Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শৈত্যপ্রবাহে আইলা ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লাখ মানুষের মানবেতর জীবন যাপন

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা : জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই টানা প্রচ- শৈত্যপ্রবাহে বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয়াঞ্চল ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। হাজার হাজার শিশু ও বৃদ্ধরা শীতে গরম কাপড়ের অভাবে ঠক ঠক করে কাঁপছে। শীতের রাত্রি কাটে ভোরের সূর্যের আলোর অপেক্ষায়। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণেরও কোন সুযোগ নেই। সরকার বিভিন্নভাবে আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করলেও বিপুল এই জনগোষ্ঠীর শৈত্যপ্রবাহের মত শীত নিবারণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি। স্থানীয় প্রশাসন শৈত্যপ্রবাহে উপকূলীয়াঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের তেমন কোন সহায়তা দিচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিরাও পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না। জেলা প্রশাসন নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রশাসনিক নানা জটিলতায় শীতার্তদের ত্বরিত গতিতে বাস্তবমুখী সহযোগিতা দিতে পারছে না। এনজিওগুলো তেমনভাবে এগিয়ে আসেনি। সাধারণ মানুষগুলো এবং বিশেষ করে দিন মজুররা সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছে। বর্তমানে যে সব পলিথিন টানানো মাটির স্যাঁতসেঁতে ঘরে তারা অবস্থান করছে। সেখানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
যাদের ঘরে এখনো তিন বেলা খাবার জোটেনা তাদের আবার শীতের কাপড় আকাশ কুসুম কল্পনার শামিল। এসব এলাকার মানুষের ঘর নেই, পলিথিন টানিয়ে কোন রকম বেঁচে আছে। আইলায় বিধ্বস্ত বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ লাখ মানুষের জীবনে এবার শীতের পিঠা পার্বণের আনন্দও মøান। আবহমান কালের ঐতিহ্যবাহী শীত তাদের জীবনে কোন খুশির বার্তা বয়ে আনতে পারেনি। এখন শীত তাদের কাছে দৈত্যের মত। যেন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সূর্য ডোবার সাথে সাথে সারা রাত ধরে হরণ করে। অনেক সময় দিনের বেলাও পুরোটা সময় সূর্যের ত্যাজী আলো পাচ্ছেনা। শীতের কারণে কাজকর্মও মিলছে না। অনেকে কাজ পেলেও কাজ করতে পারছে না। শীতবস্ত্র কিনতে গেলে হয়তো ১০-১৫ দিন না খেয়ে থাকতে হতে পারে। এলাকাগুলোতে গবাদি পশু নেই যে তার দু’একটি বিক্রি করে শীতকে মোকাবেলা করবে। আইলায় মারা যাওয়ার পর যেগুলো বেঁচে ছিল তা অভাবের তাড়নায় আগেই বিক্রি করা হয়েছে পানির দরে। দু’একজন বিত্তবানেরা নিঃস্ব হয়ে শহরে অবস্থান করছেন। বেঁচে থাকাই এখন তাদের প্রাণান্ত চেষ্টা। কোনমতে খেয়ে না খেয়ে জীবন ধারণ করেছে এরা। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে দিনের এক একটি সময় অতিবাহিত হচ্ছে তাদের। ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে শীতে ঠক ঠক করে কেঁপে বেঁচে আছে। শীত ও উপকূলীয় অঞ্চলের কনকনে বাতাস উপেক্ষা করে জীবন যাপন করছে হতভাগ্য মানুষগুলো। অবর্ণনীয় কষ্টে আছে তারা।
প্রতি বছর নদী ভাঙন, ঝড়-ঝাপটার আঘাতে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় দুর্গত এলাকার ৫ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। মানুষ সেখানে চরম মানবতের জীবনযাপন করছে।
অপরদিকে দাকোপ, কয়রা ও শ্যামনগরে নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কমপক্ষে সহস্রাধিক শিশু। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কামারখোলা ইউনিয়নের অরুন ঢালী সাড়ে ৩ মাসের কন্য ঈশিতা ঢালী, দিলীপ মন্ডলের কন্যা পূর্ণিমা (২), শফি গাজীর পুত্র শাহীন গাজী (২), হাসান গাজীর পুত্র আহাদ গাজী (২), উত্তম সরকারের পুত্র বাঁধন সরকার (৪), মুসা শিকারীর পুত্র আসিফ শিকারী (২), মিজানুর সরদারের কন্যা সুমাইয়া (২), শহিদ বদ্যের পুত্র সৌরভ বৌদ (৪), অমল রায়ের পুত্র সবুজ রায় (১), কৃষন বাছারের পুত্র চীনময় বাছার (১), বিজন বৈদ্য কন্যা তমা বৈদ্য (৩) এবং সুতারখালী ইউনিয়নের গফুর শেখের পুত্র রাসেল (৪) গাউছ সরদারের পুত্র রাজু (৩) অভিজিত জোয়ারদারের কন্যা কাকলী জোয়ারদার (৩), মফি গাজীর পুত্র মনি গাজী (৪)। খুলনা সিভিল সার্জন ইনকিলাবকে বলেন, শৈত্য প্রবাহে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। শিশুরা অতিরিক্ত ঠা-া লেগে নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের মেডিকেল টিম বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। তথাপি অনেক সমস্যাতো রয়েই গেছে। এজন্য অবকাঠামো এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও নানাবিধ অভাব অনটনই দায়ী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ