পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে, স্থাপিত হয় মেশিনারিজ। তারপরেও দীর্ঘ ১০ বছরে চালু হয়নি দেশের ৩টি সরকারী হিমাগার। এর কারণ পুরো প্রক্রিয়া ছিল গোঁজামিলের। সিদ্ধান্ত ছিল সবজি সংরক্ষণের। সবজি চাষিরা হিমাগারকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও স্বপ্ন পূরণের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ সুন্দর উদ্যোগটি তখন সর্বমহলে বিশেষক্ষেত্রে কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। দেখা দিয়েছিল বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা অনিয়মের কারণে সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে। এর পেছনে রয়েছে জোড়াতালি দিয়ে নির্মাণ ও পুরনো মেশিনারিজ স্থাপন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিএডিসির একটি প্রকল্পে সবজি সংরক্ষণে যশোর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ২০০৬ সালের মার্চে কাগজপত্র ঠিক রেখে নামকাওয়াস্তে টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারী হিমাগার নির্মিত হয়। অভিযোগ এতে ব্যাপক অর্থ নয় ছয় হয়। এমনকি যে ঠিকাদার কার্যাদেশ পান তিনি সেইসময় ছিলেন প্রভাবশালী ঠিকাদার। যার কারণে কোনরূপ অভিজ্ঞতা ছাড়াই হিমাগারের নির্মাণ কাজ পায় তদবিরের জোরে। শুরুতেই নির্মাণ কাজ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেননি। নির্মাণ কোনরকমে হলেও মেশিনারিজ স্থাপন নিয়ে মহাঘাপলা হয়। এই নিয়ে বিএডিসি ও ঠিকাদারের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয় অসংখ্যবার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বিএডিসির একশ্রেণীর কর্মকর্তা বিশেষ কারণে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। যার কারণে ঠিকাদার অকেজো ও জোড়াতালির মেশিন স্থাপিত হয়েছে। ৩টি সরকারী হিমাগারের একই অবস্থা। যশোরের হিমাগারটি চালু করার চেষ্টা চলেছে দুইদফায়। কিন্তু হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মিটিং-সিটিং চলেছে বহুবার। তদন্তের পর তদন্তও হয়েছে। কোন সুরাহা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখন আর উচ্চবাচ্যও হয় না। অনিয়ম, সরকারী অর্থ লুট, অব্যবস্থা সবকিছুই রীতিমতো হজম হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগে শুধু বিএডিসি উদ্যান বিভাগের মহাপরিচালকের পেনশন স্থগিত রাখা হয়েছে।
উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টির এলাকায় সবজি সংরক্ষণে সরকারী হিমাগার নির্মাণ ছিল একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। খুবই জরুরি ছিল এটি। যশোর শহরতলী ঝুমঝুমপুরে স্থাপিত সরকারী সবজি হিমাগারটির আয়তন ৬৪৮৭ দশমিক ৭৫ বর্গফুট। এখানে ৪টি চেম্বার রাখা হয়। যাতে টাটকা সবজি সংরক্ষণ করা হবে। একইসাথে ফ্রোজেন ফেজিটেবল, ফ্রোজেন ফিস ও ফুডস সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা ছিল। কুমিল্লা ও চট্টগ্রামেও একই আয়তনের ও একই ধরনের হিমাগার নির্মিত হয়। যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৫০ মেট্রিক টন। ৩টি স্থানে একযোগে চালুর নির্দেশনাও ছিল কার্যাদেশে। গতকাল বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের মহাপরিচালকের দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করে কবে সরকারী হিমাগার ৩টি চালু কবে হবে, আদৌ কি হবে না, কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসবের সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে যশোরের উদ্যান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জয়েন্ট ডাইরেক্টর খোরশেদ আলম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সরকারী হিমাগারের বিষয়টি অনেক পুরানো। আমার কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই। তবে তিনি যতটুকু জানেন, বিএডিসির একটি প্রকল্পে যশোরসহ দেশের ৩টি স্থানে সবজি সংরক্ষণে সরকারী হিমাগার নির্মাণ করেন একই ঠিকাদার। মেশিনারিজ স্থাপনের ত্রুটির কারণে হিমাগার ৩টি আজো চালু করা যায়নি। তিনি হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তার মতে, হিমাগার ৩টি চালু করা ছিল খুবই জরুরি।
সূত্রমতে, হিমাগার চালু হলে সবজি চাষিরা লাভবান হবেন। তাদের সবজি সংরক্ষণ করা যাবে। ভরা মৌসুমে অনেক সবজি সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। তাছাড়া তাদের সবজি সংরক্ষণ ও প্রসেসিং করে সরাসরি রফতানী প্রক্রিয়া চালু হতো। সংশ্লিষ্ট বিভাগের যশোর অঞ্চলের এক কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, যশোর, মাগুরা ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উৎপাদিত সবজি বিদেশে রফতানীর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না হিমাগারের অভাবে। সবজি রফতানীর ব্যাপারে যশোরকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয় বরাবরই। সূত্রমতে, যশোরে বারোমাসি সবজি উৎপাদন হয়। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সবজি উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। যশোরে রয়েছে বড় এয়ারপোর্ট। এখানে কক্সবাজার থেকে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের জন্য চিংড়ি পোনা কার্গো বিমানে এসে থাকে। বিদেশের সাথে কার্গো বিমানের লিংক করে দিলে খুব সহজেই যশোরের সবজি বিদেশে সরাসরি রফতানী করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা যাবে। তাতে সবজি চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের বারীনগর ও খাজুরা এলাকায় যেটি সবজিভা-ার এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানে সবজি সংরক্ষণে কোন কোল্ড স্টোরেজ নেই। যশোর ও সানতলায় কোল্ড স্টোরেজ থাকলেও সেখানে আলু ছাড়া অন্য কোন সবজি সংরক্ষণ করা হয় না। ফলে উৎপাদিত সবজি নিয়ে চাষিরা বিপাকে পড়েন প্রতিবছর। সবজির বাম্পার ফলনের সুফল কখনোই উৎপাদক চাষি ও ভোক্তা পাননি। সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বরাবরই ফল ভোগ করেছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তৎকালীন সরকার এসব বিষয় বিবেচনায় এনে বিএডিসির সবজি সংরক্ষণ ও রফতানীর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জরুরিভাবে সরকারি হিমাগার ৩টি চালুর উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা জোরালো দাবি জানিয়েছেন। শুধু সবজি চাষিরা নয়, সরকারী হিমাগারে মৎস্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় মৎস্যচাষী ও ব্যবসায়ীরাও অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। কিন্তু শুধুমাত্র চালুর অভাবে কারোরই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।