Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্ছেদের পর যেন দখল না হয়

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (উত্তর) মেয়র আনিসুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ফুটপাতে চুলা বসিয়ে বা যে কোনোভাবে এক ইঞ্চি জায়গাও দখল করা যাবে না। করলে দোকান বন্ধসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘সাত দিনে পরিষ্কার আমাদের প্রিয় শহর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মেয়র আরো বলেছেন, কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া আছে। প্রথমে বোঝাবেন, না মানলে কাউন্সিলরদের নিয়ে ওয়েল্ডিং করে দোকান বন্ধ করে দেবেন। ফুটপাতের হকারদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষের চাওয়া, আপনারা ফুটপাত ছেড়ে দিন। আমরা আপনাদের অন্য কোথাও বসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। দোকানদারদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, দোকানের মধ্যেই থাকুন। দোকানের বর্ধিতাংশ আর সহ্য করা হবে না। চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে মূল রাস্তা ও ফুটপাত মুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে মেয়র এ কাজে কাউন্সিলর, স্থানীয় প্রতিনিধি, নগরবাসী ও সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কর্মকর্তা, কাউন্সিলররা নগরবাসীকে সেবা দিচ্ছেন, তাদের সম্মান দিন। ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ ও দেয়াল লিখন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, অনেকে বিভিন্ন প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। দয়া করে চলতি মাসের মধ্যে নিজ দায়িত্বে সেগুলো মুছে ফেলুন। এ জন্য ১৪ দিনের সময় তিনি বেঁধে দিয়েছেন। রাস্তার বর্জ্য-আবর্জনা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, বর্জ্য-আবর্জনা ফেলার ৭২টি মিনি ট্রান্সফারমার স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ। এগুলো চালু হলে আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে রাস্তায় বর্জ্য থাকবে না।
রাজধানীর চিত্র দেখে কেউ এটা বিশ্বাস করতে চায় না যে, একটা দেশের রাজধানীর দুরবস্থা এমনটা হতে পারে। ময়লা-আবর্জনা, বদ্ধ ড্রেন, নর্দমা, নোংরা পানি সবকিছু মিলিয়ে রাজধানী কার্যত বাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা একদিনে হয়নি। বলা যায়, অনেক দিনের অবহেলা বা নজর না দেয়ার কারণেই এখন এমনটা হয়েছে। ফুটপাত দখলের বিষয়টির সাথে নানা মহলের সম্পর্ক থাকার কারণে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সকালে সাড়ম্বরে উচ্ছেদ করা হলেও বিকেলেই আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। কেন এ অবস্থা অথবা উচ্ছেদকারীরা কেন এতটা আস্কারা পেয়েছে তা নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, একশ্রেণীর পুলিশের কারণেই উচ্ছেদ সফল হচ্ছে না। এর আগের খবরে বলা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন এবং রাজউকের কোনো কোনো কর্মকর্তার কারণে উচ্ছেদ সফল হচ্ছে না। উচ্ছেদ বলতে কেবল ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদই নয়; বরং এর নানামাত্রিক প্রসঙ্গ রয়েছে। আবাসিক এলাকায় ফুটপাতের হকার, অবৈধ পার্কিং, নদীতীর থেকে শুরু করে বিলবোর্ড পর্যন্ত যত ধরনের উচ্ছেদের কথাই বলা হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কায়েমি স্বার্থবাদীদের বাধা রয়েছে। সে কারণেই উচ্ছেদের পরপরই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। হয়তো হাতবদল হয়। টাকার খেলা হয়। পরিস্থিতির কোনো বদল হয় না। এ কথাও বহুবার বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না বলেই সবকিছুই যেন গা-সহা হয়ে গেছে। এই বাস্তবতা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
উত্তরের মেয়র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। সিদ্ধান্ত কার্যকর করাই এখন চ্যালেঞ্জ। তার অবস্থান ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে হবে। কেন, কী কারণে উচ্ছেদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না তা যেমনি খতিয়ে দেখতে হবে, তেমনি কারা বা কোন মহল দখলের সাথে জড়িত তাদেরও শনাক্ত করতে হবে। দখলের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে হবে। কোনো বিবেচনাতেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। প্রকৃত সাফল্য পেতে হলে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে। রাজধানীর উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত সব মহলের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। সমস্যার বাস্তবানুগ সমাধানে সবাই আন্তরিক হলে অবশ্যই পর্যায়ক্রমে পরিচ্ছন্ন রাজধানী গড়ে তোলা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্ছেদের পর যেন দখল না হয়

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ