পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তাসহ সব রাস্তার পাশে বাস রাখা থাকে। আবার শহরে চলাচলরত বাসগুলোও যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। ঢাকার চারটি বাস টার্মিনালের বাইরে থেকে শত শত দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। নামী-দামী কোনো বাসই এখন আর টার্মিনাল থেকে ছাড়ে না। ভাবখানা এমন- যেনো গোটা শহরই বাসস্ট্যান্ড। বাসের এই বিশৃঙ্খলা নগরীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে ধলপুর মাঠ পর্যন্ত রাস্তার অনেকটাই দখল করে আছে দূরপাল্লার বাসগুলো। এর মধ্যে হিমাচল বাস দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় রাখা থাকে রাস্তা দখল করে। বাসগুলোর কারণে এই রাস্তায় দিনে রাতে যানজট লেগে থাকে। সন্ধ্যার পর যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম কেতে হয়। অথচ এখান থেকে মাত্র কয়েক’শ গজ দূরেই সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। টার্মিনালের ভেতরে শত শত বাস রাখার জায়গা খালি পড়ে থাকে। টার্মিনালের দক্ষিণে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো দখল করে রাখে বিভিন্ন কোম্পানির দূরপাল্লার বাস। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে শত শত গাড়ি রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে আছে বহুদিন ধরে। এসব গাড়ির কারণে ফ্লাইওভারের নিচে কোনো যানবাহনই স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। সায়েদাবাদ টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, টার্মিনালের বাইরে রাস্তার উপর যাতে কোনো গাড়ি না রাখা হয় সেজন্য আমরা বহু মিটিং সিটিং করেছি। অনেক চেষ্টা করেছি। সিটি করপোরেশনকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের পরিবেশ এখন অনেক ভালো। টার্মিনালের বাইরে রাস্তার ফুটপাতে কোনো দোকান নেই, নেই যানজট। তারপরও টার্মিনালের ভেতর থেকে দূরপাল্লার নামী-দামী কোনো বাস ছাড়ে না। সব বাস ছাড়ে কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল ও শ্যামলী এলাকা থেকে। এসব বাসও রাখা হয় রাস্তার উপরেই। গাবতলী মাজার রোড থেকে শাহআলী মাজার পর্যন্ত রাস্তার উপর রাখা হয় গাড়ি। ফুলবাড়ীয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জের বাস ছাড়লেও বেশির ভাগ বাস রাখা হয় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নীচে। যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ হয়ে কাপ্তানবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নীচে বিস্তর এলাকা অঘোষিত বাস স্ট্যান্ড হিসেবে চালু আছে দীর্ঘদিন ধরে। লালবাগ থেকে আজিমপুর পর্যন্ত রাস্তার উপরও রাখা থাকে শত শত বাস, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। কমলাপুর আইডিয়াল স্কুলের পূর্বে থেকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল পর্যন্ত বড় বাসগুলো রাখা হয় রাস্তার উপরেই। যুগ যুগ ধরে বাসগুলো রাস্তার উপর রাখা হলেও দেখার কেউ নেই। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে পল্লবীর রাস্তারও একই অবস্থা। ফায়ার সার্ভিসের সামনে থেকে মিরপুর স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার বেশির ভাগ জায়গা দখল করে রাখে মিরপুর রুটের বাস ও মিনিবাস। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত একইভাবে বাস রাখা হয় ফোর লেনের উপরেই। একই মহাসড়কে রায়েরবাগ থেকে মাতুয়াইল পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে ফোর লেনের এক লেন দখর করে রাখে বড় বড় কাভার্ড ভ্যান। যত্রাবাড়ী থানা পুলিশের দাবি নারায়ণগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশ কাভার্ড ভ্যানগুলোকে অবৈধভাবে ঢাকায় প্রবেশ করার সুযোগ করে দিলে ভ্যানগুলো ফোর লেনের উপরে রাখা হয়। গাবতলী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের রাস্তায় একইভাবে ট্রাক রাখা হয় রাস্তা দখল করে।
শুধু অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে গাড়ি রাখা হয় ঢাকা শহরে বাস স্টপেজ বলে কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। বাসগুলো যেখানে সুযোগ পায় সেখানে যাত্রী নামায়, একইভাবে যাত্রী তোলে। ট্রাফিক আইনে এগুলো অপরাধ হলেও আইনের শাসনের অভাবে তা কার্যকর হচ্ছে না। এতে করে যানজটের ভয়াবহতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। শুধু গাড়ি নয়, ঢাকা শহরে রাস্তা দখল করে দোকান, প্রতিষ্ঠান, দোকানের মালামাল রাখা অনেকটাই স্বাভাবিক নিয়ম। পুরান ঢাকার প্রধান সড়ক নর্থ-সাউথ রোডের অর্ধেকটা অনেক আগেই দখল করে নিয়েছে সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। সিদ্দিকবাজার থেকে ইংলিশ রোডের মোড় পর্যন্ত সড়কে রড-সিমেন্ট, আসবাবপত্রের দোকানের মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে দেখা যায়। সেখানে মাত্র তিন-চার হাত সড়ক ফাঁকা রেখে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য পাশেই পার্কিং করা থাকে সারি সারি মিনি ট্রাক, ঠেলাগাড়ি। কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে মুগদা-বৌদ্ধমন্দির গেট পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যস্ততম বিশ্বরোডে দুই সারিতে গাড়ি রাখা হয়। বিভিন্ন কাউন্টার সার্ভিস বাস, কোচ, ট্রাক, লং ট্রেইলারসহ পণ্যবাহী গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে পার্কিং করে রাখায় ওই চার কিলোমিটার এলাকা দিনভর ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে। সেখানে একটা রিকসা চলাচলও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। নিউ মার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকার ফুটপাত আর ফুটওভারব্রিজ জুড়ে রয়েছে হকারদের আধিপত্য। দোকান বসিয়ে পুরো ব্রিজকেই বাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। গাউসিয়া মার্কেটের সামনে রাস্তা সারাক্ষণই ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। রিকশাগুলো দাঁড়িয়ে থাকে এলোমেলোভাবে। বঙ্গবাজারের সামনে থেকে শুরু করে গুলিস্তান-কাপ্তানবাজর পর্যন্ত রাস্তাটি ডাস্টবিন, বাজার, নাকি টার্মিনাল তা বোঝার সাধ্য নেই।
ভুক্তভোগীদের মতে, রাজধানী শহরে এতো জঞ্জাল কবে দূর হবে তা কেউ জানে না। এসব জঞ্জাল দূর করার জন্য যেমন আইনের শাসন দরকার, তেমনি দরকার সিটি করপোরেশন, সেবাপ্রতিষ্ঠান, পুলিশসহ বাস মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের আন্তরিকতা। তা না হলে বসবাসের অযোগ্য ঢাকা ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হতে খুব বেশি দিন লাগবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।