Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তিনগুণ বেশী মূল্যে কেনা হচ্ছে নিম্ন মানের বীজ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভুট্টা প্রদর্শনী

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তালুকদার হারুন : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চলতি অর্থ বছরের রাজস্ব বরাদ্দে রবি মওসুমে বাস্তবায়নকৃত ভুট্টা প্রদর্শনীতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সারাদেশে বাস্তবায়নকৃত ১০ হাজার প্রদর্শনীর জন্য ক্রয় করা হচ্ছে নিম্ন মানের ভুট্টা বীজ। ক্রয় নীতিমালা বহির্ভূতভাবে অধিক মূল্যে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরীক্ষা ছাড়াই এসব নিম্নমানের বীজ সংগ্রহ করা হচ্ছে রাজস্ব খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভুট্টা প্রদর্শনী বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ বীজ ক্রয় বাবদ।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ বীজ সরবরাহ করার জন্য নেয়া হয়েছে অভিনব কৌশল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদর দপ্তর থেকে সাতক্ষীরাস্থ অখ্যাত বীজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান টাটা ক্রপ কেয়ার কোম্পানী (জনতা ব্যাংক রোড, পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা)-এর কাছ থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে ক্রয় করা হয়েছে সারা দেশের ১০ হাজার প্রদর্শনীর জন্য সকল বীজ। নির্বাচিত সকল উপজেলায় পাঠিয়ে দিয়ে হচ্ছে ফাঁকা ভাউচার। এই ফাঁকা ভাউচার ৩০০ টাকা দরে প্রতি কেজি বীজের দাম ধার্য করে পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদর দপ্তর থেকে।  
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান ও সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাশ অবৈধ অর্থের বিনিময়ে লিয়াজোঁ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিধি বহির্ভূতভাবে বীজ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে পরিচালক চৈতন্য কুমার দাশের। নিজ জেলাতে নড়াইলে প্রতিষ্ঠিত তার ভাইয়ের বীজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরডি ট্রেডার্স, রূপগঞ্জ বাজার, নড়াইল এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানটি তার ভাইয়ের নামে হলেও তিনিই মূলত এর মালিক। অভিযোগ রয়েছে- পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস মেহেরপুরে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক থাকাকালেও বীজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি আর. ডি সীড কোম্পানীর নামে বীজ ব্যবসা পরিচালনা করতেন। উপ-পরিচালক দাপ্তরিক কাজের চেয়ে তার বীজ ব্যবসায়ের জন্য তার অধীনস্থদের বেশী চাপ দিতেন। অফিস সময়ে তিনি সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন বীজ ব্যবসা নিয়ে। এ নিয়ে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
সদর দপ্তর থেকে সরবরাহকৃত বাজার মূল্যের থেকে অধিক মূল্যের নিম্নমানের বীজ যা স্থানীয় ক্রয় দেখানোর জন্য টাটা ক্রপ কেয়ার কোম্পানীর ফাঁকা স্বাক্ষরকৃত ভাউচার (যা প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে) পাঠানোর সমালোচনা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে-  নিম্ন মানের ভুট্টা ব্যবহারে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপর  আস্থা হারাবেন কৃষক। সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের কৃষি।
অন্যদিকে ধৈঞ্চা বীজ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপনেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সারাদেশের সকল উপজেলার জন্য ধৈঞ্চা বীজ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ক্রয়ের জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে নির্বাচন করা হয়েছে এসএম,এস,পি,এ, যশোর ও ইস্পাহানী এগ্রা লিমিটেড নামে দু’ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিটি উপজেলাতে ৪০ কেজি ধৈঞ্চা বীজ ও ৯০ সেট সেক্স ফেরোমন বরাদ্দ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রতি কেজি ধৈঞ্চা বীজ ১২০ টাকা  ও প্রতি সেট সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ৮০ টাকা দরে নির্ধারিত দু’টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতি কেজি ধৈঞ্চা বীজ সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং প্রতি সেট সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ডিএই’র প্রধান কার্যালয় থেকে দেশের সকল উপজেলা কৃষি অফিসগুলোতে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নির্ধারিত চড়ামূল্যে বিল করার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা ভাউচার। একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ধৈঞ্চা বীজ ক্রয়ের জন্য এসএমএসপিএ যশোরের পক্ষে সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার হাস অবৈধ অর্থের বিনিময়ে লিয়াজোঁ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, পরিচালক চৈতন্য কুমার দাসের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান আর ডি ট্রেডার্সকে বীজ আমদানিতে বিধি বহির্ভূত সুবিধা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটি ভারত থেকে ৫০ মেট্রিক টন পাটবীজ আমদানির বরাদ্দ পায়। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানই ১০ মেট্রিক টনের বেশী বরাদ্দ পায়নি। গত বছর মেসার্স আর ডি ট্রেডার্স ১৫ মেট্রিক টন নিম্ন মানের ক্যারিওভার বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হলে চৈতন্য কুমার দাস অবৈধ প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে পুনঃপরীক্ষার আবেদন করে তা মানসম্মত বলে এসসিএ’র প্রত্যয়ন গ্রহণ করে বাজারজাত করে।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে পরিচালক চৈতন্য কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরিচালকের মোবাইল নং ০১৭১৮৪৫৬১৬৪-এ যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ