পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : ব্রুনাইয়ের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণীর প্রতারক দালাল চক্রের অপতৎপরতায় দেশটির শ্রমবাজার আজ হুমকির মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে। এসব দালাল চক্রের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এক শ্রেণীর দালাল চক্র তেল সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাইয়ে ভালো চাকরি দেয়ার নাম করে ভিজিট ভিসায় গ্রামাঞ্চলের নিরীহ সরল মনের যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিরীহ যুবকরা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। প্রতারণার শিকার এসব প্রবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশী হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। ব্রুনাই দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে প্রতিদিন প্রতারণার শিকার বহু প্রবাসী কর্মী নানা লিখিত অভিযোগ পেশ করেছে। জমি-জমা বিক্রি এবং ঋণ করে গাজীপুরের কাপাশিয়া উপজেলার দক্ষিণ খামির এলাকার তিন যুবক কালো তালিকাভুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি কাপাশিয়া ওভারসীজ লিমিটেডের (৯৭৭) চেয়ারম্যান সাজেদুল করিম সুমনের মাধ্যমে গত ২ সেপ্টেম্বর ব্রুনাই যায়। প্রতারক সাজেদুল করিম সুমন কাপাশিয়া উপজেলার দক্ষিণ খামির গ্রামের জহির উদ্দিন মীরের ছেলে। প্রতারক সুমন নিজ এলাকার নিরীহ যুবক শাখাওয়াত হোসেন, মোঃ বাচ্চু মিয়া এবং মোঃ আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে জনপ্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা করে নিয়ে বিএমইটি থেকে কোনো ছাড়পত্র না নিয়েই বিমান বন্দরের অসাধু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ করে ভিজিট ভিসায় ব্রুনাই পাঠায়। গতকাল টেলিফোনে সাজেদুল করিম সুমনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।
ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছার পর প্রতারক সুমনের সহযোগী দালাল বাদল উল্লেখিত তিন যুবককে রিসিভ করে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। পরের দিন প্রতারক সুমনের সহযোগী দালাল বাদল শাখাওয়াত হোসেন, বাচ্চু মিয়া ও আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন থেকে ভিসা লাগিয়ে দেয়ার কথা বলে উধাও হয়। তারা কাজ-কর্মহীন, আশ্রয়বিহীন এবং অনাহার অনিদ্রায় কয়েক দিন মানবেতর জীবন যাপন করে। বহু খোঁজাখুঁজি করেও দালাল বাদলকে পাওয়া যায়নি। তারা নিরূপায় হয়ে ব্রুনাই দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের দ্বারস্থ হয়। হাই কমিশনের শ্রম সচিব শফিউল আজিম পুরো ঘটনাটি শুনে হতবাক হন। শ্রম সচিব শফিউল আজিম তাৎক্ষণিকভাবে প্রতারণার শিকার শাখাওয়াত হোসেন, বাচ্চু মিয়া ও আমজাদ হোসেনকে নিয়ে ব্রুনাই ইমিগ্রেশনে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। শ্রম সচিব মানবিক কারণে ব্রুনাই ইমিগ্রেশন থেকে উল্লেখিত তিন প্রবাসী কর্মীকে অস্থায়ী পাস নিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করেন। শ্রম সচিব শফিউল আজিম ইনকিলাবকে বলেন, প্রতারক সাজেদুল করিম সুমনের কাপাশিয়া ওভারসীজ নানা অপরাধের দরুন ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ব্লাকলিস্ট রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতারক সুমন ও তার সহযোগী দালাল বাদল উল্লেখিত তিন যুবককে মানবপাচার করেছে। প্রতারণার শিকার উক্ত তিন যুবকের আত্মীয়-স্বজনরা স্থানীয়ভাবে প্রতারক সুমন ও দালাল বাদলের বিরুদ্ধে আদালতে মানবপাচার মামলা দায়ের করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রুনাইয়ের শ্রমবাজার সম্প্রসারণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি দালাল চক্রের খপ্পরে না পড়তে ব্রুনাই গমনেচ্ছু কর্মীদের আরো সতর্ক হবার অনুরোধ জানান।
এদিকে, ব্রুনাই দারুসসালাম মালামাউ কমপ্লেক্সস্থ আলী জয়নুদ্দিন এসডিএন বিএইচডি’র স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী’কে ব্রুনাইয়ে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা রেল স্টেশন সংলগ্ন ইমাম মার্কেটের কালু মোল্লার ছেলে প্রতারক মুনসুর আহমেদ দু’দফায় প্রায় ৮৪ লাখ টাকা নিয়ে ব্রুনাই থেকে পালিয়ে দেশে চলে এসেছে। প্রতারক মুনসুর আহমেদ ফতুল্লা রেল স্টেশন ইমাম মার্কেট এলাকায় আত্মসাৎকৃত টাকা দিয়ে দু’টি বহুতল বিল্ডিং গড়ে তুলেছে। প্রতারক মুনসুর আহমেদ তার সমুন্দি মোঃ মসিনের স্বাক্ষরে ২০ লাখ টাকার চেক (নং-৫৫৬১৪৭৪), ভাতিচা হাবিবের স্বাক্ষরে ১০ লাখ টাকার চেক (৩৬১৬৫৮৩) এবং নিজ স্বাক্ষরে ১০ লাখ টাকার চেক (৭১১০৮৯৮) পাওনাদার মোহাম্মদ আলীকে দিয়েছিল। কিন্তু এসব চেকে কোন টাকা না থাকায় তা’ ডিজঅনার হয়েছে। কিশোরগঞ্জের প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী প্রতারক মুনসুর আহমেদের খপ্পরে পড়ে বর্তমান আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানায়ও তিনি ইতিপূর্বে জিডি দায়ের করেছিলেন। এর পরেও আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারেননি।
ব্রুনাইয়ে হাতে গোনা কিছু দালালের অসম প্রতিযোগিতায় ভিসা ট্রেডিংয়ের খপ্পরে পড়ে প্রবাসী কর্মীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ব্রুনাইয়ে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র অসম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কিনতে গিয়ে একটি চাহিদাপত্র সাড়ে ৪ হাজার ব্রুনাই ডলারে উঠছে। এতে দালাল চক্রের হাত বদল হয়ে ব্রুনাই গমনেচ্ছু একজন কর্মীকে ব্রুনাই যেতে কম পক্ষে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ খরচ করতে হচ্ছে। ব্রুনাই দারুসসালাম গাদুংস্থ এম এ হোসাইন গ্রুপ এসডিএন বিএইচডি’র পরিচালক আলহাজ দেলাওয়ার হোসাইন গতকাল একথা বলেন। তিনি বলেন, প্রবাসী দালালরা ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানীর ম্যানেজার ও মালিকদের সাথে আঁতাত এবং অসম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভিসার দাম দেদারসে বাড়াচ্ছে। ভারতীয় ও পাকিস্তানের কর্মীদের ভিসা ২২শ’ থেকে ২৫শ’ ব্রুনাই ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার কর্মীরা শুধু বিমানের টিকিট ও ভিসা প্রসেসিং-এর জন্য ৫শ’ থেকে ৬শ’ ব্রুনাই ডলার দিয়ে ব্রুনাইয়ে চাকরি নিয়ে যাচ্ছে। ব্রুনাইয়ে নবনিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার উদ্যোগ নিলে অসম প্রতিযোগিতার ভিসা ট্রেডিং বন্ধ হবে। অসম প্রতিযোগিতার ভিসা ট্রেডিং বন্ধ হলে বাংলাদেশ থেকে একজন কর্মী শুধুমাত্র এক লাখ টাকার অভিবাসন ব্যয়েই ব্রুনাইয়ে চাকরি লাভের সুযোগ পাবে বলে আলহাজ দেলাওয়ার হোসাইন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এতে শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং কর্মীরা প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।