পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় এসেছিলেন ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ নূরু মিয়া। গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের এই কর্মী ৫ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়া থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি-নৌকা-ফুল দিয়ে সাজানো রিকশা নিয়ে সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ৫ দিন রিকশা চালিয়ে ঢাকায় পৌঁছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার বাইরে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে উৎসুক জনতা তাকে দেখে ভিড় করে। নাম নুরু মিয়া এবং বয়স ৮০ বছর জানিয়ে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হিসেবে পরিচয় দেন। আরো জানান, তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর ছবি, ব্যানার, ক্রেস্ট, জাতীয় পতাকা ইত্যাদি বিক্রি করে সংসার চালান। এক ছেলে এক মেয়ের বাবা নুরু জানান, তার বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারের পাশে। ‘নৌকার নুরু’ পরিচয় দিয়ে তিনি বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ আমার অন্তরে মিশে আছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই আওয়ামী লীগের সব অনুষ্ঠানে অংশ নিই’। নূরু যে বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করেন এবং আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত কর্মী সেটা বোঝা যায় তার আচরণ ও কথাবার্তায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে জনতার ঢল নামে সেখানে কতজন নূরু ছিলেন? নূরু মিয়ার মতো কতজন কর্মী আওয়ামী লীগের সমাবেশে এসেছিলেন? তিন নেতার মাজারের সামনে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এক হকার বললেন, ‘স্যার যাদের দেখছেন মিছিল নিয়ে আসছে এদের অধিকাংশই হাইব্রিড। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের হয়ে যান। এমনকি অনেকই রয়েছেন যারা যে দলেরই সমাবেশ হোক টাকার বিনিময়ে সেখানে মিছিল নিয়ে হাজির হন। সেখানে জানা গেল, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি, কার্জন হলের সামনে অনেক মিছিলকারী শিশুদের বিরিয়ানি, তেহারি খাওয়ানো হয় এবং দুইশ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়।
জনতার চাপে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করা সম্ভব হলো না। অগত্যে সমাবেশের আশপাশে ঘুরে দেখা গেল অধিকাংশ মিছিল আসার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক। ছবি এমনভাবে তোলা হচ্ছে যেন বোঝা যায় আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশের উপস্থিতির ছবি। ব্যাক গ্রাউন্ডে থাকে সমাবেশের চিত্র। মিছিলের পর মিছিল আসছে, সে মিছিল সমাবেশের পাশে পৌঁছেই কিছু নেতা ছবি তোলার পোজ দিয়ে আবার চলে যাচ্ছেন অদৃশ্য হয়ে। নেতাকর্মীদের এমন অবস্থা দেখে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও বিরক্ত হন। কিন্তু নেতাদের চিনতে না পারায় অনেকে ভয়ে তাদের ছবি তোলা থেকে নিবৃত্ত করার সাহস পাননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে বেলা ১১টা থেকে। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা থেকে খ- খ- মিছিল ও পিকআপ ভ্যানে করে নেতাকর্মীরা আসে। আসে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে মিছিল। এদের কেউ উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করেন, কেউ সমাবেশ স্থলের পাশে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেন। কেউ কেউ আবার ফিরে গিয়ে নতুন মিছিল নিয়ে আসছেন এমন দৃশ্য দেখা গেল। কিন্তু সমাবেশে নেত্রী কী দিক নির্দেশনা দেন; দলের নেতারা কে কী বক্তব্য দেন তা শোনার আগ্রহ কারো নেই। ছবি তোলা এবং নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ছোটছোট শিশুরা সিগারেট ফুঁকাচ্ছেন। দুপুরের পর মৎস ভবনের দিক থেকে সমাবেশের দিকে যাওয়ার সময় মিছিলকারীদের ছবি তোলা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত দেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এক সদস্য অপর সদস্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হাইব্রিড হাইব্রিড। এরা সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ। দলকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যহবার করার জন্য ছবি তোলায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যজন জবাব দিলেন, আজ সকালে ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বলেছেন, আওয়ামী লীগে যারা প্যারাসাইট (পরজীবী) হিসেবে পরিচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১১ জানুয়ারির পর থেকে এ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সমাবেশস্থলের আশপাশে ঘণ্টাখানেক ঘুরে, বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে এবং সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে মনে হয়েছে এদের বেশির ভাগই কেউ টাকার বিনিময়ে এসেছেন, আবার কেউ ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাবাদী কর্মী। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভক্তের সংখ্যা খুবই কম। পুরনো দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যে স্লোগানে ঐতিহ্য, আচরণ সমাবেশে মিছিল নিয়ে আগত অধিকাংশের মধ্যে সেটা দেখা যায়নি। মিছিল কারীদের অধিকাংশই বৃদ্ধ নূরু মিয়ার মতো পরীক্ষিত কর্মীতো দূরের কথা প্রকৃত অর্থে আওয়ামী লীগের কর্মীই নন। পথে দাঁড়িয়ে নেতাদের বক্তৃতা শোনার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আইন-শৃংখলার দায়িত্ব পালনরত এক পুলিশ সদস্য বিরক্তির সুরে বললেন, কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এসে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টচার্য টিভিতে বলেছিলেন, কাউন্সিলে লাখ লাখ লোক দেখছি; কিন্তু আওয়ামী লীগে একজন কর্মীও দেখছি না’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আওয়ামী লীগের সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে দেখে যথার্থই মন্তব্য করেছিলেন ন্যাপের ওই প্রবীণ নেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।