পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেছেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের কারও চাকরি যাবে না। কারও সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকলে কিংবা ব্যাংকের অর্থ রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে গতকাল ব্যাংকটির ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনে তিনি সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে শাখা ম্যানেজারদের নির্দেশ দেন।
সচিবালয়ে সাম্প্রতিক রদবদল বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। যারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবে তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আরস্তু খান জানান, ‘আই স্যাল অ্যাসিউর দেম। আমরা উইচ হানটিং করে কারো চাকরি খাবো না। কারণ ব্যাংকটি ভালো করছে। কর্মকর্তারাও ইফিসিয়েন্টলি কাজ করছেন। যদি পলিটিক্যাল কোনো সম্পৃক্ততা থাকে বা সাবভারসিভ (নাশকতামূলক) কোনো কাজে জড়িত হয় তাহলে আমরা তাকে কোনোভাবেই অ্যালাউ করবো না।’ ‘তবে আমি উইচ হান্টিং পছন্দ করি না। কারও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ছাড় নয়। যদি দেখা যায় পলিটিক্যাল অ্যাসপিরেশন আছে। আমরা এটা চাই না। আমরা প্রফেশনাল লোক চাই। এখানে প্রফেশনাল কাজ হবে। ইউ হ্যাভ টু বি এ প্রফেশনাল। ইউ আর ডুইং প্রফেশনাল জব। সবাই প্রফেশনালি কাজ করবে’Ñবলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকটির নতুন এই চেয়ারম্যান বলেন, এখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়নি। এটা চেইঞ্জ অব গার্ডস। জানুয়ারি আসলে ব্যাংকে পরিবর্তন হয়। খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি তো ভোট দেন। কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে ভোট দেয়। কিন্তু আমরা চাই না এর রিফলেকশন ব্যাংকে আসুক। ধরুন, কেউ যদি টাকা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অন্য জায়গায় পাঠায় সেটা তো ঠিক হবে না।”
তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে আরস্তু খান বলেন, ‘নো ফিয়ার টু ওয়ার্ক ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি কোয়ালিটি কাজ করছে। তাদের অনেস্টি নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই। আমার মনে হয় কারো নেই। ইট হ্যাজ গুড কোয়ালিটি। আমরা সামনের বছর আরও ভালো টার্গেট দিয়েছি। আশা করছি আরও ভালো হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো শঙ্কা নেই। ইসলামী ব্যাংক সলিডলি ইউনাইটেড। সবাইকে নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকের অগ্রগতি থমকে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে শেয়ার মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার মূল্য বেড়েছে।
আরাস্তু খান বলেন, অর্থমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন ব্যাংকটির অবস্থা কী। আমি বলেছি ব্যাংকটি খুবই ভালো চলছে। এর ফিন্যান্সিয়াল অবস্থা খুবই ভালো। ২ হাজার ৩ কোটি টাকা গত বছরের প্রফিট। তাদের ২৭ শতাংশ রেমিট্যান্স। নন-পারফরম্যান্স লোন সাড়ে ৩ শতাংশ। ডিপোজিট টু ইনভেস্টমেন্ট রেশিও ৮৮ শতাংশ। ভেরি ইমপ্রেসিভ নাম্বার। খুবই ভালো অবস্থা ব্যাংকের।
এদিকে গতকাল ইসলামী ব্যাংকের দুই দিনব্যাপী ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন শুরু হয়েছে। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ব্যাংকের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস-এর চেয়ারম্যান আরাস্তু খান প্রধান অতিথি হিসেবে এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মাবুদ, পিপিএম, পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, শামীম মোহাম্মদ আফজাল, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. কাজী শহিদুল আলম, মো. সাইফুল ইসলাম, এফসিএ, এফসিএমএ, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. মিজানুর রহমান ও প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল করিম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিঞার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. মাহবুব-উল-আলম। ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জোন প্রধান ও শাখা ব্যবস্থাপকগণ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বেশি। একই সময়ে ৮ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগসহ মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ। ২০১৬ সালে ইসলামী ব্যাংক আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাণিজ্য করেছে যথাক্রমে ৩৪ হাজার কোটি টাকা, ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ২৮ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সকল শক্তি ও সামর্থ্যকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে দেশের সকল মানুষের জন্য এ ব্যাংকের সেবার দরজা উন্মুক্ত থাকবে। ইসলামী ব্যাংকের মৌলিক দর্শন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোন পরিবর্তন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাংক তার সকল কার্যক্রম শরী’আহ্’র নীতিমালার আলোকে পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে। তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন করা হবে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষে নারী অফিসার নিয়োগ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য ব্যাংকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে তিনি শাখা ম্যানেজারদের প্রতি নির্দেশনা দেন।
প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিচালনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ব্যাংক আগামীতে জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাপক বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতি সুদৃঢ় করণসহ প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচিকে গরীবি হঠাও আন্দোলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আরো পাঁচ লাখ নারী উদ্যোক্তা তৈরি করবে ইসলামী ব্যাংক।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংক। নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এ ব্যাংক। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যাংকের মানসম্মত সেবা আরো বেশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তারা শাখা ম্যানেজারদের প্রতি আহবান জানান। ২০১৬ সালের সার্বিক অর্জনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ২০১৭ সালে পরিচালনা মুনাফাসহ সকল প্যারামিটারে আরো উন্নতি করার পরামর্শ দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।