পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে : ঢাকার সাভারে র্যাবের বন্দুকযুদ্ধে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘গাংচিল’ বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন আনার নিহত হয়েছে। এসময় র্যাব তার এক সহযোগীকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে অস্ত্র-গুলি।
মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের মেলারটেক এলাকার মৃত লিয়াকত আলীর তিন তলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আনোয়ার হোসেন আনার সাভারের আমিনবাজারের দুর্ধর্ষ ‘গাংচিল’ বাহিনীর প্রধান। সে দুই র্যাব সদস্য হত্যা, পুলিশ হত্যাসহ একাধিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল। তার বিরুদ্ধে আমিনবাজার, কাউন্দিয়া ও এর আশপাশ এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় চিরকুট পাঠিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব-৩ এর মেজর মেহেদি হাসান জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মেলারটেক এলাকার ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তখন র্যাবকে লক্ষ্য করলে ওই বাড়ি থেকে গুলি ছোড়া হলে র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে। তখন র্যাবের গুলিতে আহত গাংচিল বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন আনারকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তল ও ১৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে নিহতের এক সহযোগীকে। তাকে জিজ্ঞাসাদ করা হচ্ছে।
কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান খান শান্ত জানান, মেলারটেক এলাকার মৃত লিয়াকত আলীর তিন তলা বাড়িতে রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে অভিযান চালায় র্যাব-৩ সদস্যরা। তখন পুলিশও উপস্থিত ছিল। র্যাবের বন্ধুকযুদ্ধে অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়। তার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। তবে নিহত যুবক তার এলাকার বাসিন্দা নয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, র্যাব বাড়িওয়াল ছেলে টুটুল (২৮)কে আটক করে নিয়ে গেছে। টুটুলের সাথেই ওই বাড়িতে থাকত নিহত যুবক।
কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (৮নং ওয়ার্ড) আমিনুল ইসলাম মাসুম জানান, তিন তলা বাড়ির একটি কক্ষে অজ্ঞাত ওই যুবক র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এসময় র্যাব ঘটনাস্থল থেকে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করে। র্যাব এসময় ওই বাড়িটির সবগুলো কক্ষ তল্লাশি করে। পরে নিহত ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
বাড়ির মালিক মৃত লিয়াকত আলীর স্ত্রী মিনু বেগম জানান, বন্দুকযুদ্ধের সময় তাকে তার ছেলে টুটুল, মেয়ে রুনা ও ছেলের স্ত্রী রোহানাকে একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখে র্যাব। এসময় র্যাব সদস্যরা তাদেরকে মারধর করে তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করে নেয়। আটক করে নিয়ে যায় ছেলে টুটুলকে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে মিরপুর এলাকার সন্ত্রাসী মামুনুর রশীদ মামুন ও আমিনবাজারের ট্রাক ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন আনার গাংচিল বাহিনী গঠন করে। প্রথমদিকে দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ থেকে ১৫ জন থাকলেও পরে শতাধিক সদস্য হয়। ঢাকার আগারগাঁওয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী মিন্টুও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। প্রথমদিকে গাংচিল বাহিনীর সদস্যরা তুরাগ নদীতে চলাচলকারী ইট ও বালি বহনকারী ট্রলার ও কার্গোতে চাঁদাবাজি করত। পরে তারা নৌ-ডাকাতি শুরু করে। ২০০৩ সালে গাংচিল নামের একটি মালবোঝাই ট্রলার ডাকাতি করে মামুন-আনারের বাহিনীর নাম হয় গাংচিল বাহিনী। তুরাগ নদী ও আমিনবাজার এলাকায় আতঙ্ক হিসেবে দেখা দেয় গাংচিল বাহিনী। কয়েকটি বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে লাইমলাইটে চলে আসে তারা। দিয়াবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির অস্ত্র লুট এবং কামারপাড়া টহল পুলিশের অস্ত্র লুট করে তারা অস্ত্রাগার গড়ে তোলে। গার্মেন্টস সেক্টরের পাশাপাশি ইটখোলা ও বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত এ বাহিনী। ২০০২ সালের ১২ জুলাই গাংচিল বাহিনীর হাতে খুন হয় সাভার থানার এসআই মতিউর রহমান। ২০০৪ সালে র্যাবের ক্রসফায়ারে গাংচিলের প্রধান মামুন মারা গেলে এ বাহিনীর হাল ধরে আনার। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ র্যাব-১১এর ডিএডি হুমায়ুন কবীর ও সদস্য ফুল মিয়াকে ইটভাটায় হত্যা করে গাংচিল বাহিনী। এ ঘটনার পর বিভিন্ন সময় র্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ারে এ বাহিনীর অন্তত ১৭ জন সদস্য মারা গেলেও আত্মগোপনে চলে যায় বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন আনার।
র্যাব-৩ এর মেজর মেহিদী হাসান জানান, পুলিশ হত্যার সময় পুলিশের গুলিতে আহত গাংচিল বাহিনীর আনোয়ার হোসেন আনারের পায়ে গুলি লাগে। দুই র্যাব সদস্য হত্যার পর আনোয়ার আত্মগোপনে চলে যায়। পরে সে পালিয়ে ভারতে চিকিৎসার (পুলিশের ছোড়া গুলি পা থেকে বের করার জন্য) জন্য গেলে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে তিন বছর হাজতবাস করে এলাকায় ফিরে এসে নতুন করে দল গোছানোর চেষ্টা করছিল।
এদিকে গাংচিল বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন আনার মৃত্যুতে সাভারের আমিনবার, বড়দেশী, কাউন্দিয়াসহ আশপাশ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকাবাসী অনেকেই আনন্দ উল্লাস করছে। তবে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান মিয়ার সাথে মুঠফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।