পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডাভোসে ওয়ার্ল্ড আন্ডার ওয়াটার বিষয়ক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তঃদেশীয় চুক্তি বাস্তবায়নে আরো প্রচেষ্টা চালানো দরকার। প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃহত্তর সহযোগিতা এবং আন্তঃদেশীয় বিশুদ্ধ পানিসম্পদের ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি গতকাল বুধবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সাইড লাইনে ওয়ার্ল্ড আন্ডার ওয়াটারের ওপর এক আলোচনায় ভাষণে বলেন, ‘পানি হচ্ছে সম্পদ। আমাদের জন্য শহর, গ্রাম এবং সারাজীবন প্রত্যেকের জন্য বেঁচে থাকার লড়াই। তাই পানির মূল্য আমাদের জানা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অথবা উৎপাদনের জন্য পানির অবাধ যোগান এবং অসীম সম্পদ হতে পারে না। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের পথে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, অসমতা থেকে সমতায় আনতে বিশুদ্ধ পানি ও সমুদ্র সম্পদ খাতে এই সহযোগিতা ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর এবং বিভিন্ন উপকূলীয় ও দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের অস্তিত্ব নির্ভর করছে বিশুদ্ধ পানি ও সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতার ওপর। তিনি পানিসম্পদ খাতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বৃদ্ধির প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, যে কোনো সমাধান আমাদের বিপুলসংখ্যক গরীব ও প্রান্তিক জনগণের জন্য লাভজনক ও টেকসই হবে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক পুঁজি ও জ্ঞান প্রদানকারীদের মধ্যে যে কোনো ধরনের অংশীদারিত্বের কথা বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানির চাহিদার ওপর যে কোনো সহযোগিতা জনগণ, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে হতে হবে। তিনি ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের নৌ-সীমানার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রযুক্তিকে ওয়াটার কনভারসেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তন ও কৃষির ভার্টিকেল ট্রান্সফরমেশন বিশুদ্ধ পানির উৎস বৃদ্ধি এবং ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা পূরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সার্কের কার্যকারিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোপারেশন (সার্ক)-এর কার্যকারিতা হারানোর অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এই আঞ্চলিক জোট খুব ভালোভাবেই সক্রিয় আছে।
তিনি বলেন, সার্কের কার্যকারিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি, আট জাতির এই আঞ্চলিক সংস্থাটি খুব ভালোভাবে সক্রিয় আছে এবং আমি মনে করি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর মাধ্যমে আরো অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় হারনিসিং রিজিওনাল কো-অপারেশনবিষয়ক একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
এই ইন্টারেক্টিভ সেশনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রেনিল উইক্রিমিসিঙ্গী, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী নির্মলা সীতারামান ও সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্যগণ যোগদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী, এই অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে আবারো চিহ্নিত করে বলেন, আমরা কীভাবে দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারি সেদিকেই আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। দারিদ্র্য বিমোচনে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে হবে এবং মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আমরা দারিদ্র্য নির্মূল করতে কাজ করে যাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্যে বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি ও বিমসটেক ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করতে সাফটা শক্তিশালী হচ্ছে। বৃহত্তর পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চীনকে একীভূত করার জন্য বিসিআইএম-ইসি ফোরাম গঠন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নের জন্য কক্ষপথে একটি সার্ক স্যাটেলাইট চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ফাঁসি দেয়া হয়েছেÑ এ সংক্রান্ত পাকিস্তানের সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদেরকে আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে সম্বোধন করছেন, তারা সকলেই ১৯৭১ সালে অপরাধ সংগঠনের সময়ে নবীন ছিলেন এবং তারাই এই গণহত্যা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সে সময় জঘন্যতম হত্যাকা-, ধর্ষণ, ঘর-বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব অপরাধেই তাদেরকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার এবং দ- প্রদান করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক দেশ থেকে বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটা কোনো অংশেই সহজ কাজ নয়।
এ সময় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে তার সরকারের উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৪শ’ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এছাড়াও জলবায়ু সম্পর্কিত অভিযোজন মোকাবেলায় ১৩৪টি অ্যাকশন প্লান গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের জন্য দায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশের ওপর বিরূপ কোনো প্রভাব পড়বে কিনাÑ এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূষণকে সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখার জন্যই এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে উন্নততর এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য আমাদের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রয়োজন। আর এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লাকে ব্যবহার করতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরামাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কয়লার ব্যবহারও বাড়াতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী প্রবাসীরা সুইজারল্যান্ড সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রবাসী বাংলাদেশীরা সিল ভেরেত্তা পার্ক হোটেলের সামনে সমবেত হয়। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এ হোটেলে অবস্থান করছেন।
তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণের সাফল্য কামনা করে বিভিন্ন ¯েœাগান দেন।
আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের ফলে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
প্রবাসীরা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগদানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফোরামের নির্বাহী চেয়াম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ৫ দিনের সফরে এখন সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশের নির্বাচিত নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা প্রথম এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক সম্মেলনে যোগ দেন। এই সম্মেলনে রাষ্ট্রনায়ক, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীরা বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। সুইজারল্যান্ডের আল্পস অঞ্চলের গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে ৪ দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।