মহাজাগতিক হুমকি মোকাবেলার উপযোগী হচ্ছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র
প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম
ইনকিলাব ডেস্ক : চেনা শত্রুকে মোকাবেলা যতটা সহজ তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন অচেনা-অজানা শক্তিধর জড় শত্রুদের। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্যই স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালের কিছু আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক মিসাইল রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার মাকেয়েভ রকেট ডিজাইন ব্যুরোর শীর্ষ গবেষক সাবিত সাইতগারায়েভ এমনই এক তথ্য জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রও একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে। তবে তাদের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) চাইছে, ধেয়ে আসা গ্রহাণুগুলোর দিক পরিবর্তন করে অন্যদিকে ঠেলে দিতে। রাশিয়া চাইছে, পৃথিবীর বায়ুম-ল স্পর্শ করার আগেই এগুলো ধ্বংস করে দিতে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, গ্রহাণুর বা উল্কাপি-ের আঘাতে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডাইনোসররা। হয়তো কোনো একদিন মানবজাতিও এমন কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
সাবিত বলেন, রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা মিসাইলগুলোকে আরো উন্নততর করতে চাইছেন। এই মিসাইলগুলো যে শত্রুদেশের দিকে ছুটে যাবে তাই নয়, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা যে কোনো গ্রহাণুকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ মহাজাগতিক হুমকি মোকাবেলার উপযোগী করে উন্নত হবে মিসাইল। খবরটি অনেকটা সায়েন্স ফিকশন মুভির গল্পের মতো মনে হলেও এটাই বাস্তবায়িত করতে চলেছেন রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা। তারা বর্তমানের ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল আইসিবিএমগুলোকেই এমনভাব উন্নত করবেন যেন তা মহাশূন্যের শত্রুকে পরাস্ত করতে পারে। রাশিয়ান নিউজ এজেন্সি টিএএসএস এক প্রতিবেদনে জানায়, মিসাইলগুলো পৃথিবীর জন্যে হুমকি হয় এমন উল্কা বা গ্রহাণুকে ধ্বংস করবে। মহাবিশ্বের সৌরজগতে গ্রহ-উপগ্রহ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য মহাজাগতিক বস্তু, গ্রহাণুর উপস্থিতি। কখনো কখনো ধূমকেতু, উল্কাসহ নানা বস্তু কক্ষচ্যুত হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু গ্রহাণু, উল্কা হুমকি হয়ে ওঠে পৃথিবীর জন্য। তারা তীব্র বেগে ধেয়ে এসে ধ্বংস করে দিতে চায় এ গ্রহের প্রাণের অস্তিত্ব। এমন পরিস্থিতিতে আক্ষরিক অর্থেই ঘাম ঝরাতে হয় বিজ্ঞানীদের। এমনই এক পরিস্থিতি অনুধাবন করেই সাবিত সাইতগারায়েভ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ২০ মিটার থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত ব্যাসের গ্রহাণুগুলোকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করছি। এ ছোট গ্রহাণুগুলোও বড় ধরনের ক্ষতি করতে সক্ষম। আর এ ধরনের গ্রহাণু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একেবারে শেষ মুহূর্তে শনাক্ত হয়। কখনো কখনো তো এদের ধেয়ে আসার ব্যাপারটা টেরই পাওয়া যায় না।
২০১৩ সালে রাশিয়ার শেলিয়াবিনস্ক এলাকার আকাশে ২০ মিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু বিস্ফোরিত হয়। তিন লাখ টন টিএনটি বা তার চেয়েও বেশি শক্তির বিস্ফোরণ ঘটায় এটি। এতে ওই এলাকার ভবনগুলোর জানলা-দরজার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, আহত হন সহস্রাধিক মানুষ। পৃথিবীর কোনো মহাকাশ সংস্থাই গ্রহাণুটির ধেয়ে আসা শনাক্ত করতে পারেনি। নাসার পরিচালক জেসন কেসলার বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত ধেয়ে আসা ছোট গ্রহাণুগুলোর এক শতাংশ মাত্র শনাক্ত করতে পারি আমরা। এগুলোর ব্যাস সর্বনিম্ন ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কাজেই বাইরে আরও অনেক গ্রহাণু আমাদের জন্য হুমকি হয়ে অপেক্ষা করছে, যেগুলো এখনও আমাদের চোখে ধরা পড়েনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দূরপাল্লার রকেট নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে মাকেয়েভ ডিজাইন ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। বিখ্যাত রকেট ডিজাইনার সের্গেই করলোভের নেতৃত্বে ওকেবি-১ ডিজাইন ব্যুরোর নকশায় বিভিন্ন রকেটের ডিজাইন করা হয়। ১৯৫০-এর দশকে মাকেয়েভ ডিজাইন ব্যুরো সাবমেরিনের জন্যে ব্যালাস্টিক মিসাইল প্রস্তুত শুরু করে। বর্তমানে এরা বিজ্ঞান গবেষণা এবং রকেট ও স্পেস সিস্টেম নিয়ে কাজ করে। এর আগে নাসা উল্কা ও গ্রহাণুর সন্ধান পায় যেগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি পথ দিয়ে অতিক্রম করছে। নাসার ‘নেয়ার-আর্থ অপজেক্ট অবজারভেশন প্রোগ্রাম যা স্পেসগার্ড নামে সমধিক পরিচিত। পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থানে চলে আসা এসব গ্রহাণু বা উল্কাকে হুমকি বলে মনে করে স্পেসগার্ড। ডেইলি মেইল।