Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে নেশার মহামারি-২

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : সাবোক্সন মাদকাসক্তদের হেরোইন ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকার কাজটি সহজ করে দিতে পারে। ২০১১ সালের পর বহু ডাক্তারই চিকিৎসাপত্র হিসেবে বিউপ্রেনোরফাইন দিয়েছেন।
এমন ব্যবস্থাপত্রের সখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজার থেকে ৩৬ হাজারে পৌঁছেছে বলে সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস অ্যাডমিনস্ট্রেশন জানায়। কিন্তু এখনো গ্রাম অঞ্চলের বহু আমেরিকানের জন্যই ওষুধটি সহজপ্রাপ্য নয়। ৪৬ বছর বয়ষ্কা আন্ড্রিয়া স্টিন ২০ জন রোগীর একজন যাকে দু’জন ডাক্তার সাবোক্সন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গত গ্রীষ্ম পর্যন্ত তিনি একটানা ভিকোডিন ও মরফিন নিয়েছেন। তিনি তার পঙ্গু স্বামীর কাছ থেকে এগুলো চুরি করতেন, যে বেচারা এগুলো লুকিয়ে রাখার নিষ্ফল চেষ্টা করতেন।
স্টিন টেনেসিতে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে সাবোক্সনের কথা শোনেন। ফেসবুকের মাধ্যমে এ বন্ধুর সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি বলেন, আমি যখন প্রচ- নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি, তখন সে আমাকে সাবোক্সনের কথা বলে। তার স্বামীও সাবোক্সন ব্যবহার করত। সে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিল।
স্টিন জুলাই মাস থেকে সাবোক্সন গ্রহণ করতে শুরু করেন। তাদের পারিবারিক চিকিৎসক ডা: নিকোল গাস্তালা ও টিমোথি সুইনটন তাকে এ ওষুধ দেন।
মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় মেথাডনও ব্যবহৃত হয়, তবে বিশেষ ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তা রোগীদের দেয়া হয়। কিন্তু সাবোক্সন বাড়িতেও ব্যবহার করা যায়। কিছু চিকিৎসক সাবোক্সন ব্যবহারকারীদের উপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে পারেন না। তারা এর অপব্যবহার করছে কি না তা জানতে তাদের মূত্র পরীক্ষা করতে বা তা বিক্রি করছে কি না বা অন্য ওষুধ গ্রহণ করছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ রাখতেও তারা ব্যর্থ হন।
স্টিন তার চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ করেন, গ্রুপ থেরাপিতে যোগ দেন এবং নিয়মিত মূত্র পরীক্ষা করান। তিনি এখন অনেকটাই নেশামুক্ত। Ñঅ্যাবি গুডনাউ।
লস অ্যাঞ্জেলেস : কঠোরতা-ভালোবাসার পুনর্বাসন মেলরোজ এভিনিউর ফ্যাশন বুটিকের মধ্যে ফিরোজা রঙের একটি বিশেষত্বহীন দোকানের সম্মুখভাগের মধ্য দিয়ে তারা এসে বৃত্তাকারে সমবেত হন মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র হিলস-এ। তারা ক্লিনিক্যাল সাইক্লোলজিস্ট হাওয়ার্ড সি. স্যামুয়েলের কঠোরতা-ভালোবাসা মেশানো বক্তব্য শোনেন। হিলসে চিকিৎসা ব্যয় পড়ে প্রায় ৫০ হাজার ডলার। সুবিধাভোগী শ্রেণি ছাড়া সবার পক্ষে এখানকার চিকিৎসা নেয়া সম্ভব নয়।
২০১৪ সালে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা থেকে জানা যায় যে হেরোইন সর্বাপেক্ষা পছন্দের মাদকে পরিণত হয়েছে। এমনকি তা মারিজুয়ানা ও মেথামফিটামাইনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ডা: স্যামুয়েল তার চিকিৎসা কাজ শুরু করেন। তিনি মাদকাসক্তদের কাছে জানতে চান যে তাদের মধ্যে ক’জন কমপক্ষে পাঁচটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেছে। ১৯ জনের  প্রায় সবাই তাদের একটি হাত তোলে। ১০টি চিকিৎসা কেন্দ্রে গেছে ক’জন? জানতে চান তিনি। প্রায় অর্ধেকই তাদের হাত তোলেন।
মাদকাসক্তদের একজনের নামের প্রথমাংশ জর্ডান। তার মা-বাবা দু’জনই থেরাপিস্ট। নামের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ শিক্ষিত ৩৩ বছর বয়ষ্ক এ যুবক জানায়, সে ভাগ্যবানদের একজন। এ নিয়ে তৃতীয়বার সে কোনো মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসেছে। সে আগে গাঁজা সেবন করে নেশা করত, মাঝেমধ্যে নাকে টেনে কোকেন নিত। হেরোইন সম্পর্কে সে জানত না। এক বন্ধুর মাধ্যমে সে হেরোইন নিতে শেখে। চার বছর পর তার অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, শহরের সবচেয়ে ভালো হেরোইন নেয়ার জন্য সে মাসে ২০ হাজার ডলার খরচ করত।
হিলসে মাদকাসক্তি মুক্তির চিকিৎসা চলছে তার অনেকদিন ধরে। ক্রমে তার আসক্তি মাদক থেকে সরে জিম, ধূমপান, প্রেমিকা ও উল্কি আঁকার দিকে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। Ñজেনিফার মেদিনা।  
সিয়াটল : ‘স্রষ্টার অনুগ্রহে আমি সেখানে যাই’ মেয়েটিকে দেখলে মনে হয়, সবে সে কৈশোর পেরিয়েছে এবং জ্ঞানবুদ্ধি সবে হতে শুরু করেছে। সিয়াটলের ৬১ বছর বয়ষ্ক মৃদুভাষী ড্যান মানাস বলেন, অক্টোবরের এক রাতে কিং কাউন্টি ইমার্জেন্সি সার্ভিস টহলের তিনি ও তার সহযোগী মেয়েটিকে পান। তিনি মনে করেন, তারা তার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
সাবেক মাদকাসক্ত মানাস বলেন, এ এলাকা তার চেনা। ২২ বছর তিনি মাদকনেশা মুক্ত। গত ৯ বছর ধরে তিনি এ কাউন্টির মাদকাসক্তদের কল্যাণে কাজ করছেন। তিনি বলেন, স্রষ্টার ইচ্ছাতেই আমি এটা করি।
১৯৮০ সালে রাস্তায় পড়ে থাকা মাতালদের উদ্ধার করে একটি নিরাপদ প্রশান্তি কেন্দ্রে স্থানান্তরের লক্ষ্যে একটি বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এ ইমার্জেন্সি সার্ভিস টহল প্রতিষ্ঠা করে। পরে কিং কাউন্টি এ টহলের দায়িত্ব নেয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে শুধু মাতালদের সেবা দেয়া হতো। তারপর তার বাইরে অর্থাৎ মাদকাসক্তদের সেবা দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে তারা প্রশিক্ষণ নেন ও তাদের এ কাজের জন্য নালাক্সোন দেয়া হয়।
এ সেবার আওতার পেছনে যে দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে তা হচ্ছেÑ ক্ষতি হ্রাস। এদিকে ১৯৮৮ সালে পাশর্^বর্তী টাকোমায় দেশে প্রথম পরিষ্কার সূঁচ বিনিময় শুরু হয়। কিং কাউন্টি এখন দেশের প্রথম নিরাপদ ইঞ্জেকশন সাইট খোলার কথা বিবেচনা করছে। এখানে মাদকাসক্তরা একজন স্বাস্থ্যকর্মীর তদারকিতে মাদক ব্যবহার করতে পারবেন যিনি একই সাথে নিরাময় প্রক্রিয়াও অব্যাহত রাখবেন । সবই হবে এক ছাদের নিচে।
মানাসের জন্য সঙ্কটটি ব্যক্তিগত। ১৯৯২ সালে তিনি কোনো এক ব্যক্তির জন্য তিনি মৃত্যু থেকে রক্ষা পান। ওই ব্যক্তি মানাসকে মাত্রাতিরিক্ত নেশাকবলিত অবস্থায় পান ও প্যারামেডিকদের ডেকে এনে তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করেন। তারা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
সিয়াটল ছিল একটি পৃথক, শক্ত ও নিরাপদ শহর। রক মিউজিক ও হেরোইন পাল্লা দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ১৯৯০ সালের দিকে শহর হেরোইনের জোয়ারে প্লাবিত হয়ে যায়। মাদকাসক্তদের মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে হেরোইন শহরে প্রচ- নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।  ২০১৪ সালে আবার তা ব্যাপক রূপ নেয়। তারপর থেকে হেরোইনের তা-ব হ্রাস পেতে থাকে। এখন হেরোইন আসক্তদের নিয়ে সমস্যা অনেকটা কমেছে। সেই মেয়েটির চিকিৎসা চলছে। মানাস বলেন, সত্যটা হচ্ছে এই যে, এখনো হেরোইনসেবীদের সংখ্যা অনেক। এটা বন্ধ হচ্ছে না। -ক্লার্ক জনসন। (অসমাপ্ত) 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ