কাফনের কাপড় ও চেহলাম করার জন্য চাতাল মালিক ও চাতালের ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে সামান্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাতাল মালিকের ছোট ভাই আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চাতাল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি ছিল না। মূলত গ্যাস পাইপ বন্ধের জন্য এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ