Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অরল্যান্ডো গণহত্যার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার দায়ে ঘাতকের স্ত্রী গ্রেফতার

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এফ.বি.আই. ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো প্রাণঘাতী হামলাকারীর স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। তার নাম নূর সালমান। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা সোমবার জানান। খবর দি নিউইয়র্ক টাইমস।  
কর্মকর্তারা বলেন, নূর সালমানের স্বামী ওমর মতিন ২০১৬ সালের ১২ জুন অরল্যান্ডোর সমকামীদের একটি নাইটক্লাবে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করেন, আরো কয়েক ডজন লোক আহত হয়। এ ঘটনায় নূর সালমানের বিরুদ্ধে সহায়তা এবং বস্তুগত সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতা দানেরও অভিযোগ আনা হয়।
এফ.বি.আই. সানফ্রান্সিসকোর বাইরে তার বাড়িতে তাকে হেফাজতে নেয়। সেখানে তিনি তার ছেলের সাথে থাকতেন। সরকারি কৌঁসুলিরা কয়েক মাস ধরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পরখ করে দেখছেন। অরল্যান্ডো হামলার পর তদন্তকারীরা কয়েকঘণ্টা ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের এ বিশ^াস জন্মে যে এ হত্যাকা- ঘটাতে তার স্বামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি সত্য বলছেন না।
বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, নূর সালমানকে মঙ্গলবার সকালে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডের ফেডারেল কোর্টে প্রথম হাজির করা হবে। তাকে বিচারের সম্মুখীন করার সিদ্ধান্তে অরল্যান্ডো হামলার প্রথম দিন থেকেই তাকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া রহস্যের আংশিক অবসান হলো। সে সময় তিনি ব্যাপকভিত্তিক তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।  
তার আইনজীবী লিন্ডা মোরেনো বলেন, সেই মর্মান্তিক ট্রাজেডির রাতে তার স্বামী কি করতে যাচ্ছিলেন সে বিষয়ে নূর সালমানের কোনো পূর্বধারণা ছিল না বা তিনি কোনো আভাসও পাননি। তিনি স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী বলেছেন। আমরা মনে করি তাকে বিচারের আওতায় আনা বিভ্রান্তি বা ভুল এবং একজন নিরপরাধ মহিলাকে শাস্তি দেয়া এ ঘটনায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি অসম্মান।
নূর সালমানকে অভিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত সরকারি কৌঁসুলিদের জন্য ঝুঁকিবিহীন নয়। মামলাটির বিচার শুরু হলে কৌঁসুলিদের একজন জুরির সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়াতে হবে যা নূর সালমানের জন্য সহানুভূতিজনক হতে পারে। তিনি বলেছেন, তিনি এক অসম্মানজনক ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছিলেন।
গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এ হামলার ব্যাপারে কোনো কিছুই তিনি জানতেন না।
৩০ বছর বয়স্কা নূর বলেন, তিনি তার স্বামী ও ছেলের সাথে একবার  অরল্যান্ডোতে গিয়েছিলেন। সে সময় ওমর মতিন ক্লাবটি ঘুরে দেখেন।  নূর জানতেন না তার স্বামীর উদ্দেশ্য কি ছিল। যেদিন তার স্বামী গাড়ি নিয়ে অরল্যান্ডো যান  সেদিন নূর ফ্লোরিডায় নেমো নামের এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু নেমো তখন ফ্লোরিডায় ছিলেন না। নূর বলেন, তিনি সে কথা জানতেন না।
তিনি বলেন, হামলার কয়েকদিন আগে মতিন গুলি কিনে আনলেও তা যে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হবে সে সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না।  মতিন ছিলেন একজন নিরাপত্তা রক্ষী যিনি প্রায়ই গুলি কিনতেন।  হত্যাকা-ের দিন তিনি তার স্বামীকে একটি ফাদারস ডে কার্ড কিনে দেন। আশা করেছিলেন যে মতিন সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। তার আইনজীবীরা মনে করেন এটা নূরের দাবিকে সমর্থন করে যে তিনি হামলার কথা কিছু জানতেন না।
হত্যাকা-ের সময় মতিন ইসলামিক স্টেটের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, মতিন ইন্টারনেটে উগ্রপন্থীদের তথ্য ও প্রচারণার সাথে পরিচিত হন ও উগ্রপন্থী হন।
ফেডারেল তদন্তকারীরা বিশ^াস করেন না যে, হত্যাকা- চালানোর পর পুলিশের গুলিতে নিহত মতিন ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে নির্দিষ্টভাবে কোনো প্রশিক্ষণ নিয়েছে বা সমর্থন পেয়েছে। তাদের তদন্তের একটি অংশের উপর জোর দেয়া হয় যে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ তার হামলার পরিকল্পনায় সাহায্য করেছে কিনা।
এক্ষেত্রে সম্ভবত নূর ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। নূর সানফ্রান্সিসকোর কাছে ক্যালিফার্নিয়ার রোডিওতে আভোকাডো রঙের বাড়িতে থাকতেন। রোডিওতে বহু জাতির মানুষের বাস যেমনÑ চীনা, ভারতীয়, কোরিয় মেক্সিকান পরিবার। প্রতিবেশীরা তরুণী নূরকে উষ্ণ ও দয়ালু বলে আখ্যায়িত করেন।  
নূর ২০১১ সালে উত্তরাঞ্চলীয় ক্যালিফোর্নিয়ায় তার শৈশবের বাড়ির কাছে এক অনুষ্ঠানে মতিনকে বিয়ে করেন। তাদের দু’জনারই এটা ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর তারা ফ্লোরিডার ফোর্ট পিয়ার্সে চলে আসেন।    
তাদের এ বিয়ে নূর সালমানের কিছু আত্মীয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ তারা ছিলেন ফিলিস্তিনি। পক্ষান্তরে মতিন ছিলেন আফগান বংশোদ্ভূত। নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নূর বলেছিলেন, তার স্বামীর দ্বারা বারবার তিনি প্রহৃত হয়েছেন এবং তিনি তাকে গালাগালি করতেন।
ওমর মতিনের পরিবারের সদস্যরা মনে কনে যে নূর সালমান কোনো অপকর্ম করেননি বলে তাদের বিশ^াস। ওমরের পিতা সিদ্দিক মতিন বলেন, আহা বেচারি, সে খুবই আঘাত পেয়েছে। সে কিছুই জানে না।
অরল্যান্ডো পুলিশ প্রধান জন ডব্লিউ. মিনা এক বিবৃতিতে বলেন, নূর সালমান গ্রেফতার হওয়ায় তিনি খুশি।  তিনি বলেন, ৪৯ জন প্রতিবেশী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনকে কা-জ্ঞানহীন বর্বরোচিতভাবে হত্যার বেদনা কোনো কিছুতেই উপশম হওয়ার নয়। কিন্তু আজ কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি এ ভেবে যে এই নারকীয় অপরাধের জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে।
সাম্প্রতিক দু’টি গণহত্যার ঘটনায় হামলাকারীদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার জন্য কৌঁসুলিরা কিছু লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। ২০১৫ সালের ১৭ জুন চার্লসটন চার্চে ডিলান এস. রুফ ৯ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। তার এক বন্ধু এপ্রিল মাসে ফেডারেল তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা বলা ও গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কথা কর্তৃপক্ষকে না জানানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়। তবে সে রুফের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য দেয়নি। রুফকে গত সপ্তাহে মৃত্যুদ- দেয়া হয়।
২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর সান বার্নাডিনোতে ১৪ জনকে হত্যা ও ২২ জনকে আহত করার ঘটনায় ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ হত্যাকারী স্বামী ও স্ত্রীর এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলটি ক্রয়কারী ব্যক্তি অস্ত্র ক্রয়ের ফরমে মিথ্যা কথা বলার দায়ে অভিযুক্ত হয়। সে কয়েক বছর আগে এক সন্ত্রাসী হামলার দায়েও অভিযুক্ত হয়। তবে সান বার্নাডিনো হত্যাকান্ডের সাথে তাকে সরাসরি ভূমিকা পালনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি।
যা হোক, ফেডারেল কৌঁসুলিরা ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল বোস্টন ম্যারাথন হত্যাকা-ের অন্যতম ঘাতকের স্ত্রী ক্যাথারিন রাসেলের বিচারের আওতায় আনতে অস্বীকৃতি জানান। এফ.বি.আই. এজেন্টরা মনে করেন, তিনি তদন্তকারীদের কাছে মিথ্যা কথা বলেছেন এবং অপরাধের কথা জানার বিষয় গোপন করেছেন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ