Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

একজন খুনির লোমহর্ষক জবানবন্দি

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : চার্জশিটে র‌্যাব-১১ এর সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৫ জন র‌্যাব সদস্য এবং নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাব-১১ এর সাবেক মেজর (অব.) মোহাম্মদ আরিফ হোসেন নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাতজনকে অপহরণ থেকে শুরু করে লাশ গুম করা পর্যন্ত পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ২০ পৃষ্ঠার ওই জবানন্দিতে উঠে এসেছে সাত হত্যাকা-ের লোমহর্ষক বিবরণ। গত বছরের ৪ জুন আদালতে দেয়া মেজর (অব.) আরিফ হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিটি রেকর্ড করেন নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিন। আলোচিত এই সাত হত্যাকা-ের ঘটনায় প্রথম দায় স্বীকার করেন মেজর আরিফ। গত বছরের ১৭ মে ভোরে ঢাকা সেনানিবাসের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর কয়েক দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসবাদের একপর্যায়ে তিনি জবানবন্দি দিতে রাজি হন। জবানবন্দিতে আরিফ হোসেন আদালতকে জানান, সাতজনকে অপহরণ করার পর তাকে বলা হয়েছিল, কোনো সাক্ষী রাখা যাবে না। সাত জনকেই গুম করে ফেলো। আরো বলা হয় ‘আজকের মধ্যে নূর হোসেনকে মেরে ফেলো’।
জবানবন্দি রেকর্ড করার আগে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিন মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি পুলিশ নই, ম্যাজিস্ট্রেট জানেন কি? আরিফ হোসেন হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। আপনি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য নন, জানেন কি? আরিফ হোসেন হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। আপনার দোষ স্বীকারোক্তি আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে জানেন কি? আরিফ হোসেন হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। আপনি দোষ স্বীকার করেন বা না করেন আপনাকে পুলিশের কাছে ফেরত পাঠানো হবে না। জানেন কি? আরিফ হোসেন হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। আপনি কোনো ভীতি বা লোভের বশে জবানবন্দি প্রদান করছেন না তো? আরিফ হোসেন না সূচক উত্তর দেন। যা বলছেন স্বেচ্ছায়, সত্য বলবেন তো? আরিফ হোসেন হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন।
আরিফ হোসেনের আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এখানে তুলে ধরা হলো : ২০১৪ সালের মার্চ মাসে আদমজীনগরে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর হেডকোয়ার্টারে আমাদের অফিসার্সদের কনফারেন্স ছিল। ওই কনফারেন্সে সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ কাউন্সিলর নজরুলকে আমাকে টার্গেট হিসেবে দেন। টার্গেট নজরুলকে ধরার জন্য সিও স্যার লে. কমান্ডার রানাকে আমাকে সাহায্য করার নির্দেশ দেন। এরপর আমি ও রানা স্যার মিলে একাধিকবার নজরুলকে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হই। ওই সময় নজরুলকে ধরার জন্য আমরা সঠিকভাবে তথ্য পাচ্ছিলাম না। তখন আমরা নজরুলের প্রতিপক্ষ অপর কাউন্সিলর নূর হোসেনকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করি। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে নূর হোসেন আমাকে ফোন করে বলে, নজরুল আজকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে এসেছে। তখন তাৎক্ষণিকভাবেই আমি ওই সংবাদটি আমার সিও স্যার লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদকে জানাই। সিও স্যার তখনই আমাকে ও রানা স্যারকে নজরুলকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। আমি আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় অভিযানের বিষয়ে রানা স্যারের সাথে কথা বলি এবং তখনই আমি আমার নীল রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে আমার টিমসহ কোটের উদ্দেশে বের হই। আমি আমার টিমের সদস্য হাবিলদার এমদাদ, এসআই পুর্ণেন্দু বালা, নায়েক দেলোয়ার (ড্রাইভার), নায়েক বেলাল, নায়েক হীরা, নায়েক নাজিম, সিপাহী তৈয়ব, সৈনিক আলীম, সৈনিক আলামিন, সৈনিক মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব একত্রে নীল রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে বের হই। আনুমানিক বেলা ১১টার সময় আমরা কোটের বাইরের গেটে এসে উপস্থিত হই। ওই সময় আমি আমার টিমের সদস্য হাবিলদার এমদাদ, নায়েক বেলাল, সিপাহী তৈয়বকে কোটের মধ্যে পাঠাই নজরুলের গতিবিধি নজরদারী করার জন্য। আমরা কোটের বাইরে রাস্তার পশ্চিম পাশে অপেক্ষা করছিলাম। বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি সিলভার কালারের মাইক্রোবাসে করে রানা স্যারের টিমের সাত-আটজন সদস্য আমাদের সাথে যোগ দেয়। ওই সময় রানা স্যার মাইক্রোবাসে ছিলেন না। আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রানা স্যার নিজের গাড়িতে করে এসে গাড়ি ছেড়ে দেন এবং আমার মাইক্রোতে আমার পাশের সিটে বসেন। ওই সময় আমি রানা স্যারকে জানাই, নজরুলের সাথে তার ১৫-১৬ জন সহযোগী আছে। রানা স্যার সিনিয়র হওয়ার কারণে তখন তিনি অপারেশন কমান্ডার হয়ে যান এবং তিনি যেভাবে প্ল্যান করেন সেভাবেই কাজ হয়। ওই সময় রানা স্যার প্ল্যান করেন, রুটিন পেট্রল টিমের সদস্যদের দিয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়াম এলাকায় সিটি করপোরেশনের গেটের কাছে ফাঁকা এলাকায় নজরুলের গাড়িটি থামাবেন। আনুমানিক ১টার দিকে নজরুল একটি সাদা প্রাইভেটকারে করে কোর্ট থেকে বের হয়ে সাইনবোডের দিকে যায়। তখন আমি ও রানা স্যার আমাদের মাইক্রোবাস দু’টি নিয়ে নজরুলের গাড়ির পিছু পিছু যাই। রানা স্যার ওই সময় নজরুলের গাড়ির বর্ণনা দিয়ে পেট্রল টিমকে ওই গাড়িটি থামাতে বলে। আনুমানিক দেড়টার দিকে পেট্রল টিম চেকপোস্ট বসিয়ে সিটি করপোরেশনের গেটের কাছে নজরুলের গাড়িটিকে থামায়। তখন আমরা পেছন থেকে গিয়ে নজরুলের গাড়ি থেকে নজরুলসহ পাঁচজনকে বের করে আমার মাইক্রোবাসে তুলি। ওই সময় আমাদের পেছনে একটি অ্যাশ কালারের প্রাইভেটকার এসে থামে এবং ওই গাড়ি থেকে একজন ভদ্রলোক নেমে চিৎকার করতে থাকেন। ওই সময় রানা স্যার ওই ভদ্রলোক ও তার ড্রাইভারকে তার মাইক্রোবাসে তুলে নেন। আমি ওই পাঁচজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কাঁচপুরের উদ্দেশে রওনা দেই এবং রানা স্যারকে বলি, আমার গাড়িটিকে ফলো করার জন্য। আনুমানিক ১টা ৫০ মিনিটের দিকে তারাবো নামক এলাকায় পৌঁছাই। দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই রানা স্যারের গাড়িটি তারাবো পৌঁছায়। তারাবো পৌঁছে আমি আমার সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ স্যারকে রিপোর্ট করি যে নজরুলসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তখন সিও স্যার বলেন, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী রাখা যাবে না। সাতজনকেই গুম করে ফেল। সিও স্যারের আদেশ পেয়ে আমি আমার ক্যাম্পের বেলালকে বলি, সাত সেট ইটের বস্তা তৈরি করার জন্য। তারাবো আসার পথে রানা স্যার চিটাগাং রোডে মাইক্রোবাস থেকে নেমে যান এবং সিও স্যারের অফিসে চলে যান। আমি নায়েক বেলালকে ইটের বস্তা তৈরি করতে বলে মাইক্রোবাস দু’টি নিয়ে নরসিংদীর দিকে চলে যাই। আনুমানিক আড়াইটার দিকে আমি নরসিংদী র‌্যাব ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছাই। ওই সময় আমি নরসিংদী ক্যাম্প কমান্ডার সুরুজকে ফোন করি এবং তার সাথে ক্যাম্পের বাইরে দেখা করি। ওই সময় আমি মেজর সুরুজের নিকট থেকে দুই হাজার টাকা নেই এবং ক্যাম্পের বাইরে আমরা সবাই লাঞ্চ করি। আনুমানিক ৪টার দিকে শিবপুর উপজেলার দিকে চলে যাই এবং একটি নির্জন জায়গায় অপেক্ষা করতে থাকি। আনুমানিক রাত ৮টার দিকে সিও স্যারকে জানাই, আমরা নারায়ণগঞ্জে আসতে চাচ্ছি। তখন সিও স্যার বলেন, রাস্তায় পুলিশের কড়া নজরদারী চলছে, আমি তিনটনি ট্রাক পাঠাচ্ছি। তোমরা ওই ট্রাকে করে আসামিদের নিয়ে এসো। তখন আমি সিও স্যারকে বলি, ট্রাক আসতে অনেক দেরি হবে, আমরা মাইক্রোবাস নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসছি। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে আমরা নরসিংদীর বেলানগর পৌঁছাই। বেলানগর পৌঁছিয়ে আমি সৈনিক মহিউদ্দিনকে বলি সাতটি সাকসা (চেতনানাশক ইনজেকশন) এবং একটি সিরিঞ্জ কিনে আনতে। আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাইক্রোবাস দু’টি নিয়ে আমরা কাঁচপুরে পৌঁছাই। কাঁচপুর পৌঁছিয়ে আমরা একটি পরিত্যক্ত পেট্রোল পাম্পে অপেক্ষা করতে থাকি। ওই সময় আমি সিওকে ফোন করে বলি, স্যার রাস্তায় পুলিশের কড়া নজরদারী চলছে। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢোকা আমার জন্য ডিফিকাল্ট। রানা স্যার যেন ট্রলারটি কাঁচপুর ব্রিজের নিচে পাঠিয়ে দেন। তার কিছু সময় পরে রানা স্যার সিও স্যারের অফিসের ল্যান্ডফোন থেকে আমাকে জানান, কাঁচপুর ব্রিজের নিচেই ট্রলার থাকবে। তারপর আমি নূর হোসেনকে ফোন করে বলি, কাঁচপুর ব্রিজের নিচে যেন মানুষের কোনো জটলা না থাকে। আনুমানিক রাত ১১টার দিকে আমি মাইক্রোবাস দু’টিসহ কাঁচপুর ব্রিজের নিচে বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাটে পৌঁছাই। আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে বেলালকে ফোন করে বলি, ইটের প্যাকেটগুলো কাঁচপুর ব্রিজের নিচে নিয়ে আসতে। সকাল বেলা হাবিলদার এমদাদ, নায়েক বেলাল কোর্টে নজরদারী শেষে আদমজীনগর ক্যাম্পে ফিরে গিয়েছিল। ওইদিন কোর্টে নজরদারী করার সময় নজরুলের লোকজন সিপাহী তৈয়বকে সন্দেহ করেছিল এবং আটক করেছিল। পরে তৈয়ব পরিচয় দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে একটি সাদা মিতসুবিশি মাইক্রোবাসে করে হাবিলদার এমদাদ, নায়েক বেলাল, সৈনিক আরিফ, সৈনিক তাজুল ইটের প্যাকেটগুলো নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাটে আসে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে রানা স্যারের ট্রলারটি কাঁচপুর ব্রিজের নিচে আসে। ট্রলারটি আসার পর আমি এমদাদকে ইটের প্যাকেটগুলো ট্রলারে লোড করতে বলি। তারপর আমি সিও স্যারকে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে বলি, সাতজনকে গুম করার বিষয়ে আমি প্রস্তুত। ওইসময় সিও আমাকে বলেন, ওকে গো এহেড। সিও স্যারের আদেশ পেয়ে আমি নায়েক হীরা, সিপাহী তৈয়বকে বলি যে, মাইক্রোবাসে থাকা সাতজনকে সাকসা ইনজেকশন পুশ করতে। রানা স্যারের মাইক্রোবাসের লোকজনকে বলি এলাকায় পাহারা দিতে। ইনজেকশন পুশ করার পর নায়েক বেলাল, নায়েক হীরা, সিপাহী তৈয়ব, এসআই পুর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আলামিন, সৈনিক তাজুল, কনস্টেবল শিহাব ও সৈনিক আলীম এই আটজনে আটককৃত সাতজনের মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং আমাকে অবহিত করে। তারপর আমি সবাইকে ডেড বডিগুলো ট্রলারে লোড করার জন্য বলি। তারপর আমি আমার টিমসহ ট্রলারে উঠি এবং রানা স্যারের টিম ও গাড়িগুলাকে ফেরত পাঠিয়ে দেই। আমরা আনুমানিক ১টার দিকে ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদীর মোহনার দিকে রওনা দেই। আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে ট্রলারটি নিয়ে মেঘনা নদীর মোহনায় পৌঁছাই। মেঘনা নদীর মোহনায় পৌঁছিয়ে আমার টিমের সদস্যরা প্রতিটি ডেডবডির সাথে এক সেট ইটের বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়। নদীতে লাশ ফেলে ফেরত আসার সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি অপস) কর্নেল জিয়াউল আহসান স্যার আমাকে মোবাইলে ফোন করেন। ওই সময় আমি স্যারের ফোন না ধরে আমার সিও স্যারকে ফোন করে বলি যে, স্যার এডিজি অপস স্যার কেন আমাকে ফোন করছেন? তখন সিও স্যার আমাকে বলেন যে, আমি এডিজি অপস এর সঙ্গে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর সিও স্যার আমাকে ফোন করে জানান, এডিসি অপস প্রথমে আমাকে ও সিও স্যারকে তার অফিসে যেতে বলেছিলেন। পরে তিনি শুধু আমাকে ও আমার টিমের সদস্যদের তার অফিসে যেতে বলেছেন। রাত অনুমান সাড়ে ৩টার দিকে আমি ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ ঘাটে এসে পৌঁছাই। ঘাটে পৌঁছে দেখি, সিও স্যার ঘাটে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ঘাটে সিও স্যারের সাথে কথা বলে ওই সময় র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশে রওনা দেই। আনুমানিক রাত ৪টার দিকে আমি এডিজি অপস এর অফিসে পৌঁছাই। অফিসে পৌঁছার পর এডিজি অপস কর্নেল জিয়াউল আহসান স্যার আমাকে বলেন, আরিফ কি হয়েছে? নজরুল কোথায়? স্যারের প্রশ্ন শুনে আমি একটু অবাক হই। তারপর আমি বলি, নজরুল কোথায় আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? তখন স্যার আমাকে আবার ওই একই প্রশ্ন করেন। তখন আমি স্যারকে বলি, আমি যা করি সিও এর আদেশে করি। সো এ বিষয়ে যা জিজ্ঞাসা করার আপনি সিও স্যারকে জিজ্ঞাসা করেন। তারপর এডিসি স্যার সিওকে ফোন দেন এবং ফোনেই সিও স্যারের সাথে আমাকে কথা বলান। তখন আমি সিও স্যারকে বলি, স্যার নজরুল কোথায় এই কথা এডিজি স্যার আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন। তখন সিও স্যার বলেন যে, এডিজি কেন এমন করছে তা আমি বুঝতেছি না। ঠিক আছে তুমি ঘটনা বর্ণনা করে আস। তারপর আমি সমস্ত ঘটনা এডিজি স্যারকে বলার পর তিনি আমাকে চলে যেতে বলেন। তারপর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমি নারায়ণগঞ্জ এসে সিওকে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে বাসায় চলে যাই। ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিও’র সাথে দেখা করে আমি আমার অফিসে যাই। সাড়ে ৩টার দিকে অফিস থেকে বাসায় আসি। ২৯ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে অফিসে যাই। ওইদিন ১২টার দিকে সিও স্যার আমাকে ফোন করে বলেন, এডিজি অপস স্যার আমাকে ও সিও স্যারকে তার অফিসে যেতে বলেছেন। তারপর আমি ও সিও স্যার র‌্যাব হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশে রওনা দেই এবং আনুমানিক দেড়টার দিকে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে পৌঁছাই। হেডকোয়ার্টারে পৌঁছার পর এডিজি স্যার প্রথমে সিও স্যারের সাথে কিছু কথা বলেন। তারপর আমাকেও ডেকে পাঠান। তারপর আমাদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। এডিজি স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি নূর হোসেনের সাথে কি কি কথা বলেছি। নূর হোসেন কতদিন ধরে নজরুলের বিষয়ে ইনফরমেশন দিয়েছে। ব্যাংক বিষয়ে নূর হোসেনের সাথে কি কথা হয়েছে। লাশগুলো কি করেছি? তখন আমি বলি যে, নূর হোসেন প্রায় দেড় মাস ধরে নজরুলের বিষয়ে তথ্য দিয়ে আসছিল। আর ব্যাংকের বিষয়ে নূর হোসেনের একজন বিশ্বস্ত লোকের একাউন্ট নম্বর দিতে বলেছিলাম। আর লাশগুলো মেঘনাতে ফেলে দিয়েছি। আমার কথা শেষ হওয়ার পর এডিজি অপস স্যার বলেন, আজকের মধ্যে নূর হোসেনকে মেরে ফেলতে হবে। তখন আমি বলি যে, নজরুলের কারণে নারায়ণগঞ্জ গরম হয়ে আছে। এ অবস্থায় নূর হোসেনকে মারলে পরিস্থিতি কন্ট্রোল করা ডিফিকাল্ট হবে। তারপর এডিজি অপস সিওকে বলেন, সিও এটা তোমাকে করতে হবে। তারপর আমি ও সিও স্যার নারায়ণগঞ্জে চলে আসি। তারপর সিও স্যার আমাকে ও রানা স্যারকে চিটাগাং রোডে রেকি করতে পাঠান। আনুমানিক বিকাল ৫টার দিকে সিও আমাকে ফোন করে অফিসে আসতে বলেন। অফিসে যাওয়ার পর আমরা জানতে পারি, আমাদেরকে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে ক্লোজ করা হয়েছে। রাত ৮টায় হেডকোয়ার্টারে পৌঁছাই এবং মুভ অর্ডার নিয়ে রাতেই মাতৃবাহিনীতে যোগদান করি। পরের দিন স্ব-পরিবারে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা সেনানিবাস চলে যা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ