Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারী ও হিন্দুরাও এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাবেন-আরাস্তু খান

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেছেন, নারী ও হিন্দুরাও এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাবেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে মেধাবী মেয়েদের এই ব্যাংকের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তুলে আনা হবে। তবে ব্যাংকের দর্শন বা মৌলিকনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। আগের মতোই শরিয়াহ অনুযায়ী এই ব্যাংক পরিচালিত হবে।
গতকাল রোববার মতিঝিলস্থ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আরাস্তু খান বলেন, ইসলামী ব্যাংক নিয়ে যেসমস্ত আলাপ-আলোচনা হয়েছে সেসব বিষয়গুলোকে এড়িয়ে এবং সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে ব্যাংক পরিচালনা করা হবে। একই সাথে ১০-১৫ বছর পূর্বে যে সমস্ত লেনদেন হয়েছে, সেই লেনদেনগুলোকেও খতিয়ে দেখা হবে, এখানে কোনো অনিয়ম আছে কি না।
আরাস্তু খান বলেন, এতদিন একটি বিশেষ দলের লোকদের কেবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করা হবে। দেশের সব  শ্রেণির মেধাবী যেন এই ব্যাংকে নিয়োগ পেতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া সিএসআরের অর্থ-অপব্যবহার  রোধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো অর্থই ছাড় করা হবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাত এবং আর্ত মানবতা ও দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর সেবায় সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নতুন নেতৃত্ব আসায় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন হলেও ব্যাংক আগের নিয়মেই পরিচালিত হবে জানিয়ে আরাস্তু খান বলেন, এই ব্যাংকে যারা নিচের পদে কর্মরত রয়েছেন, তাদের কারো চাকরি যাবে না। এ কারণে এই ব্যাংকের প্রতি দেশের জনগণের আস্থাও অটুট থাকবে।
আরাস্তু খান বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ অনেক। এই ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের বড় বড় প্রকল্পেও অর্থায়ন হবে। কারণ সরকার কখনো ঋণখেলাপি হয় না। তাই মুনাফা কম হলেও অর্থমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসার কারণে ইসলামী ব্যাংক সফলতা লাভ করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত এই ব্যাংকের অভাবনীয় সাফল্য প্রমাণ করেছে, শরীআহভিত্তিক ব্যাংকিং পদ্ধতি প্রচলন করা সম্ভব। দেশে-বিদেশে এ মডেল ৩৪ বছর ধরে বিভিন্ন শরিআহভিত্তিক ব্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে এর বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়েছে। তাই ইসলামী ব্যাংকের আমানত গ্রহণ, অর্থায়ন সেবা ও বিনিয়োগসহ সকল কার্যক্রম শরীআহ মোতাবেক সুদবিহীন এবং লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে। নিরাপদ ও কল্যাণমুখী খাতে এ ব্যাংকের বিনিয়োগ আরো সম্প্রসারণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন। ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদে সম্প্রতি যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল না বলে তারা এ সময় দাবি করেন।
ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, সিএসআরের একটি টাকাও আর চোখবুজে ব্যয় করা হবে না। অপব্যবহার রোধে আরো উদ্যোগ নেয়া হবে। এখন থেকে  দেশের কল্যাণে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করা হবে। তবে তিনি আট মাস আগে ব্যাংকে যোগ দেয়ার পর তদন্ত করে সিএসআরের কোনো অর্থই অপব্যবহার হয়নি বলে দাবি করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, আগে পরিচালনা পরিষদ ভালো ছিল, তবে তাদের দিকে তীর্যক প্রশ্ন ছিল সবার। তারা ছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোনো অবস্থাতেই এই ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করা হবে না। ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে দর্শন বা মৌলিকনীতিরও কোনো পরিবর্তন করা হবে না।
আগে এই ব্যাংকে ইসলাম বেচা-কেনা হয়েছে দাবি করে সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, এখন  থেকে প্রকৃত ইসলামি দর্শনে চলবে এই ব্যাংক। এই ব্যাংককে গরিব মানুষের ব্যাংক বলা হলেও মাত্র চার শতাংশ অসহায়-গরিব মানুষ এই ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন। এখন থেকে ১০ শতাংশ গরিব মানুষ এই ব্যাংক থেকে ঋণ পাবেন। তিনি  বলেন, ১০ লাখ নারী উদ্যোক্তাকে এসএমই ঋণ  দেয়া হবে।
ইসলামী ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে রদবদলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আছে কি না প্রশ্নের জবাবে আহসানুল আলম বলেন, রাজনৈতিক কোনো হস্তক্ষেপ নেই। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তেই পরিবর্তন হয়েছে। তবে তিনি বলেন, ‘ঈসার সময়ে ঈসা, মুসার সময়ে মুসা আসবে এটাই স্বাভাবিক।’ ব্যাংকটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে হচ্ছেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতোদিন দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক শারিরীক কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছেন। পরিচালনা পরিষদ তা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলম ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে রদবদলে এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহসানুল আলম বলেন, এক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে নতুন চেয়ারম্যানকে শুভেচ্ছা জানাতে অন্য একটি ব্যাংকের চেয়াম্যান হিসেবে লোকজন নিয়ে এসেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মাবুদ, পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল আলম ও ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. মাহবুব-উল-আলম এবং ঊর্ধ্বতন নির্বাহীগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ