পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। আগামী নির্বাচনে ইভিএম চালু করা ঠিক হবে না। কেননা ইভিএম অযোগ্য ও অদক্ষ লোকদের কাছে গেলে এর অপব্যবহার হতে পারে। তাই আরও ভেবে-চিন্তে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে জানান সুজনের নেতৃবৃন্দ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে সুজন নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের। তবে এই নিয়োগ হতে হবে উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সংবিধান রচনার ৪৬ বছর পরেও এমন একটি আইন কোনো সরকারই প্রণয়ন করেনি, যার ফলে আমাদের সংবিধান বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই সংবিধান নির্দেশিত এ আইনটি প্রণয়ন করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে, কারণ আইন প্রণয়ন না করে আবারও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে এবং জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, যেহেতু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে আগামী সাধারণ নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হবে বলেই মনে হয়, তাই যথাযথ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও মেরুদ- সম্পন্ন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা আজ অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন, ২০১১ শিরোনামে একটি আইনের খসড়া রেখে গিয়েছিল, যা নিয়ে বর্তমান রকিবউদ্দিন কমিশন কোনোরূপ পদক্ষেপই নেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনোরূপ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইনের অনুপস্থিতিতে আমাদের দেশে অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের সরাসরি নিয়োগে দিতেন। প্রসঙ্গত, আমাদের সংবিধানের ৪৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করতে হয়। তাই আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনসহ অন্যসব নিয়োগ কার্যত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই হয়ে থাকে। ড. মজুমদার বলেন, আমরা মনে করি প্রস্তাবিত আইনে মোটা দাগে চারটি বিধান থাকা আবশ্যক। প্রথম বিধানটি হওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত। কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব হওয়া উচিত সততা, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে সকল নির্বাচন পরিচালনা করা। দ্বিতীয় বিধানটি হওয়া উচিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মানদ- নির্ধারণ।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা বলেন, সংবিধানের বিধি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে এখনই আইন করার পক্ষে। তিনি বলেন, এখন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ডায়ালগ (গোলটেবিল আলোচনা) করার সময় নেই। একটা (আইন) করতে হবে, পরে দেখা যাবে সেখানে কী নেই। আগে একটা আসুক। তার পর সময় হবে... দেখা যাবে। হুদা বলেন, আমরা যে খসড়াটি প্রণয়ন করেছিলাম, সে সময়ে যেসকল রাজনৈতিক দলের সাথে আমরা আলাপ করেছিলাম তারা সকলেই এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলেন। আমরা চিন্তাও করিনি, পরবর্তীতে রাজনৈতিক বাস্তবতা যে এরকম হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যে সংসদে থাকবে না তা আমরা ভাবিও নাই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তাদের পরিচয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের লোক হয়ে থাকে বা রাজনৈতিক দল থেকে সংসদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে তাহলে তাঁদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিৎ হবে না। নির্বাচন কমিশনাররা যদি সৎ ও দক্ষ না হন তাহলে তারা নির্বাচন কমিশনকে কীভাবে সঠিক পথে পরিচালনা করবেন? প্রেসিডেন্ট যদি একটি ভালো নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারেন তাহলে জাতি তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমাদের সংবিধানে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিষয়ে আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। প্রেসিডেন্ট যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেছেন, তাদের মধ্যে বিএনপি ছাড়া সকলেই আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। ড. হুদার নেতৃত্বে গঠিত কমিশন এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, সেই আইনকে কাজে লাগানো হয়নি এবং আজ অবধি এ সংক্রান্ত কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা যতই সার্চ কমিটিকে নিরপেক্ষ করি না কেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারে, তাহলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুসহ নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মাঝে সমঝোতা হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি যে আলোচনা করলেন তা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কী পরামর্শ দিলেন তা নিজে থেকে যদি সকলকে জানাতেন তা হলে আমরা অত্যন্ত উপকৃত হতাম। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম চালু করা ঠিক হবে না। কেননা ইভিএম অযোগ্য ও অদক্ষ লোকদের কাছে গেলে এর অপব্যবহার হতে পারে। তাই আরও ভেবে-চিন্তে এব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্টেক হোল্ডার সরকার এবং রাজনৈতিক দল। এছাড়াও নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনই মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করে থাকে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন স্তরের জনগণকে নিয়ে সার্চ কমিটিটা বড় করা প্রয়োজন। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য কোনো কমিশনারকেও সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি তিনজন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, তাহলে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে আইন প্রণয়নের কথা বলে আসছি। আশার কথা যে, প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা করেছে।’ তিনি বলেন, জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন কমিশন কেমন হবে তার ওপর। এই নির্বাচন কমিশন যদি গ্রহণযোগ্য ও দক্ষ না হয় তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে এবং যা আমাদের জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে।
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব ড. এ. টি. এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।