Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদীতে গ্যাসহীন ২ ঘণ্টা অস্থির নাগরিক জীবন

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : গ্যাস ফুরিয়ে গেলে কেমন হবে নগর জীবন? কী হাল হবে শহর ও নগরের আয়েশী মানুষদের বিলাসী জীবনের? কিভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করবে শহুরে মানুষ?
এমনই একটি খ-চিত্র ফুটে ওঠে গত মঙ্গলবার রাতে নরসিংদী ও মাধবদী শহরে। মাত্র ২ ঘণ্টা সময় শহর দু’টিতে গ্যাস না থাকায় হুলস্থুল কা- বেধে যায় নাগরিকদের মধ্যে। ঘটনার আকস্মিকতায় জনজীবন অধীর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রাতের একবেলা খাবার নিয়ে মানুষ বেশি অস্থির হয়ে পড়ে। মাত্র ১ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নরসিংদীর মানুষ হয়ে যায় এক নগর রাষ্ট্রের নাগরিকদের মতো। রেডিমেড খাবারের জন্য মানুষ দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে শুরু করে। শত শত মানুষ সাংবাদিকদের নিকট ফোন করে জানতে চায় গ্যাস না থাকার কারণ। তাৎক্ষণিকভাবে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে মানুষ আরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে।
জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা এলাকায় একটি অবৈধ গ্যাস লাইনের পাইপ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। এ খবর পেয়ে নরসিংদী তিতাস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে নরসিংদী ও মাধবদীতে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। আর এতেই দেখা দেয় বিপত্তি। রাত ৮টার দিকে গৃহিণীরা রাতের খাবার গরম করতে গিয়ে দেখে চুলায় গ্যাস নেই। কেউ রুটি বানাতে গিয়ে দেখে চুলা জ্বলে না। আবার কারো জ্বলন্ত চুলা হঠাৎ ধপ করে নিভে যায়। গৃহিণীরা দৌড়ে গিয়ে গৃহকর্তাদের জিজ্ঞেস করে গ্যাসের কি হলো। চুলায় তো গ্যাস নেই। শুরু হয় প্রশ্নের পর প্রশ্ন। গ্যাসের কি হলো। এই প্রশ্ন মোবাইল থেকে মোবাইলে। ঘর থেকে রাস্তায়, রাস্তা থেকে ময়দানে, ময়দান থেকে বাজারে-বন্দরে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসের কি হলো। সচেতন মানুষ ফোন করে সাংবাদিকদের নিকট। তখন সাংবাদিকরাও জানতে পারেননি গ্যাসের কি হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয় অস্থিরতা। কেউ চলে যায় কেরোসিনের স্টোভ কিনতে, কেউ চলে যায় ইলেকট্রিক চুলা ক্রয়ের জন্য। কেউ কেউ খুঁজতে থাকে এলপি গ্যাসের দোকান। আবার কেউ চলে যায় দোকান থেকে রেডিমেড খাবার, রুটি-ভাজি কেনার জন্য। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। গ্যাস না থাকায় নাশতার দোকান, হোটেলগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। পাউরুটি ও বিস্কুটজাতীয় শুকনা খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় জমে যায়। যেসব দোকানে কয়লার চুলায় রান্না হতো সেসব দোকানে গিয়ে দেখা যায় প্রচন্ড ভিড়। কেউ বসে খাচ্ছে, কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে খাবারের অপেক্ষায়। আবার কেউ পার্সেলে খাবার নেয়ার জন্য কিউতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় এ প্রতিবেদক নরসিংদী তিতাস গ্যাসের ডিজিএম তৌহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে সেখানেও কলজট পরিলক্ষিত হয়। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে তাকে কলে পাওয়া যায়। তিনি জানান, পাঁচদোনায় গ্যাস লাইনে আগুন লাগায় সাময়িকভাবে গ্যাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মেরামত কাজ শেষ হয়ে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্যাস চালু হবে। এরপর রাত ১০টায় গ্যাস পুনরায় চালু হলে নগর জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে।
এ ব্যাপারে শহরের কয়েকজন সচেতন নাগরিক জানিয়েছেন, সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে কিছুদিন যাবৎ সরকারের লোকজন প্রচার করছে যে, সরাসরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে দেশে এলপি গ্যাস বিক্রি করা হবে। সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে সব আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ধরনের কথাবার্তার কারণে লোকজনের মধ্যে ধারণা জন্মায় যে, সরকার বোধহয় হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ধারণা থেকেই নরসিংদীর শহুরে জীবনে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
বলাবাহুল্য, তিতাস গ্যাস লাইন স্থাপিত হবার পর এ নিয়ে দুইবার নরসিংদীর মানুষ গ্যাস সঙ্কটে পতিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এক রাতে চিনিশপুরের একটি গ্যাস স্টেশনে বোমা ফাটানোর ফলে বিশাল অগ্নিকা-ের সৃষ্টি হয়। সে সময় গ্যাসের আগুনে সারা নরসিংদী ও গাজীপুর জেলার একটি অংশ আলোকিত হয়ে যায়। এই গ্যাসের আগুনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও খাল-বিল, নদী-নালা ও বিভিন্ন ডোবার পানিতে আশ্রয় নেয়। সারা জেলায় ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে ভৈরব থেকে গ্যাসের মূল লাইনে সরবরাহ বন্ধ করার পর আগুন নিভে যায়। ৪৫ বছর পর গত মঙ্গলবার রাতে একটি অবৈধ গ্যাস লাইনে পাইপ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে গেলে নরসিংদী তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। দুই ঘণ্টা মেরামত কাজের পর আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ