Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফর্মে ফিরিয়ে আনতে সাকিবকে সালাউদ্দিনের টিপস

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে কদর সবচেয়ে বেশি যে ছেলেটির, সেই সাকিবই কি না পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) এ করেছেন হতাশ। ১ লাখ ডলারে সাকিবকে কিনে করাচি কিংস যতোটা আশায় ভর করেছিল, ততোটাই হতাশ করেছেন এই বাঁ হাতি অল রাউন্ডার। আইপিএলএ কোলকাতা নাইট রাইডার্স হিরোর ফ্লপ একটি আসর কেটে গেছে পিএসএলএ। ৮ ম্যাচে রানের সমষ্টি মাত্র ১২৬ ঘ গড় ১৮.০০), সেখানে উইকেট সংখ্যা ৩ (গড় ৫৫.৬৬)। লাহোর কোয়ালান্দার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অল রাউন্ড পারফরমেন্সের (৫১ রান ও ১/২৬) পর অবশিষ্ট ৭টি ম্যাচে নিজেকে চেনাতে পারেননি সাকিব। এমনকি সেই লাহোর কোয়ালান্দার্সের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে বোলিংয়ের সুযোগই পাননি সাকিব!
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপিতে) ভর্তি হওয়ার পর থেকে সাকিবকে চেনেন, জানেন ক্রিকেট গুরু সালাউদ্দিন, সাকিবের সেই ক্রিকেট গুরু পর্যন্ত এমন পারফরমেন্সে হতাশÑ ‘সাধারণত: কোন ম্যাচে বোলিংয়ে খারাপ করলে ব্যাটিংয়ে সাকিবকে পুষিয়ে দিতে দেখেছি। আবার ব্যাটিং খারাপ হলে বোলিংয়ে ও পুষিয়ে দিয়েছে। খারাপ সময় যেতেই পারে। তবে একটা টুর্নামেন্টের পুরোটাতেই ধারাবাহিকভাবে ও খারাপ করবে, এমনটা আগে কখনো দেখিনি।’ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যাকে এভাবে চিনছেন, বিকেএসপিতে এক সময়ের প্রিয় সেই শিষ্য পিএসএলে ছন্দহীন দেখে চুপচাপ করে বসে থাকতে পারেননি সালাউদ্দিন। দুবাই থেকে ফোনে পেয়েছিলেন সাকিবের ফোন, মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট কোচের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকায় ফেরা সালাউদ্দিন তাই সাকিবকে নিয়ে কাজ করেছেন নেটে। পিএসএল’র ভিডিও ক্লিপিংস দেখে সাকিবের ত্রæটিটা ধরেছেন এবং টিপসও দিয়েছেন সালাউদ্দিনÑ ‘পিএসএলের ম্যাচ ভিডিও দেখে মনে হলো বোলিং নিয়ে ওর কিছু কাজ করার দরকার আছে। নেটে বোলিং নিয়েই কথা হয়েছে সাকিবের সঙ্গে। বল ডেলিভারির সময় হাতটা একটু বেশি ওয়াইড হচ্ছে ও নিজেও ধরতে পেরেছে বিষয়টি।’
বোলিংয়ে ছন্দপতনের কারণটাও আন্দাজ করেছেন সালাউদ্দিনÑ ‘বেশি বেশি টুয়েটি-২০ খেললে এমনটা হতে পারে।’ দ্রæতই সাকিব ফিরবেন ছন্দে। এশিয়া কাপে চেনা অল রাউন্ডার সাকিবকেই দেখবে বিশ্ব, এমনটাই বিশ্বাস সালাউদ্দিনেরÑ ‘সাকিব সব কিছু দ্রæত বোঝে ও খুব তাড়াতাড়ি রিকভার করতে পারে। এটাই ওর বৈশিষ্ট্য।’
ক্রিকেট গুরু সালাউদ্দিনের শরণাপন্ন এবারই প্রথম হননি সাকিব। এক সময় ছিলেন খুব কাছাকাছি। বিকেএসপি থেকে বেড়ে ওঠা এই ক্রিকেটারকে ২০০৪-৫ মৌশুমে ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের দল ভিক্টোরিয়ায় খেলার সুযোগ করে দেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে গুরু সালাউদ্দিনই। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং কোচ এবং সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন সালাউদ্দিন। ওয়ানডে ক্রিকেটে আইসিসি’র র‌্যাংকিংয়ে নাম্বার ওয়ান খেতাবটা সাকিব পেয়েছেন প্রিয় ক্রিকেট গুরুকে কাছে পেয়েই। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফের অংশ এখন আর নন সালাউদ্দিন, ৬ বছর ধরে দলের বাইরে। মাঝে একবার ১ মাসের জন্য শেন জার্গেনসেনের ডেপুটি হিসেবে জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন, ২০১৪ সালের শুরুতে, শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের সময়। তবে যখনই সাকিব ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন, তখনই শরণাপন্ন হয়েছেন সালাউদ্দিনের। কাছে না পেলেও ফোন করে নিয়েছেন প্রয়োজনীয় টিপস। এমনকি সালাউদ্দিনের কর্মস্থল মালয়েশিয়ায় পর্যন্ত গেছেন ছুটে। সালাউদ্দিন নিজেই তা জানিয়েছেনÑ ‘বিকেএসপি থেকে যখন অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেট দল করা হলো, তখন দেখলাম একটা ছেলে বাঁ হাতে বল দারুন ঘোরাচ্ছে, আবার ব্যাটিংও দারুন করছে। তখন মনে হলো, এই ছেলেটিকে ঘঁষা-মাজা করা দরকার। বয়সভিত্তিক দলে এমন ক্রিকেটারই তো চাই। তার কিছুদিন পর ভিক্টোরিয়ার কোচের দায়িত্বটা যখন দেয়া হলো, তখন সাকিবকে ভিক্টোরিয়ায় আনা হলো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত যখন মনে করছে আমার পরামর্শ প্রয়োজন, তখনই আমি সাকিবকে হেল্প করছি।’
শুধু সাকিব একাই নন, তামীম,মুশফিকুর, রাজ্জাক, মুমিনুলরাও দুঃসময়ে শরণাপন্ন হন এই ক্রিকেট গুরুর কাছে। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে তামীমের ১৫১ রানের ইনিংসের নেপথ্যেও সালাউদ্দিনের টিপস। কোচিং স্টাফ থেকে বাদ পড়েও তামীমের প্রয়োজনে এসেছেন নেটে ছুটে। সুইপ শট খেলতে পারেন না তামীম, সেই শটে দক্ষ করে তোলার কাজটিও করেছেন এই কোচ। এখন তার কাজ বিকেএসপিতে তার সর্বশেষ শিষ্য মুমিনুলকে টেস্টের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটেও অপরিহার্য করে গড়ে তোলা। সেই কাজটি শুরু করেছেন ইতোমধ্যে সালাউদ্দিনÑ ‘বছরে আমরা ক’টিই বা টেস্ট খেলি, বড়জোর ৫টি। টেস্ট ক্রিকেটারের স্টিকার লেগে যাওয়ায় জাতীয় দলের বাইরে লম্বা সময় মুমিনুলকে কাটাতে হয়। স্কোয়াডের বাইরে থাকার কষ্টটা মুমিনুল প্রকাশ করে না ঠিকই, তবে কতোটা যে যন্ত্রণায় কাটছে ওর এক একটি দিন, তা দূর থেকে আন্দাজ করা যায়। টি-২০ তে জাতীয় দলে ওর ফিরে আসাটা সহজ নয়। তবে ওয়ানডে দলে ওর ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। সে কারণেই আমি ওকে বেশি বেশি শট খেলতে পারদর্শি করার চেষ্টা করছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফর্মে ফিরিয়ে আনতে সাকিবকে সালাউদ্দিনের টিপস
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ