পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: হেদায়েত উল্লাহ, টঙ্গী থেকে : টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের জন্য টঙ্গী এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। কাল শুক্রবার থেকে আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বুধবার থেকে মুসল্লিরা দলে দলে আসতে শুরু করেছেন। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। চার দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে। ২২ জানুয়ারি রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
টঙ্গীর এই বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে এটি হবে ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা। মুসল্লিদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশের ৬৪ জেলাকে ৪ ভাগে ভাগ করে এ বছর প্রথম পর্বে ১৬ জেলা, দ্বিতীয় পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ তাবলিগ অনুসারী মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইজতেমার মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে র্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সদসদের নিয়ে।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ অ্যাড. আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো: জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন বিশ্ব ইজতেমার সর্বশেষ প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন।
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীর ওপর ৭টি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছে। এ বছর ২০১৭ সালের ৫২তম ইজতেমার দুই পর্বে অংশ নেয়া ৩২ জেলা হলোÑ ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সৈয়দপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর, যশোর, বাগেরহাট, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, বরিশাল, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সাতক্ষীরা।
আগামী ১৩ থেকে ১৫ এবং মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসন বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এবারও ৫ স্তরের র্যাব-পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে পুরো ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবায় ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। মুসল্লিদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ইজতেমার মোনাজাতের দিন ১১৫টি ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে টঙ্গী স্টেশনে। মুসল্লির জন্য ওজু, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার ও ভ্রাম্যমাণ টিকিট বিক্রি করা হবে। বিআরটিসির ৩৫০টি বাস মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া বিদেশি মেহমানদের কাকরাইল মসজিদ এবং বিমানবন্দর থেকে ইজতেমা ময়দানে আনার জন্য পর্যাপ্ত এসি বাস বরাদ্দ থাকবে। ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবার নতুন একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে।
ইজতেমার আগের দিন থেকে ইজতেমা শেষ হওয়ার পরদিন পর্যন্ত পুলিশ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। ৫ স্তরের নিরাপত্তা পার হয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে হবে সবাইকে। এ ছাড়া ইজতেমা শুরুর আগে ২০টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ, বিলবোর্ড ও ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবে। এছাড়াও বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস, চিকিৎসাসেবা বাস্তবায়ন এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১২টি উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও পাকা দালানে প্রায় ৬ হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত ওজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার-ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য ৫টি কন্ট্রোল রুম এবং র্যাব ও পুলিশের জন্য ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ২০টি ফগার মেশিন দিয়ে ইজতেমা ময়দানে মশক নিধন, ইজতেমা চলাকালীন সময়ে ২০টি ট্রাকের মাধ্যমে রাত-দিন বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা, ইজতেমা চলাকালীন রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সেবা কার্যক্রম, ইজতেমা ময়দানে বিনামূল্যে ৫৪টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা ও টঙ্গী প্রেসক্লাবের মিডিয়া সেন্টার খোলা থাকবে।
ডেসকো কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যে কোনো একটি গ্রিড নষ্ট হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হবে না। ইজতেমা এলাকায় ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমার প্রস্তুত থাকবে।
গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার ১৫ জানুয়ারি গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বৃহত্তর জেলাগুলোর ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া দুই পর্বের আখেরী মোনাজাতের দিন গাজীপুরে বিভিন্ন সড়কেও যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
ইজতেমায় দুই ধাপের আখেরী মোনাজাতের ১৫ জানুয়ারি ও ২২ জানুযারি সকাল ৬টা থেকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ-টঙ্গী মহাসড়কের মাঝুখান ব্রিজ থেকে স্টেশন রোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত সড়কপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। টঙ্গীর কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মুন্নু টেক্সটাইল মিল গেট পর্যন্ত সড়ক পথেও থাকবে একই নির্দেশনা।
এদিকে পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ ও মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে কামারপাড়া ব্রিজ থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত তুরাগ নদীর সকল ধরনের নৌযান চলাচল নোঙর করা ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে ২২ জানুয়ারি বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌযানগুলো টঙ্গী ব্রিজের পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া সেতুর উত্তর পাশে নোঙর করতে পারবে। ইজতেমা চলাকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য মহাসড়ক পরিহার করে টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশে শফিউদ্দিন সরকার অ্যাকাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভি সিগারেট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন খোলা স্থান ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। উল্লেখিত সড়ক পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।