Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আলোচনায় আগ্রহী মিয়ানমার

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আশাবাদী বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে মিয়ানমারেরও আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তাই নিরাপত্তা সংলাপ ও সহযোগিতা এবং সীমান্তে লিয়াজোঁ অফিস খুলতে সমঝোতা চুক্তিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।
এছাড়া অনুপ্রবেশকারী নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত এবং গত অক্টোবরের পর থেকে নতুন আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ থিনের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ  কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সু চির দূতের কাছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ এবং আনুমানিক তিন লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকের দীর্ঘকাল ধরে অবৈধ অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এলাকা বিশেষত কক্সবাজার অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয়। এ বিষয়ে সমন্বিত ও সামগ্রিক কর্মপন্থা নির্ধারণের প্রস্তাব আমরা করি। দুই পক্ষই এ বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনা করতে সম্মত হয়। তবে অং সান সু চির বিশেষ দূতের ঢাকা সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হলে তারা জাতীয়তা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ দুই দেশকে একত্রে মিলেই করতে হবে বলে সম্মত হওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বেশি কিছু করার নেই। সেখানে গেলে সঙ্কট আরো  বেড়ে যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূত সেদেশের নতুন সরকারের বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও সহযোগিতা গভীর করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য স্টেট কাউন্সিলর সু চি’র বিশেষ আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর ও সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ দূত গত বছরের ৯ অক্টোবর সীমান্ত ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশের ভূমিকা ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। মিয়ানমারের গণমাধ্যমে ৯ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিতপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে বিশেষ দূত উল্লেখ করেন, মিয়ানমার সরকার কখনো বাংলাদেশকে দোষারোপ করেনি।
মিয়ানমারের নতুন সরকার রাখাইন রাজ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে ‘কফি আনান কমিশন’ গঠনসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান। বৈঠকে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তাছাড়া জটিল বিষয়গুলোতে ইতিবাচক ও আন্তরিক আলোচনার আহ্বান জানানো হয়।
মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ রাখাইন রাজ্যে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানায় যাতে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমারের নাগরিকরা পূর্ণ নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তাসহ দ্রুত নিজ আবাসে ফিরে যেতে পারেন। রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর গণহারে বাংলাদেশে আশ্রয়ের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও মূল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ  নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে অনুরোধ জানানো হয়, যেন এ সমস্যা বারবার সৃষ্টি না হয়।
ফিরিয়ে নেয়ার এই প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, আগ্রহ না থাকলে তিনি আসতেন না। যেহেতু আন্তরিকতা  দেখছি, আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এগিযে যাব। যেভাবে অগ্রসর হওয়া দরকার আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার প্রস্তাব করে। বিশেষ দূত প্রস্তাবটি তার দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এছাড়া বৈঠকে ধর্মীয় ও জাতিগত উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সহযোগিতার আহ্বানে বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। রাখাইন রাজ্যের ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সশস্ত্র চরমপন্থা বিকাশের আশঙ্কা উল্লেখ করে মিয়ানমারের বিশেষ দূত এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ থিন অং সান সু চি’র বিশেষ দূত হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গত বুধবার সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অং সান সু চি’র একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। ওই চিঠিতে সু চি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। এর আগে বুধবার কিউ থিন পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন। এরপর তিনি সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ