পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে আজ রোববার রাতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে কাক্সিক্ষত ফল বয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী একথা বলেন।
সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট দাভোসে ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারী চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘প্রতিবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব’। প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ সফরে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ডের দাভোসে এবারের সম্মেলনে প্রায় ৪৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যোগ দিচ্ছেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের কথা রয়েছে। চলতি বছরের এই প্রথম বিদেশ সফর শেষে ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ফিরবেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, দাভোসে অনুষ্ঠেয় ফোরামের বার্ষিক সভায় প্রধানমন্ত্রী পানি, অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, তথ্য-প্রযুক্তি এবং নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিভিন্ন সেশনে অংশ নেবেন। এবারের সভায় চার বিষয় প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ফোরামের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক যোগাযোগ আরও শক্তিশালীকরণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করা, পুঁজি সংস্কার ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি। এসব বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রায় ৩০০ সেশন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্যানেল আলোচনা ও সেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরিশাসের প্রেসিডেন্টদ্বয়, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও পেরুর প্রধানমন্ত্রীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সমসাময়িক বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া ফোরামের কর্মসূচির ফাঁকে শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
প্রসঙ্গত, এবারই প্রথম বাংলাদেশের কোন নির্বাচিত সরকার প্রধানকে এই সম্মানজনক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। নিউইয়র্কে বিগত জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনকালে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রীকে এ ফোরামে অংশ নেবার আমন্ত্রণ দেন ডব্লিউইএফ প্রেসিডেন্ট। এবারের সম্মেলনে সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, শ্রীলংকা, পেরু, জর্ডান, মিশর ও কাতারসহ বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশের রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান এবং ডব্লিউটিও, ইউনেসকো, ইউএনডিপি, আঙ্কটাঢ, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি-সহ বিভিন্ন সংস্থা প্রধানগণ অংশগ্রহণ করবেন। জাতিসংঘের নবনির্বাচিত মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। ১৯৭৯ সালে প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের পর এবারই চীনের সবচেয়ে বড় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবে। তিন হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাইরে থেকে আসবেন এবং ব্যবসায়ী ও সরকারের বাইরে এক-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। যা হবে দাভোসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যতিক্রম।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচী
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইতিহাদ এয়ার ওয়েজের একটি ফ্লাইট আজ রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করবে। ফ্লাইটটি সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘ কার্যালয়ে স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহ্সান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে সিলভ্রেটা পার্ক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। সুইজারল্যান্ড সফরকালে তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করবেন। দাভোস যাবার পথে শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমীরাতের আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিট যাত্রা বিরতি করবেন। শেখ হাসিনা ১৭ জানুয়ারি দাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। এর আগে তিনি ডাব্লিউইএফ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। একই দিন একই ভ্যানুতে অনুষ্ঠিত ‘শ্যাপিং এ নিউ ওয়াটার ইকনোমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায়ও প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা বিকেলে কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ায় হার্মসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন বিষয়ক একটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা ১৮ জানুয়ারি ‘ওয়ার্ল্ডস আন্ডারওয়াটার’ এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব’ শীর্ষক এক অধিবেশনেও যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ১৯ জানুয়ারি মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ডে ‘প্রতিবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল’ নেতৃত্ব শীর্ষক ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক লিডারসদের এক অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে অংশ নেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী একই দিন সন্ধ্যায় দাভোস-ক্লোস্টারস্-এর স্কাটজাল্পে অনুষ্ঠিত ‘ওমেন লিডার্স ডিনার : নিউ ফ্রন্টিয়ার অব লিডারশিপ’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। পাঁচদিনের সফর শেষে শেখ হাসিনা ২০ জানুয়ারি দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন এবং ২১ জানুয়ারি দুবাই হয়ে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম হলো জেনেভার কলোগনিভিত্তিক সুইজারল্যান্ডের একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন। এটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে সুইস সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। এই সংস্থাটির উদ্দেশ্য হলোÑ ব্যবসা, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অবস্থার উন্নতির মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং শিল্পখাতের এজেন্ডাগুলোর বাস্তব রূপ দেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।