Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইএসের বিরুদ্ধে তুরস্কের লড়াইয়ে বিমান সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : উত্তর সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে তুরস্কের সামরিক অভিযান চলছে। আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে রাশিয়া তুরস্ককে সমর্থন দিচ্ছে। বিকাশমান রুশ-তুরস্ক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে গভীর হতে থাকা এ সম্পর্ক সিরিয়ার চূড়ান্ত পরিস্থিতি নির্ধারণে মার্কিন প্রয়াসকে কোণঠাসা করার হুমকি।
আইএস অধিকৃত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর আল বাবের কাছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তুরস্কের সামরিক অভিযানে রাশিয়া এ বিমান সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আইএসের বিরদ্ধে লড়াইয়ে এটাই তুরস্ককে রাশিয়ার প্রথম সামরিক সমর্থন। যুক্তরাষ্ট্র আইএসের কার্যত রাজধানী রাক্কা দখলের উপর যখন গুরুত্ব আরোপ করেছে সে সময় রাশিয়া তুরস্কের সাথে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
২০১৫ সালের নভেম্বরে তুরস্ক তার আকাশসীমা লংঘনের অভিযোগে একটি রুশ জঙ্গি বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে। এ ঘটনায় রুশ-তুরস্ক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটার পর বর্তমানে আইএসবিরোধী অভিযানে তুরস্কের প্রতি রাশিয়ার বিমান সমর্থন প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।  
রাশিয়া ও তুরস্ক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই সিরিয়ায় যুদ্ধ বিরতি প্রতিষ্ঠায় যৌথ চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান টানাপড়েন দেখা যাচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ওয়াই.পি.জি নামে পরিচিত কুর্দি গেরিলা গ্রুপের ব্যাপারে ক্রমেই শংকিত হয়ে উঠছেন। সিরিয়ায় আইএসকে দমনে যুক্তরাষ্ট্র এ গেরিলা গ্রুপটির সাথে মৈত্রী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়া তুরস্কের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে বলে মনে হয় যাতে সিরিয়ার কুর্দিদের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বানচাল করতে তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার  উদ্যোগ নিয়েছে। এর বিনিময়ে তুরস্ক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যৃত করার চেষ্টা থেকে সরে এসেছে। বাশার এখন রাশিয়ার সাহায্যে দেশের দক্ষিণের প্রধান শহরগুলোতে তার নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করছেন।
তুরস্কে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ. জেফরি বলেন, রাশিয়া-তুরস্ক সম্পর্কের উন্নতি মূলত কৌশলগত কারণে। রাশিয়া এখনকার মত উত্তর সিরিয়ায় একটি তুর্কি ছিটমহল মেনে নেবে যদি তা বাশার সরকারের জন্য হুমকি সৃষ্টি না করে। রাশিয়া তুরস্কের শত্রু ওয়াই.পি.জির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের সুযোগ নিয়ে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্ককে বিমান সমর্থন প্রদান করছে যা যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি।
হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়াকে সহযোগিতা করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। কিন্তু সিরিয়ার ব্যাপারে ক্রেমলিনের সাথে একটি অভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল গড়ে তোলার ওবামা প্রশাসনের চেষ্টা ভেঙে পড়ে যখন রাশিয়া বাশার বিরোধীদের কাছ থেকে আলেপ্পো পুনর্দখলে সিরীয় সেনাবাহিনী ও ইরান সমর্থিত যোদ্ধাদের সমর্থন দিতে বিমান হামলা শুরু করে।
তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় ও মার্কিন বিমান সমর্থন ছাড়াই আলেপ্পোর পূর্বে অবস্থিত আল বাবে সামরিক অভিযান শুরু করে। আইএসবিরোধী মার্কিন নেতৃত্বাধীন লড়াইয়ের মুখপাত্র কর্নেল জন ডোরিয়ান নভেম্বরে বলেন, তুরস্ক বিষয়টি স্বাধীনভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তুরস্কের ধারণা যে আইএস যোদ্ধাদের  তারা কোণঠাসা করে ফেলেছে। কিন্তু বাস্তবে আইএস এখনো শক্তভাবে তাদের প্রতিরোধ করে চলেছে। নভেম্বরে আইএসের সাথে লড়াইয়ে ৩ জন তুর্কি সৈন্য নিহত হওয়ায় সামরিক সমস্যা ঘনীভূত হয়। তবে তুরস্ক বলে যে সিরীয় বিমান হামলায় তাদের সৈন্যরা নিহত হয়েছে।
এরদোগান পরে পুতিনের সাথে কথা বলেন। তিনি এরদোগানকে আশ^স্ত করেন যে, রাশিয়া এ বিমান হামলার সাথে জড়িত নয়। যা হোক, দুই কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি তাদের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
তুরস্কের সামরিক বাহিনী ২ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে রুশ ভূমিকার কথা প্রকাশ্যে বলে যাতে উল্লেখ করা হয় যে আগের দিন রুশ জঙ্গি বিমানগুলো আল বাবের ৫ মাইল দক্ষিণে লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আঘাত হানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ডিসেম্বরের শেষে আল বাব এলাকায় রুশ বিমান হামলা শুরু হয়। তারা বলেন, এমনকি গত শুক্রবারও আল বাবের কাছে রুশ জঙ্গি বিমান উড়তে দেখা গেছে।
রুশ বিমান হামলার কার্যকারিতা অস্পষ্ট। আল বাবা অভিযানে তুর্কি সৈন্য নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। তুর্কি কর্মকর্তারা মার্কিন বিমান সমর্থনের অভাবের কথা বলেছেন। তারা পরোক্ষ হুমকি দিয়েছেন যে তুরস্ক ইনসারলিক বিমান ঘাঁটি থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান অভিযান চালানো বন্ধ করে দেবে। যদি তা করা হয় তবে তা হবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য এক বড় আঘাত।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জোট বাহিনীর বিমান অভিযান বন্ধের পিছনে ছিল আল বাব ও চারপাশের এলাকায় মার্কিন নজরদারি ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ রাখার তুর্কি সিদ্ধান্ত। তুর্কি সামরিক বাহিনী বলেছে যে সম্ভাব্য বৈরী বিমান যাতে তাদের সৈন্যদের উপর দিয়ে উড়ে যেতে না পােের সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত না করে মার্কিন  বিমান হামলা চালানোকে বাধার সম্মুখীন করে।
সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া অভিযান চালাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে পরিস্থিতিতে পড়ে তাকে মার্কিন কর্মকর্তারা শক্তি প্রদর্শন বলে আখ্যায়িত করেন। এতে মার্কিন বিমানগুলো আল বাবের উপর দিয়ে উড়ে যায় ও ফ্লেয়ার নিক্ষেপ করে। তবে গত সপ্তাহে তুরস্ক বলেছে যে মার্কিন ড্রোন ও অন্যান্য বিমান গোযেন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য উড়তে পারবে। এর ফলে আল বাবে আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা চালানোর পথ আবার খুলে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে কুর্দি বাহিনীকে কার্যকর যোদ্ধা বলে মনে করে। কিন্তু তাদের ব্যাপারে তুরস্কের সংবেদনশীলতার কথা বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তাদের অস্ত্রসজ্জিত করতে অস্বীকার করে আসছে।
যে কোনো বিচারেই তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধান সহযোগিতা এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ পৃথক যখন রাশিয়া লাটাকিয়ায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে সিরিয়ার সরকার বিরোধী গ্রুপগুলোর উপর হামলা শুরু করে যাদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক সমর্থিত। ঐ বছর নভেম্বরে তুরস্ক রুশ জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করে। পুতিন এ ঘটনাকে পিঠে ছুরিকাঘাত বলে আখ্যায়িত করেন। এর জবাবে তিনি তুরস্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি লাটাকিয়ায় অত্যাধুনিক রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ মোতায়েন করেন।
তবে গত এক বছরে দু’দেশের মধ্যে হিসাবে পরিবর্তন ঘটেছে। সিরিয়া রাশিয়ার জন্য ‘জলাভূমি’ হবে বলে ওবামা প্রশাসনের হুঁশিয়ারিকে অসার প্রমাণ করে রাশিয়া উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ইরান, ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া ও সিরীয় সরকারী বাহিনীর সাথে কাজ করেেেছ ও আলেপ্পো পুনর্দখলে বাশারকে সাহায্য করেছে।
রাশিয়া স্বীকার করে যে সিরীয় সরকারী বাহিনী সারাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। এ সময়ে তুরস্কের আশু লক্ষ্যেরও পরিবর্তন ঘটেছে। উত্তর সিরিয়ায় কুর্দিরা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে পারে এ আশঙ্কায় এবং আইএস তার সীমান্তে তৎপর হতে পারে বলে তুরস্ক গত আগস্টে সেখানে সৈন্য পাঠায়।
তুরস্ক এ অভিযানের পাশাপাশি তাদের পছন্দের সিরীয় সরকার বিরোধী গ্রুপগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে যারা আইএসের কাছ থেকে জারাব্লুস দখল করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারা আল বাবে আইএসের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।
রাশিয়া তাদের জঙ্গি বিমান উড্ডয়ন সম্পর্কে সিরিয়ার রুশ বাহিনী ও কাতারে আল উদিদ বিমান ঘাঁটিতে আমেরিকান বিমান যুদ্ধ কমান্ডের মধ্যে বিশেষ হটলাইনে অবহিত করে। মার্কিন ও রুশ জঙ্গি বিমানের মধ্যে লড়াই এড়ানোই এ হটলাইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ