পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বেনাপোল অফিস : দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় না আসায় ব্যাহত হচ্ছে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। পণ্য খালাশে বিলম্ব ঘটায় বন্দরে দিনের পর দিন আটকে থাকছে ভারতীয় পণ্য বোঝাই ট্রাক। ফলে ট্রাক ড্যামারেজের কারণে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। দু’দেশের ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দরকে অটোমেশন’র আওতায় আনার জোর দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।
এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে শত শত পণ্য বোঝাই ভারতীয় ট্রাক। কাস্টমস এর আমদানি-রফতানির কার্যক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু থাকলেও বেনাপোল স্থলবন্দরে চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতি।
ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি বেনাপোল বন্দরের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এনবিআর পরিচালিত গবেষণার তথ্যমতে, ঢাকাসহ দেশের প্রধান বন্দরগুলোয় এরই মধ্যে অটোমেশন হয়েছে। কিন্তু বেনাপোল বন্দর দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হওয়া সত্তে¡ও আজও এটি অটোমেশনের আওতায় অসেনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে ভারতের সঙ্গে দ্রুত কার্গো পণ্য আমদানি-রফতানিতে পুরনো ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতিকেই অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য এবং সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপর। এছাড়া পুরনো এ পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি অসাধু চক্র। এদের কারণে সরকার প্রতি বছরই বড় ধরনের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এ গবেষণায় সহযোগিতা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। আর ‘বাংলাদেশ টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস)’ শীর্ষক এ গবেষণাটি পরিচালনা করে বেনাপোল বন্দর ও কাস্টম হাউজ। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে ওরজ-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড (ওর-কোয়েস্ট)।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ মফিজুর রহমান সজন জানান, কাস্টমসে বেশ কয়েক বছর আগেই কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। কিন্তু স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ অটোমেশন পদ্ধতি চালু না করায় কাস্টমসের সঙ্গে বন্দরের সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীদের অ্যানালগ পদ্ধতিতে বন্দরে কাগজপত্র দাখিল করতে হচ্ছে। অটোমেশন না থাকায় আমদানি-রফতানি সম্পর্কিত তথ্যপ্রাপ্তিতেও সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভারত থেকে প্রতিদিন বন্দরে প্রবেশ করা পণ্যের ধরন ও তার পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গবেষণায় বলা হয়, জাপান ও যুক্তরাজ্য টিআরএস অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডবিøউসিও) মাধ্যমে কাস্টম হাউজের সেবা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু অনেক কাস্টম হাউজেই এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বেনাপোলও রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে বড় অংশই হচ্ছে পচনশীল পণ্য। এসব পণ্যের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৫০-৩০০টি বিল অব এন্ট্রি (বিওএ) ক্লিয়ারেন্সের জন্য জমা পড়ে।
এছাড়া প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার বিদেশী যাত্রী এ বন্দর দিয়ে ভ্রমণ করে। কিন্তু বন্দর কার্যক্রম পুরনো পদ্ধতিতে চলায় এক্ষেত্রে পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই আমদানিকারকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত পচনশীল পণ্য আমদানিকারকরা সংকটের মুখে পড়ে বেশি।
গবেষণায় পণ্য ও শুল্কমুক্তির বিলম্বিত ক্লিয়ারেন্সের জন্য বিদ্যমান ম্যানুয়াল পদ্ধতি ও পুনরাবৃত্তিমূলক প্রক্রিয়াকে দায়ী করা হয়। এ পদ্ধতির ফলে কর ফাঁকি বেড়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া দ্রæত করতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গড়ে সাতদিনের মধ্যে আমদানি পণ্য ও চারদিনের মধ্যে রফতানি পণ্য খালাসের বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বৈধ বাণিজ্য সহজীকরণে সময় বাঁচানোর বিষয়ে এনবিআরকে কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।
এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে কাস্টমস, অন্যান্য সরকারি সংস্থা, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্টকে পদ্ধতি ও অনুশীলন বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহŸান জানানো হয়। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পদ্ধতি গ্রহণের জন্যও সুপারিশ করা হয়। এদিকে এ প্রতিবেদন অনুযায়ী শিগগিরই এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানিতে বিদ্যমান বাধা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে ডিজিটাল করতে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে কাজ চলছে। অচিরেই বেনাপোল বন্দরকে ডিজিটালে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এতে বন্দরের গতিশীলতা অনেকটাই বাড়বে। সার্বিক বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছে। পুরো কাস্টম হাউজকে অটোমেশনের আওতায় আনা হলেও বন্দরের কারণে আমাদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি এরই মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।