Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অকেজো হাজার হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ

সেচ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ বিএডিসি

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থাপনা বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বর্তমানে দেশে ৩৬ হাজার ৫৬৬টি গভীর ও ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭১১টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হলেও বিএডিসি পরিচালিত ক্ষুদ্র সেচব্যবস্থা এখনো আধুনিকায়ণ করা হয়নি। সংস্কারের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে হাজার হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ।
আধুনিক সেচপ্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে বিএডিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে দেশের পাঁচ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার জন্য ৯২.৭১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হতো প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি ছিল ২৭.৭১ লাখ মেট্রিক টন। কৃষিজমিকে সেচের আওতায় আনতে দেশে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। বিএডিসি নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব নলকূপের মধ্যে অকেজো এক হাজার ৪২৫টি। গত কয়েক বছরে ৮৬১টি মেরামত করা হলেও এখনো অকেজো রয়েছে ৫৬৪টি। অকেজো এসব নলকূপ সংস্থাটির জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সেচবঞ্চিত হচ্ছেন লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক  এবং প্রায় ৫০ হাজার একর আবাদী জমি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অকেজো নলকূপ সংস্কারের কাজ করা হলেও তা সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। এদিকে অকেজো ৫৬৪ গভীর নলকূপ নিয়ে বিপাকে বিএডিসি।
বিএডিসির ২০১৪-১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি গভীর নলকূপ রয়েছে ৩৩ হাজার ৭১৪টি। এগুলোর মধ্য সরকারি গভীর নলকূপ রয়েছে ২৫ হাজার ২৫২টি। আর বেসরকারিভাবে গভীর নলকূপ রয়েছে আট হাজার ৪৬২টি। এ ছাড়া ২৭ লাখ ছয় হাজার ৩৪৭টি সরকারি-বেসরকারি শ্যালো পাম্প (শ্যালো মেশিন) দিয়ে সেচের জন্য পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে শুধু বেসরকারি শ্যালো নলকূপ রয়েছে ২৭ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচটি।
২০১২-১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি গভীর নলকূপ ছিল ৩২ হাজার ৪১২টি। গত দুই বছরে গভীর নলকূপের সংখ্যা বেড়েছে এক হাজার ৩০২টি। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি দুই হাজার ৮৭৪টি শ্যালো নলকূপ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ তিন হাজার ৪৭৩টিতে।
বিএডিসির ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়. বর্তমান দেশে দুই ধরনের সেচ ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে। একটি হলোÑ বৃহৎ সেচ, অপরটি হলোÑ ক্ষুদ্র সেচ। বৃহৎ সেচ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড  ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এলজিইডি দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ ) ব্যক্তি মালিকায় পরিচালিত হয়ে আসছে ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থাপনা। দুই প্রতিষ্ঠান সেচ মৌসুমে ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে সেচ-সুবিধার আওতায় রয়েছে। এর জন্য ৩৬ হাজার ৫৬৬টি গভীর এবং অগভীর নলকূপের সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৯ হাজার  ৭১১টি, শক্তিশালিত পাম্প  এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭৫টি। এ ছাড়া  ম্যানুয়েলও আরটিশিয়ান ওয়েল ২৭ হাজার ৭১৮টি, প্রচলিত পদ্ধতি ২০ হাজার ২৩২টি এবং গ্র্যাভিটি ফ্লো ৯৬ হাজার ২৭৪টি। এতে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৯ হেক্টর জমি এবং সেচকৃত এলাকা ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমি চাষাবাদ হচ্ছে।
ক্ষুদ্র সেচের বিকাশ হয়েও হয়নি : আধুনিক সেচ প্রযুক্তির প্রয়োগ ও কৃষকদের কাছে তা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিএডিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নব্বই দশকে সরকারি পর্যায়ে সীমিত আকারে এবং বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ক্ষুদ্র সেচযন্ত্র বিশেষ করে অগভীর নলকূপের প্রসার ঘটায় দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার  সত্ত্বেও খাদ্য ঘাটতি সহনীয় মাত্রায় রয়েছে।  এ সফলতা ধরে রাখেতে হলে পরবতী দুই দশক অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।  সারাদেশে সেচকাজ বিকশিত হলেও এখনো বিএডিসি করতে পারেনি।
শক্তি চালিত পাম্প : পঞ্চায় দশকে কৃষি মন্ত্রণালয় আওতায় সারাদেশে ভূ-পরিস্থ পানির মাধ্যমে সেট কার্যক্রম  ১৫৫টি পাম্প নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বিএডিসি প্রতিষ্ঠার পরে প্রযুক্তি সম্প্রসাররণের দায়িত্ব দেয়ার পরে বিএডিসি ১হাজার ৫৫৫টি শক্তিচালিত পাম্পে দাঁড়ায়। ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকার সময় আরো বৃদ্ধি করে ৮৯ হাজার ৯৭৫টি  করে এবং দুই কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন শক্তিচালিত পাম্প সরবরাহ করা হয় কৃষকদের মাঝে। বর্তমানে দেশে শক্তিশালিত পাম্পের সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭৫টি এবং সেচকৃত এলাকায় ১১ লাখ ছয় হাজার ৭০৫ হেক্টর জমি চাষ করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় সস্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো: মকবুল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্র সেচব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। তারপর বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচব্যবস্থা আধুনিকায়ণ করর জন্য আমরা নবায়ণযোগ্য সোলার পাম্প স্থাপনে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। বিএডিসি আমাদের জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশে ১১টি সোলার সেচপাম্প স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে আরো বৃদ্ধি করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো: নাসিরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর সেচকাজে ব্যাপক পানির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সেচের জন্য সুচিন্তিত, সমন্বিত ও পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম গ্রহণ, সেচের পানির সুষ্ঠু ব্যবহার, অপচয়  রোধ, কষিব্যবস্থা আধুনিকিরণ, উচ্চ ফলনশীল ও অর্থকরী ফসল উৎপাদন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গুরত্ব প্রদান করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিএডিসি আগের চেয়ে বর্তমান অনেক আধুনিক তবে কিছু কাজ বাকি রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ