Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মালিকানা দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থী কমছে কার্ডিফ স্কুলে

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : মালিকানা দ্বন্দ্ব, দখল ও প্রিন্সিপালের স্বেচ্ছাচারিতা সুনাম হারাচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। গত দেড় বছরেই স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা এক হাজার থেকে কমে ৪০০ তে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্রমান্বয়েই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কার্ডিফ স্কুল থেকে সরিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এ এম এম খায়রুল বাশারের শিক্ষা বিরুদ্ধ নানা কর্মকা-ের কারণে অভিভাবকরা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইসাথে হেলপ ক্লাস বন্ধ করে দেয়া, কোচিং সেন্টারে টিউশন নিতে উৎসাহিত করা, শিক্ষার্থীদের কারণে অকারণে শারীরিক শাস্তি প্রদান ও বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন থেকে বিরত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। বিভিন্ন অনিয়মের সমাধান চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন এবং মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক জিডিও (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন একাধিক অভিভাবক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামর্থ্যরে মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা-এই ধারণা নিয়ে ২০১৩ সালে রাজধানীর ধানম-িতে যাত্রা শুরু করে ইংরেজি মাধ্যমের কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। মূল ক্যাম্পাসসহ এই সময়েই আরও তিনটি ক্যাম্পাস চালু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র দুই বছরেই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার অতিক্রম করে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপালকে জোরপূর্বক সরিয়ে নতুন প্রিন্সিপালসহ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার মান অবনমনসহ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতা নেই এবং ক্যামব্রিজ কারিকুলাম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই এমন একজন ব্যবসায়ীকে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল করার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান কমতে থাকে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, যারা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিল, মালিকানা দ্বন্দ্বে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি হলেও আগামী সেশন থেকে তারা সন্তানদের ওই স্কুলে আর পড়াবেন না। অন্যত্র ভর্তি করাবেন।
অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন প্রিন্সিপাল দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এক রকম স্বেচ্ছাচারিতা শুরু হয়। শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা কার্যক্রমের পরিবর্তে বিরুদ্ধ আচরণ করা হয়। এতে একে একে শিক্ষার্থীরা ওই স্কুল ত্যাগ করতে থাকে। এমনকি ইতোমধ্যে চারটি ক্যাম্পাসের একটি বন্ধ করতেও বাধ্য হয় বর্তমান কর্তৃপক্ষ। মাত্র দেড় বছরে শিক্ষার্থী সংখ্যাও এক হাজারেরও বেশি থেকে কমে ৪০০-তে নেমে আসে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘এ লেভেল’ শিক্ষা কার্যক্রম। তবে যারা ‘ও লেভেলে’ অধ্যয়ন করছে তারা ইচ্ছে করলেও অন্য স্কুলে যেতে পারছে না। চলতি সেশন শেষ হলে আগামী সেশনেও অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুলটি ছেড়ে সন্তানদের অন্যত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা যায়, স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে চালানোর জন্য বেশ কয়েকজনকে এর অংশীদার করেন। একই সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষককেও অংশীদার করেন। কিন্তু অংশীদার চারজন পরিচালক ও পাঁচজন শিক্ষক একত্র হয়ে স্কুলটি তাঁদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন স্কুলটি তাদের দখলেই রয়েছে। গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মো. মোবারক হোসাইন কাউছার। অভিযোগে বলা হয়, কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে (শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, শিশু দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি) পালন হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে স্কুলের পক্ষ থেকে কোনো জাতীয় দিবস পালন করা হয়নি।  অভিযোগে আরো বলা হয়, আগে প্রতিদিন ছুটির পরে স্কুলে তিনটি হেলপ ক্লাস নামে অতিরিক্ত ক্লাস ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রিন্সিপাল দায়িত্ব নিয়েই তা বন্ধ করে দেন। এর বদলে ধানম-ির প্রধান ক্যাম্পাসের বদলে নিকটবর্তী লালমাটিয়া আবাসিক এলাকায় স্কুলেরই কয়েকজন শিক্ষক কোচিং সেন্টার খুলেছেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের যেতে বাধ্য করছেন। শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি প্রদান এবং অভিভাবকদের সাথে রূঢ় আচরণ করায় অনেকেই স্কুলটি ত্যাগ করে চলে গেছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কারণে-অকারণে শাস্তি প্রদান করায় গত ডিসেম্বরে অভিভাবক সাইফুল হাসান, মাহবুবুল ইসলাম, সাজ্জাদুল ইসলাম পৃথকভাবে লালমাটিয়া থানায় তিনটি জিডি করেছেন। এছাড়া বর্তমান প্রিন্সিপালকে সরিয়ে পূর্বের প্রিন্সিপালকে বহাল করা এবং স্কুলের বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার জন্য দেড় শতাধিক অভিভাবক চেয়ারম্যানের কাছে  লিখিতভাবে আবেদনও করেছেন।
স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এ এম এম খায়রুল বাশার বলেন, যেসব অভিভাবক অভিযোগ করেছেন তারা প্রত্যেকেই এক লাখ টাকার উপরে ডিফল্ডার। বকেয়া টিউশন ফি চাইলেই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে সরকারি উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তার সন্তানরা পড়াশুনা করে। তাদের বদলি হলে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিয়ে চলে যায়। হেলপ সেন্টার বন্ধ ও কোচিংয়ে উৎসাহিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো হেলপ সেন্টার চালু আছে এবং কোচিংয়ের বিষয়ে স্কুল থেকে কোন কিছু বলা হয় না। তিনি বলেন, যারা স্কুল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং স্থানীয় কিছু নেতা মিলে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ