Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ : প্রায় দুইশ’ বছর আগে থেকে বসতি শুরু হয় দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমাটিনে। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ ভয়াবহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেকনাফ উপকূলে আঘাত হানলেও কখনো মনোবল ভাঙেনি সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর।
কিন্তু সম্প্রতি এ দ্বীপে দু’টি জলোচ্ছ্বাসে আঘাত হানে এবং দ্বীপের চারপাশে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে ভাবনায় পড়েছে দ্বীপের প্রায় ৯ হাজার বাসিন্দা। ভাঙনের কবলে পড়ে ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসায় দেশের মানচিত্র থেকে দ্বীপটি হারিয়ে যাবে এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন দ্বীপবাসী।
এ দ্বীপের পরিবেশ, পর্যটন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে ১৫ জানুয়ারি  (রোববার) দুপুরে টেকনাফ পৌরসভার একটি আবাসিক হোটেলের হলরুমে সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ  এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আলহাজ আমির হোসেন ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাফেজ উল্লাহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, এ দ্বীপে মানুষের  বসবাস শুরু হয় প্রায় দুইশ’ বছর আগে। দ্বীপে বসতি শুরুর পর এভাবে কোনোদিন এখানে পানি ওঠেনি। এ রকম ভয়াবহ ভাঙনও কোনো সময় দেখা যায়নি। জোয়ারের পানি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে দ্বীপে চারপাশেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বেশি ভেঙেছে উত্তর-পশ্চিম অংশে। এদিকে বিস্তীর্ণ কেয়াবন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির প্রায় দেড়শ’ ফুটেরও বেশি সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের কঙ্কালও।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারিভাবে স্থাপনা নির্মিত হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। পর্যটন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা ধরে রাখতে মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেন।
উপস্থিত সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান নুর আহমদ আরো বলেন, ‘দ্বীপের চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের কবলে পড়ে বহু বসতবাড়ি ও সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্তরা ব্যক্তি উদ্যোগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে প্রশাসন বাধা প্রদান করে। আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপের চতুর্দিকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি’।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯১সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, ৯৪’র জলোচ্ছ্বাসসহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ দ্বীপে পানি ওঠেনি। ভাঙনের সমস্যাও তেমন একটা ছিল না। কিন্তু দ্বীপে বসতি শুরুর দীর্ঘ দুইশ’ বছর পর, বিগত বছরগুলোতে পূর্ণিমার জোয়ারে হঠাৎ সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের চারপাশে বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙন কবল থেকে রক্ষায় পায়নি দ্বীপের আটটি বসতঘরসহ প্রায় ২১টি স্থাপনা পানিতে ধসে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র একমাত্র কবরস্থানটির ১৫০ ফুটেরও বেশি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে।  ফলে শঙ্কিত হয়ে পড়ে দ্বীপের বাসিন্দারা।
জানা গেছে,বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ