পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : সততা, সাহস আর নিষ্ঠার দ্বিতীয় স্বীকৃতি পেলেন আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজী। হলমার্ক কেলেঙ্কারির উন্মোচক এই ব্যাংকারকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি ও সিইও হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
গত বছরের জানুয়ারিতেই তাকে পদোন্নতি দিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব নিয়েই চুরমার করেন লুটেরা সিন্ডিকেট। লুটপাটের রাহুগ্রাস থেকে উদ্ধার করেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে। তার শক্ত অবস্থানের কারণে অগ্রণী ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ব্যাংকটির সাবেক এমডি আবদুল হামিদ। অনিয়মের দায়ে গ্রেফতার হন একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা।
সন্তুষ্ট অর্থমন্ত্রী এবার সিরাজীর ওপর আস্থা রাখলেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে। আজ ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন শুরু করবেন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে।
তবে তার সততা আর নিষ্ঠার পথটি মসৃণ ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করতে হয়েছে। ঝুঁকি নিতে হয়েছে জীবনের। তবুও অটল ছিলেন নিজের নীতি-আদর্শে যেটা তার পিতার থেকে পাওয়া।
সিরাজী ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিভাগের (আইটিএফডি) জিএম পদে যোগ দিয়েই ডিসেম্বরের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন থেকে স্থানীয় শাখা, রূপসী বাংলা শাখা ও গুলশান শাখার অনিয়মের কিছু তথ্য পান।
তিনি জানতে পারেন, রূপসী বাংলা শাখায় এই গুরুতর অনিয়ম শুরু হয়েছে ২০১০ সাল থেকে। কালক্ষেপণ না করে তাৎক্ষণিক এই তিন শাখা পরিদর্শনের জন্য অনুমতি চান এমডি’র কাছে। তৎকালীন এমডি নিরীক্ষা চালানোর অনুমোদন দিলেও এর সঙ্গে একটি মৌখিক নির্দেশ দেনÑ সবার শেষে যেতে হবে রূপসী বাংলা শাখায়। সেভাবেই কাজ চলছিল। কিন্তু রূপসী বাংলা শাখা নিরীক্ষার সময় এলে বাধা হয়ে দাঁড়ান অডিটের ডিএমডি। হলমার্ক গ্রুপকে রূপসী বাংলা শাখা থেকে লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সময়ক্ষেপণের কৌশল নেন তিনি। পরিদর্শন দলের সদস্যদের বিভিন্ন সময় ডেকে এনে অন্য কাজ দেন। এই সুযোগে বাড়তে থাকে রূপসী বাংলা শাখার অনিয়ম।
কর্তৃপক্ষের প্রচ- বিরোধিতা সত্ত্বেও ১ এপ্রিল অডিট নোট ইস্যু করিয়ে নেন জিএম সিরাজী। ঠিক হয় ৪ এপ্রিল, ২০১২ থেকে শুরু হবে পরিদর্শনের কাজ। কিন্তু এরপর শুরু হয় নতুন এক সঙ্কট। ওই দিনই আইটিএফডির জিএম মাসরুরুল হুদা সিরাজীকে বদলি করা হয় সিলেটে। পরদিনই ছাড়পত্র দিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ৩ মাস পর পাঠানো হয় আবার রংপুরে। সিরাজীর গঠন করা চৌকস অডিট টিম ভেঙে দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো টিম গঠন করা হয়।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গণমাধ্যমে হলমার্ক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যায়। সমালোচনা আর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সোনালী ব্যাংক আর হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে। আর পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন জিএম সিরাজী। কারণ তার কারণে উদ্ঘাটিত হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেংকারির ঘটনা। গণমাধ্যম, ব্লগ, ফেসবুকে দারুণ প্রশংসিত হন তিনি। মাসরুরুল হুদা সিরাজীকে জাতীয় বীর হিসেবে পুরস্কৃত করার দাবিও উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। কিন্তু ‘পুরস্কার’ তিনি পান অন্যভাবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ৩৭টি মামলায় তাকে আসামি করে দেয়।
জানা যায়, তদন্ত চলাকালীন দুই বছরে বিপর্যয় নেমে আসে তাঁর জীবন ও ক্যারিয়ারে। নিবেদিতপ্রাণ, সাহসী কর্মকর্তাকে তার সৎসাহসের অভূতপূর্ব খেসারত দিতে হয়। তার ‘অবৈধ সম্পদ’র খোঁজে দেশব্যাপী চালানো হয় অভিযান। তবে ব্যাংকঋণে কেনা ঢাকায় ছোট্ট একটি ফ্লাট ছাড়া কিছুই খুঁজে পায়নি দুদক। এই সময়ে তিনি সামাজিক ও পেশাগতভাবে অপদস্থ হন। বঞ্চিত হন পদোন্নতি থেকে। অবশেষে ৩৭টি মামলার চার্জশিটে জিএম সিরাজীকে অভিযুক্তের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ারÑ হয়ে গেছে।
“জিএম সিরাজী সততা আর নীতিটুকু পেয়েছেন তার পরিবার থেকে। তার পিতা আনোয়ার উল্লাহ সিরাজী এলাকায় বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার কোনো বিত্তবৈভব ছিল না। বরং অভাব ছিল তার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু দারিদ্র্য তাকে মহান করেছে। দারিদ্র্যকে তিনি বরণ করে নিয়েছেন সন্তানদের মানুষ করার চ্যালেঞ্জ হিসেবে। এই ব্যতিক্রমী ভূমিকার জন্যই তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে চালিয়ে গেছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে এক অসম যুদ্ধ। যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। সিরাজীর মা গতবছর ‘রতœগর্ভা মা’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।” মাসরুরুল হুদা সিরাজীর ছোট ভাই মাইনুল এইচ সিরাজী একটি লেখায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন তার পরিবারের।
তিনি লেখেন, “হলমার্কের ঘটনাগুলো যখন ঘটছিল, জিএম সিরাজী আমাদের অনেক আশঙ্কার কথা বলেছেন। বলেছেন, তার জীবন আজ হুমকির মুখে। এসব শুনে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। বিশেষ করে হুমকি বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন। আমাদের পরিবারের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্ব নেই। তাই আমাদের জন্য চাপটা ছিল বেশি। আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি এবং বলি, কেন আপনি স্রোতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গেলেন? তখন উল্টো তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন। বলেছেন, তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। এর বেশি কিছু করেননি। তিনি আমাদের বিশ্বাস করতে বলেছেনÑ সততার জয় একদিন হবেই।”
সততার জয় কী হয়েছে? গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “অবশ্যই, অবশ্যই। সততার জয় হয়েছে। আমি হলমার্ক কেলেঙ্কারি ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। এজন্য আমাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তবে শুকরানা, শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে আমার সততার।”
“আমার কঠিন দিনগুলোতে যারা আমার পাশে ছিলেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ”- বলেন তিনি।
তাঁর সম্পর্কে ফেসবুকে রাফসান রাফি নামে একজনের উক্তি ঠিক এরকম, “অগোচরে থেকে যাওয়া এসব ছোটখাটো মানুষদের জন্যই এখনও বাংলাদেশকে জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দেয়নি বঙ্গোপসাগর, এখনও বৈশাখী ঝড়ে উড়ে যায়নি গোটা দেশ। ঐ সব চোর-বাটপার-লুটেরারা দেশপ্রেম শব্দটিকে যতই অপবিত্র করার চেষ্টা করুক, এইসব লুকিয়ে থাকা মানুষেরাই এদেশের সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। এসব মানুষের ত্যাগে ও ঘামেই একদিন এই দেশ ঘুরে দাঁড়াবে। তাই কখনোই এদেশের উপর থেকে আশা হারিও না, কক্ষণো না।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।