পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংকের ১৪ শতাংশের বেশি শেয়ার। ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতমুক্ত করার ‘সরকারি আবেদনে’ সাড়া দিয়ে সাতটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে গত সাত মাসে এই শেয়ার কিনে নেয় দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যক্তিদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয় ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ।
এদিকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ করায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন বাড়ছে ব্যাংকটির ওপর। গত বছরের মাঝামাঝি গ্রুপটির শেয়ার ধারণের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বাড়ছে ব্যাংকটির শেয়ারদর। গত জুনে ইসলামী ব্যাংকের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ টাকা দরে। আর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এটা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। বোর্ড পুনর্গঠনের পর গতকাল ছিল শেয়ারবাজারে প্রথম দিন। দিনের শুরুতেই ইতিবাচক সাড়া দেয় বিনিয়োগকারীরা। দিন শুরু হয় ৩৩ টাকা দরে। ৩০ থেকে ৩৩ টাকা পর্যন্ত শেয়ারদর ওঠানামা করে। দিন শেষ হয় ৩০ টাকা ৬০ পয়সা দরে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এস আলম গ্রুপের ব্যবসায়িক সুনামের কারণেই আস্থা বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে। তারা এটা বুঝতে পেরেছেন, সামনের দিনে ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, এস আলম গ্রুপ প্লাটিনাম এনডেভার্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, ব্লু ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চার, গ্রান্ড বিজনেস, এক্সেল ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, হযরত শাহজালাল (র.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটির নামে গত ৭ মাসে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার শেয়ার কেনে। এটা ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে হযরত শাহজালাল (র.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় আরমাডা স্পিনিং মিলের কাছে।
ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠার সময়ে ইসলামী ব্যাংকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ ছিল ৭০ শতাংশ। বর্তমানে তা ৫২ শতাংশে নেমেছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে গত বছরের শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ছিল ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে তা ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা এস আলম গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। মোট সম্পদ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। দেশের যেকোন দুর্যোগে সহায়তার হাত নিয়ে এগিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এস আলম শীর্ষে। ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও গ্রুপটির হাতে রয়েছে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংকের বড় অংশের শেয়ার। এছাড়াও আরও ৭টি ব্যাংকের শেয়ার আছে এস আলম গ্রুপের হাতে। সম্প্রতি গণমাধ্যমেও ব্যাপক বিনিয়োগ শুরু করেছে গ্রুপটি।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের সভায় ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল করা হয়। পুনর্গঠন করা হয় পরিচালনা পষিরদ। চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোস্তফা আনোয়ার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে নতুন চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক সচিব আরাস্তু খানকে। তিনি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। কমার্স ব্যাংকের ৪০ ভাগ শেয়ার এস আলম গ্রুপ কিনে নেয়ার পর আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যান করা হয়। ব্যাংকের নতুন এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মো. আবদুুল হামিদ মিঞাকে। তিনি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আরেক ব্যাংক ইউনিয়নের সাবেক এমডি। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম। ব্যাংকের কোম্পানি সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব জাহিদুল কুদ্দুস মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম যিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বড় পরিবর্তনকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বড় সংস্কার হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, এতদিন ব্যাংকটি জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। এ পরিচয় থেকে বের হয়ে আসার একটা প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এতে জামায়াতপন্থী নন এমন মানুষদের কাছে ইসলামী ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা আরও বাড়বে। “তবে ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে নতুন নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ”, উল্লেখ করেন এই বিশিষ্ট ব্যাংকার।
নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে ইসলামী ব্যাংক
গতকাল রোববার প্রথম কার্যদিবস হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যান নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে ইসলামী ব্যাংক। আরাস্তু খান এর আগে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে সাফল্য পেয়েছেন। ভগ্নপ্রায় ব্যাংকটিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
আরাস্তু খান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমপিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে মানিকগঞ্জ জেলার গরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড, যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বর্তমানে বিডিবিএল), আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বিটিসিএল, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
নতুন নেতৃত্ব ১২ ও ১৩ জানুয়ারি সোনারগাঁও হোটেলে সব শাখার প্রধানদের সম্মেলনে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার আজিজুল হক ভাইস চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করায় সৈয়দ আহসানুল আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে আছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হেলাল আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি জিল্লুর রহমান, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আবদুল মাবুদ, আইনজীবী বোরহান উদ্দিন আহমেদ এবং বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিক ও নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করতে আগে থেকেই উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালের জুন থেকে। ২ জুন ব্যাংকটির ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য নতুন নতুন কোম্পানি তৈরি করে ব্যাংকটির পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।