পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাবিবুর রহমান : গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প বাতিল করে সকল প্রকল্পে টিআর ও কাবিখা’র বাস্তবায়ন চান সরকার ও বিরোধী দলীয় এমপিরা। এ প্রকল্প পরিবর্তনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে চিঠি দিয়েছে একাধিক সরকার দলীয় এমপি ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা।
প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের এ ধরনের দুস্থবান্ধব কর্মসূচির বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয় বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: আফছারুল আমীন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের কর্মসূচি শুরু করে সরকার। দুস্থ জনগণকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কর্মসূচি দুটি বদলে দেয়া হচ্ছে। টিআর কাবিখায় বরাদ্দকৃত অর্ধেক অর্থ সোলার প্যানেল ও ব্যায়োগ্যাস স্থাপনের কাজে ব্যয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাকি টাকায় হবে অবকাঠামো উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে প্রকল্প বন্ধ থাকার পরও নির্দেশিকা জারি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত ৫ জানুয়ারি যুগ্মসচিব মো: ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এ চিঠি সকল জেলা প্রশাসকদের দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, টিআর ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কাজে ইটকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হচ্ছে। চলমান কার্যক্রমে মূল্য পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ইটকলে সাথে আলোচনা করে আগের চেয়ে বর্তমান প্রকল্পের মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে নির্দেশিকা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সংরক্ষিত থাকবে। বিনামূল্যে স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিস প্রদান করবে। ৩ বছর মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হয়েছে প্রতীয়মান হলে জামানতের সম্পূর্ণ টাকা প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেয়া হবে। প্রকল্প যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত না হলে অথবা সেবা সন্তোষজনক বিবেচিত না হলে জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত হবে। অর্থবছর শেষে বাস্তবায়িত সকল প্রকল্পের সমাপ্তির প্রতিবেদন ইটকল সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক-এর প্রতিস্বাক্ষরে আগামী ১৫ জুলাই মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
কাবিখা’র অর্থ যাচ্ছে ফের সোলার প্যানেলে। চলতি অর্থবছরে কাবিটার মোট বরাদ্দের ৩৬১ কোটি টাকা থেকে সোলার প্যানেল ও বায়োগ্যাস খাতে যাচ্ছে ১৮১ কোটি টাকা। গত বছর কাবিটার ৩৫০ কোটি টাকা থেকে সোলার খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা। নি¤œমানের ও নামসর্বস্ব সোলার প্যানেল দিয়ে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট এ বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এবারও একই ধরনের অনিয়মের আশংকা করছেন তারা।
সরকার দলীয় এমপিদের অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রকল্প- কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) সোলার খাতে স্থানান্তর করে আবারও লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে সরকার আবারও এ খাতে বরাদ্দ দিয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। এর পেছনের রহস্য পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে অভিমত তাদের। গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে গরীব মানুষের জন্য বরাদ্দের অর্থ থেকে নয়। এ জন্য পৃথক প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উল্লিখিত দুই অর্থবছরে সোলারের বরাদ্দের ৩৩১ কোটি টাকার অধিকাংশই গচ্চা যেতে পারে বলে আশংকা এমপিদের। এর পর গত ৪ জানুয়ারী প্রতিটি জেলায় দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে এ ধরনের দুস্থবান্ধব কর্মসূচির জন্য বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন সংসদ সদস্যরা। সরকার দলীয এমপিদের মতে, গ্রামের গরিব মানুষগুলোকে বিরোধী দলের হাতে তুলে দেয়ার জন্য, গ্রামীণ উন্নয়নকে নষ্ট করার জন্য এবং গ্রামীণ জনপদকে অস্থিতিশীল করতে এসব করা হচ্ছে। সোলার প্যানেল বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের নামে অতি দরিদ্র জনগণের অর্থ লোপাটের আয়োজনে সহায়তা করেছে ইটকল। তা আবার বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাকে বলেন, প্রতিদিন অনেক এমপি অভিযোগ নিয়ে আসছেন তারা সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প বাতিলে দাবি জানিয়েছে।
এদিকে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: আফছারুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ ধরনের দুস্থবান্ধব কর্মসূচির বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের নির্দেশনা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি বলেন, অনেক এলাকায় সোলার প্রকল্পের প্রয়োজন হয় না। সে টাকা কি করবে তা জানানো হচ্ছে না। সাবেক মুখ্য সচিব নিজের একক ক্ষমতার বলে এটি করেছে। যা টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের নীতিমালার পরিপন্থী। এ প্রকল্প বাতিল করে দিনমজুর ও গরীব অসহায়দের কর্মসংস্থান প্রকল্প করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমার এলাকায় ইটকলে সহযোগি প্রতিষ্ঠান যেগুলো সোলার প্লান্ট স্থাপন করেছে সে গুলো নি¤œমানের এবং ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান বলেন, আমার এলাকা এ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সে কারণে আমি এ সোলার প্রকল্পের বাতিল করেতে মন্ত্রীকে বলেছি এবং একটি চিঠি দিয়েছি। তিনি বলেন, আমার এলাকায় সোলার প্লান্ট করতে হবে না।
কুড়িগ্রাম-১ আসনের এমপি এ কে এম মোস্তাফিজার রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আসলে টিআর কাবিখা প্রকল্প হচ্ছে গ্রামগঞ্জে কাজ না থাকা মানুষ গুেেলার কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন প্রকল্প। তা না করে সরকার সোলার প্ল্যান্ট প্রকল্প চালু করা ঠিক হয়নি। এটি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ থেকে করতে পারে। বিষয়টি বলতি সংসদে উত্থাপন করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেখানে টিআর ও কাবিখার মাধ্যমে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস দিচ্ছে। আর আলাদা প্রজেক্ট নিলে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি তো হতেই পারে। এটি নতুন একটি কনসেপ্ট। সে হিসেবে কিছু অনিয়মও থাকতে পারে। পরে তা ঠিক হয়ে যাবে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আসলে এ প্রকল্পটি নতুন। মন্ত্রী, এমপি ও চেয়ারম্যান মেম্বররা প্রতিদিন প্রকল্পটি বাতিলের দাবি করছে। তার পরও আমরা গত বছর সোলার প্ল্যান্টে যে পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে তার চেয়ে ৪০ শতাংশ এবার কমানো হয়েছে। এখন বিধিমালাটি সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়েকে আমরা জানিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।