Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের ছেলেরা ট্রাস্টের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করবেন

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউ ইয়র্ক টাইমস : যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি তার বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য পরিত্যাগ করবেন না। তার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা বুধবার বলেন, ট্রাম্প তার ব্যবসা পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব তার দুই পুত্র ও দীর্ঘদিনের এক সহযোগীর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, তিনি তার হোটেলগুলোতে বিদেশী সরকারী অর্থ পরিশোধের সকল লাভ যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দান করবেন। তারা এ ব্যবস্থাকে সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত বিষয়ক উদ্বেগের জবাবে গৃহীত স্বেচ্ছামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেন যা ট্রাম্পকে দেশ পরিচালনায় মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে। তার আইন উপদেষ্টারা বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বিদেশী অংশীদারদের সাথে নতুন কোনো চুক্তি করা থেকে বিরত থাকবে। এটা হচ্ছে ট্রাম্পের আগের দাবি থেকে সরে আসা যাতে তিনি বলেছিলেন যে তার কোম্পানি তার প্রেসিডেন্সির মেয়াদে কোনো ধরনের নতুন চুক্তি করবে না। পরিবর্তে ট্রাম্প এন্টারপ্রাইজকে আগামী দিনগুলোতে নতুন প্রেসিডেন্ট মনোনীত নৈতিকতা উপদেষ্টার সাথে যে কোনো নতুন লেনদেন পরিষ্কার করতে হবে। সেই নৈতিকতা উপদেষ্টা একটি মান ব্যবহার করে সম্ভাব্য বিরোধের জন্য সেগুলো পরীক্ষা করবেন যে বিষয়ে তার উপদেষ্টারা বলেন যে মতৈক্য হয়নি।
ট্রাম্পের উপদেষ্টারা বুধবার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যে সব ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে হবু প্রেসিডেন্ট কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে বিরোধ এড়াবেন কিনা বা কিভাবে এড়াবেন সে বিষয়ে কয়েক ডজন প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
তারা দু’দলের নৈতিকতা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ লাভ করতে পারেননি যারা বলেছেন যে ট্রাম্পের জন্য সত্যিই সত্যিই সম্ভাব্য বিরোধ নিরসনের একমাত্র পথ হচ্ছে তার সকল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও অন্যান্য ব্যবসাও একটি ট্রাস্টের কাছে ন্যস্ত করা যা সকল ব্যবসা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করবে। এ ব্যাখ্যা নতুন সব প্রশ্নও তুলেছে যে ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন তখনকার চেয়ে বেশি পরিমাণ আর্থিক সম্পদ নিয়ে তিনি ত্যাগ করতে পারবেন কিনা।
ট্রাম্পের কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার ট্রাম্প টাওয়ারে অনুষ্ঠিতব্য নয়া প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনের বিশদ আগাম তথ্য দেন। প্রায় ছয় মাসের মধ্যে এটি তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির উপর ট্রাম্পের প্রভাব প্রশ্ন তুলেছে যে আমেরিকার নীতি তার মূল লক্ষ্যকে প্রভাবিত করবে কিনা। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি ব্যাংকের আইন তদারক করবেন যেগুলোর কয়েকটি তার কোম্পানিকে ঋণ দেয় এবং তার সাথে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের উপর্যুপরি যোগাযোগ হবে যাদের কেউ কেউ সেই দেশ পরিচালনা করবেন যে দেশে তিনি ব্যবসা করেন।
বুধবার যে সব পরিকল্পনা বর্ণনা করা হয়েছে নৈতিকতা বিশেষজ্ঞরা তাতে গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এতে স্বার্থের বিরোধ নিয়ে বিতর্ক একপাশে সরিয়ে রাখার ট্রাম্পের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ওবামা প্রশাসনের আমলে হোয়াইট হাউসের এথিকস উপদেষ্টা নরম্যান আইজেন বলেন, তিনি যেদিন থেকে দায়িত্ব নেবেন সেদিন থেকে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবেন।  তিনি ট্রাম্পকে তার সম্পত্তি বিক্রি করা অথবা একটি ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করতে বলেন। তিনি বলেন, এ হচ্ছে কেলেংকারি ও দুর্নীতিকে আমন্ত্রণ করা। বিদেশী অর্থ ঐসব ফাঁক দিয়ে প্রবাহিত হতে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের আইন উপদেষ্টারা সে সকালের ব্রিফিংয়ে বলেন যে এ ধরনের পদক্ষেপ একবারেই অসম্ভব যার কারণ তারা পুরো ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। তারা এটা স্পষ্ট করে বলেন, তাদের ধারণা যে ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেগুলো আইন মোতাবেক নয়। তারা বলেন, তিনি কয়েকমাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও কেন্দ্রীয় স্বার্থ-বিরোধী-বিরোধ বিধি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি।
এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপে তারা এ ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন যে তিনি সংবিধানের ভাতাদি সুবিধা বিধি লংঘন করবেন যা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তাদের বিদেশী সরকারদের কাছ থেকে অর্থ বা উপহার নেয়া নিষিদ্ধ করেছে।
ট্রাম্পের আইনজীবী টিম ব্রিফিংয়ে বলে, টিম বিশ^াস করে না যে এ বিধি, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যার পরীক্ষার ঘটনা বিরল, সুষ্ঠু মূল্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন প্রচলিত হারের ভিত্তিতে হোটেল বিল বা গলফ কোর্স ফি প্রদান।  
এ যুক্তিকে ট্রাম্পের আইনি টিম কর্তৃক তিনি সাংবিধানিক বিধি লংঘন করছেন কিনা সে ব্যাপারটি পরিহার অথবা ন্যূনতম পেেক্ষ সীমিত করার উদ্যোগ বলে মনে হয়। তবে সম্ভাব্য বিতর্ক রোধের চেষ্টায় তার উপদেষ্টারা বলেন, ট্রাম্প বিদেশী উৎসের সকল লাভ দান করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ট্রাম্প এ ধরনের অনুদানের মাঝেধ্যেই প্রকাশ্য হিসাব দেবেন কিনা সে ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নেননি।
আরভিনের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’র ডিন আরউইন শেমারিনস্কি বলেন, ট্রাম্পের হোটেলগুলোতে বিদেশী সরকারদের অর্থপ্রদান থেকে উদ্ভূত লাভ হস্তান্তরের পরিকল্পনা সাংবিধানিক সমস্যা নির্মূল করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
শেমারিনস্কি বলেন, যেই মাত্র তিনি অর্থ পাবেন তিনি লাভবান হবেন , এমনকি তিনি যদি পরে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেনও। তার অর্থ হবে তিনি সংবিধানের বিধি লংঘন করেছেন।
ট্রাম্পের আইনি টিম তাদের ভাষায় ‘নৈতিকতা উপদেষ্টা’ হিসেবে তাদের পরিকল্পনার নাম ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে বিশদ কিছু জানায়নি যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো মূল্যায়ন করবে।
তার আইনি টিম বলেছে, এ নৈতিকতা উপদেষ্টা টিম নির্বাচনের জন্য সাক্ষাতকার গ্রহণ চলছে। একটি মান নির্ধারণ করা হচ্ছে নতুন চুক্তি বা অন্যান্য বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত মূল্যায়নে ব্যবহৃত হবে। তার আইন উপদেষ্টারা বলেন, তবে  এর লক্ষ্য হচ্ছে স্বার্থের বিরোধ সৃষ্টি করে এমন লেনদেন পরিহারের চেষ্টা করা।
ট্রাম্পের আইনি টিম একটি স্বতন্ত্র ট্রাস্টের কাছে তার সকল সম্পদ হস্তান্তরের ফলে সম্ভাব্য কোন কর প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করেনি। তারা তাৎক্ষণিকভাবে এও দেখেননি যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার তথাকথিত সনদপত্র চাওয়ার চেষ্টা করবেন কিনা যার লক্ষ্য হচ্ছে এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে প্রদেয় কর তৎক্ষণাৎ পরিশোধ না করে বেসরকারী নাগরিকদের সরকারে প্রবেশের অনুমতি দেয়া।
এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি যেমন বলা হয়নি ট্রাস্টের কারা লাভবান হবে অথবা ট্রাস্টটি অপ্রত্যাহারযোগ্য হবে কিনা অর্থাৎ শুধু ট্রাস্টের সুবিধাভোগীরাই শুধু তা বাতিল বা আধুনিকায়ন করতে পারবে।
ট্রাম্পের জামাতা জেয়ার্ড কুশনার প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে হোয়াইট হাউসে একটি ভূমিকা গ্রহণের পরিকল্পনা করেছেন। সোমবার ৩৬ বছর বয়স্ক রিয়েল স্টেট নির্বাহী কুশনারের একজন আইনজীবী বলেন, তিনি তার কিছু সম্পদ বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন যার বিবরণ ও মূল্য জানা নেই যে ট্রাস্টটি পরিচালনা করেন তার মা সেরিল। কুশনারের ক্ষেত্রে তার মা ও ভাইয়েরা হচ্ছে সুবিধাভোগী। প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে যে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি ঠিক কতটা অর্থবহ হবে।
ট্রাম্পের সহযোগীরা বলেন, তারা মনে করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প কুশনারের মত একই নৈতিকতার প্রকাশ ও স্বার্থ বিরোধ দ্বারা আবদ্ধ নন।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ