Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৫ মিনিটে ২৬ জনের ফাঁসি

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তা। চাদমারী এলাকায় নতুন কোর্টে দেখেশুনেই লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর সাইরেন বাজলো। প্রিজন ভ্যানে আনা হলো দুই কারাগার থেকে সাত খুনের আসামিদের। র‌্যাবের চাকরিচ্যুত উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তা ছাড়া বেশিরভাগ আসামিকেই ডা-াবেড়ি পরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রথমে কয়েকজন ঢোকানোর পর এজলাসে থাকা লোহার খাঁচার বাইরে রাখা হয় তারেক, আরিফ ও রানাকে। এরপর বাকিদের সঙ্গে সবশেষে ঢোকানো হলো নূর হোসেনকে। বেশিরভাগ আসামি ভয়ার্ত চোখে আদালতের পানে তাকিয়ে। যদিও তখনও আদালত বসেননি। কিন্তু শুরু থেকে নির্বিকার ছিলেন র‌্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা। আর  নূর হোসেনকে দেখা গেছে কিছুটা উচ্ছল।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ০৩ মিনিটে আদালত বসলেন। এরপর আসামিদের হাজিরা ডাকা হলো। সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করলেন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জেলা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। বললেন, অভিন্ন দু’টি মামলার সাজা একই রকম। এরপর সাজা ঘোষণা শুরু করেন।
৫ মিনিটের ওই রায়ে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দায়ে প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পরপরই নূর হোসেন খাঁচার ফাঁক গলে এগিয়ে কথা বললেন তারেক সাঈদের সঙ্গে। কি যেন কথা শেষে কান্নারত অন্য আসামিদের সান্ত¡না দিচ্ছিলেন নূর হোসেন। কারও মাথায় কিংবা পিঠে হাত বুলিয়ে। আবার পুলিশের সঙ্গেও আগ বাড়িয়ে কথা বললেন  নূর হোসেন। কিন্তু তার মধ্যে ভয়, টেনশন কিংবা হতাশার ছবি দেখা যায়নি।
এরপর পুলিশ সদস্যরা আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে একে একে সকল আসামিকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যান। পরে গাড়িতে ওঠানোর সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মারতে উদ্যত হন আসামি মোখলেসুর রহমান। আসামিদের নিয়ে যাওয়ার পর আদালতের বাইরে শত শত উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। ফাঁসির রায় কার্যকর চেয়ে মিছিলও করেন আইনজীবীরা। এতসব ভিড়ের মাঝে সন্তুষ্টি আর আনন্দের কথা জানান নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। কিন্তু কান্নায় ভেঙে পড়েন আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে সুস্মিতা সরকার। কারণ, ফাঁসির রায় হলেও তার বাবাতো আর ফিরে আসবেন না। বার বার এ ধরনের  কথা বলে কান্না করছিলেন সুস্মিতা।
তবে বাবার বীরত্বের কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি তিনি। সুস্মিতা বলেন, ‘বর্তমান সমাজে এমন কেউ আছেন কি-না জানি না, যিনি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে অচেনা লোককে বাঁচাবেন। যিনি সব সময় দেওয়ানি মামলা করতেন, সেই তিনি অন্যের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন। বাবার এ বীরত্বের জন্য গর্ববোধ করি’।
চন্দন সরকারের ড্রাইভার নিহত ইব্রাহীমের মাও এসেছিলেন আদালত অঙ্গনে। তিনিও রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে পুত্রশোক এখনো ভুলতে পারেননি। তিনিও চান, দ্রুত রায় কার্যকর। কিন্তু কয়েকজন আসামির মতো প্রায় নির্বিকার তাদের আইনজীবীরাও। আইনজীবী খোকন সাহা এবং আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের কি করার আছে? আমাদের কাজ হচ্ছে, আসামিদের আইনি সহায়তা দেয়া। সেটি দিয়েছি। আদালত যেটা মনে করেছেন, সে অনুসারে রায় দিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। আসামিরা এখন যদি মনে করেন, তাহলে আপিল করবেন। তবে নূর হোসেন জানিয়েছেন, তিনি আপিল করবেন’। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ