Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীতিনির্ধারকরা উদ্যোগী না হলে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়বে বাংলাদেশ

ভূমিকম্পে সাড়াদান ও প্রস্তুতিতে ঘাটতি

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি নীতিনির্ধারকরা এখনো সচেতন না। সমন্বয় নেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। তাই ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের অভাবনীয় ক্ষতি হবে। ভবন নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়িত না হওয়ায় কারণে এ ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়বে বলে দাবি করেছে একশনএইড বাংলাদেশ। গতকাল রোববার ঢাকার ব্রাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘ভূমিকম্পে সাড়াদান ও প্রস্তুতি : ঘটাতি ও বাস্তবতা’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে এমন কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে কর্মরত ১০টি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সংগঠন নারী কনসোর্টিয়াম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ দুর্যোগ ঝুঁকির দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম। নগর ঝুঁকির দিক দিয়ে ১১তম। এখন বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ শহরে বাস করে। ২০৩০ সালের মধ্যে সেটি হবে ৫০ শতাংশ। যেটি ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে।
প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের মোকাবেলা এবং ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনতে সঠিক পরিকল্পনা নেই। সঠিক জ্ঞান ও পরিকল্পনার অভাবে সরকার, সিটি করপোরেশন, রাজউক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় খুবই কম। সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দুর্যোগ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এখানে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যাও খুবই কম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, গত ১২০ বছরে আমাদের ভূমিকম্প মোকাবেলা করতে হয়নি। তাই আমাদের সরাসরি জ্ঞান কম। আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি আছে স্বীকার করতে হবে। তবে আমরা দুর্যোগ মোকাবেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। ভূমিকম্প মোকাবেলায় যন্ত্রপাতি ছিল না বললেই চলে। গত দুই-তিন বছরে প্রায় ২২০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। আগামীতে আরো প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে। প্রবন্ধে আরো বলা হয়, নির্দেশনা তৈরির ২০ বছর ও আইন হওয়ার প্রায় ১০ বছর পরও  বাস্তবায়ন হয়নি ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’। যে কারণে অপরিকল্পিতভাবে হুহু করে শহর এবং গ্রামে বাড়ছে ভবন নির্মাণ। ফলে ভবনের অবকাঠামো ঝুঁকি দিনকে দিন বাড়ছে বাংলাদেশে।  
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘বিল্ডিং কোড যদি বাস্তবায়ন করা যায় তবে তবে ৯০ শতাংশ ঝুঁকি কমানো যায়। তাই ভবন নির্মাণ বিধিমালা  প্রয়োগ করা খুবই গরুত্বপূর্ণ। আমাদের যে ভবনগুলো আছে সেগুলোর যদি  ঝুঁকি নিরুপণ না করি তবে আমাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মাকসুদ কামাল বলেন, আমারা বলি, আমরা ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। আবার সিদ্ধান্ত নেয়া কর্তৃপক্ষ বলে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ না। বাস্তবতা হলোÑ বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে। দুঃখের বিষয় হলোÑ ভবন নির্মাণ বিধিমালা এখনো আমরা প্রয়োগ করতে পারিনি। আমাদের সব চাইতে বড় কাজ করতে হবে, সরকারের ভেতরের মানুষগুলোকে সচেতন করা। আমরা বাইরে যারা কাজ করি ও সরকারের ভেতরে যারা কাজ করে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের বড় ফারাক আছে’।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান পিএসসি  বলেন, ‘ডিসিসি মার্কেট ধসে পড়ার আগে আমি মার্কেট কমিটিকে বারবার অনুরোধ  করেছি যে, আপনাদের ভবনের পরিস্থিতি খুব খারাপ। যখন বলেছি, তখন তারা কানে নেননি। এরকম পরিস্থিতি প্রায় সব জায়গায়। দুর্যোগ মোকাবেলায় কে-কোথায়-কখন কাজ করবে, তার মধ্যে আমরা ধোঁয়াশায়। কর্তৃপক্ষের কার দায় কোনটি তার কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা নেই। কাজ করতে গিয়ে দেখি, রাজউক থাকলে তো ডিসিসি নেই; ডিসিসি থাকলে তো দুর্যোগ মন্ত্রণালয় নেই; সরকার থাকলে তো অন্য প্রতিনিধিরা নেই। সমন্বয় খুব দরকার’।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারহ্ কবির বলেন, এত বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। ভয়াবহতা মাথায় নিয়ে কাজ করা খুবই জরুরি। তবে হতাশার কথা হলোÑ আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে সচেতনতা কম। আমরা একাডেমিকভাবে কাজ করছি, আলোচনা করছি, কিন্তু দেশের এই কাজটি ভালোভাবে করতে হবে সরকার ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত  গ্রহণ ও প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে। রানা প্লাজার অপূরণীয় ক্ষতির বিনিময়ে আমরা পোশাক খাতে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। হাজারো মানুষের প্রাণের বিনময়ে আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই না’।
বেসরকারি খাতকে সংযুক্তির বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সবসময় বন্যার কথা বলি। এখন আমাদের অবশ্যই ভূমিকম্প নিয়ে কথা বলতে হবে, কিন্তু সেটা খুবই কম হচ্ছে। তৈরী পোশাক শিল্পে এখন নানা কাজ হচ্ছে ভূমিকম্প মোকাবেলায়। একইভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সে কাজটি করতে হবে। আবার  শুধু রাজউক বা সরকারের উপর ভরসা করলে হবে না, আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। বিল্ডিং কোড ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে  সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশি কঠোর হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ