Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বছরে দক্ষিণ-পশ্চিমের আমজনতার প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : একসময়ের অস্ত্রবাজ চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ভয়ঙ্কর জনপদ হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণ-পশ্চিমের আমজনতার নতুন বছরের প্রত্যাশা মাদক, অপরাধ ও সন্ত্রাস শূন্যের কোঠায় নামবে। বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির নামে অস্ত্রবাজদের দাপট এখন আর নেই ঠিকই তবে প্রায় প্রতিটি এলাকায় উঠতি বয়সী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের দাপট লক্ষণীয়। যশোরসহ কয়েকটি এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের দাপট কিছুটা কমলেও সীমান্তবর্তী গোটা অঞ্চল থেকে সমূলে নির্মুল করা যায়নি। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নতুন বছরে সব ধরণের অপরাধ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। তাদের কথা, কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া বছরটি সার্বিক বিষয়ে কেটেছে মোটামুটি। পুরাতনকে ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে প্রতাশা করেছে, ২০১৭ কাটুক গেল বছরের চেয়ে ভালো। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের আশীর্বাদপুষ্ট ও স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল আসলেই অনেক সম্ভাবনাময়। কিন্তু নানা কারণে পিছিয়ে রয়েছে অঞ্চলটি। তাই এবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন পুরণ হোক।
দেশের ৩৭ শতাংশ এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী পদ্মার শাখা-প্রশাখা অভিন্ন নদ-নদী পানিশূন্যতায় উদ্বিগ্ন। শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে পানি সংকট হয় তীব্র। যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার বিরাট এলাকায় কপোতাক্ষ নদপাড়ের মানুষ কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা যথাযথভাবে ব্যয় না করে নামকাওয়াস্তে কাজ দেখিয়ে লুটপাট হওয়ায় সমস্যার সমাধান হয়নি গেল বছর মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয় যশোর ও খুলনার অন্যতম দুঃখ ভবদহ সমস্যার। নতুন বছরে প্রত্যাশা রয়েছে ভবদহ, কপোতাক্ষসহ মূল সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে। দাবি পুরণ হয়নি সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যশোরকে তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা ও বিভাগ করার। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষের প্রাণের দাবির বাস্তবায়ন হতে চলেছে সেটি হচ্ছে পদ্মা সেতু। এটি সম্পন্ন হলে গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সার্বিক অর্থনীতিতে বিরাট সুফল বয়ে আনবে। বিশ্ব ব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্তমান সরকারের এই কাজটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা, নদীবন্দর নওয়াপাড়া, ভোমরা ও দর্শনা স্থলবন্দরের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখতে চায় জনগণ। এসব বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। অথচ বন্দর বা বন্দর এলাকার উল্লেখযোগ্য উন্নয়নে ব্যয় হয় না। গ্রামাঞ্চলের পীড়াদায়ক বিষয় এনজিওদের ঋণের জালে আটকেপড়া কৃষকদের বের করে আনা দরকার। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরার জোরদার কোন ব্যবস্থাপনা ছিল না গেল বছর। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের ব্যবস্থাও বছরের শেষদিকে ছিল একেবারেই ঢিলেঢালা। একইভাবে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যের ব্যবস্থা হয়নি। এতে কর্মবীর কৃষকরা মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারছেন না। বিশেষ করে সারাদেশের মোট চাহিদার ৬৫ ভাগ সবজি উৎপাদন করে অঞ্চলটি। মাঠের মূল্য আর বাজার মূল্যের বিস্তর ফারাকের কারনে উৎপাদক চাষী ও ভোক্তা উভয়েই ঠকেছে। বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও দেশের ৬৫ভাগ উৎপাদিত ফুলের রাজ্য যশোর থেকে আজো ফুল হিসেবে রফতানির পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফুল রফতানি হচ্ছে সবজি হিসেবে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ এখনো হয়নি। তবে এ বছররের শুরুতেই যশোর ও খুলনাসহ বিভিন্নস্থানে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা হচ্ছে। নতুন বছরের প্রথমেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার আয়োজন প্রশংসিত হয়েছে। এ অঞ্চলের কোথাও কোথাও সরকারি দলের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের নানাভাবে হয়রানী ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে গেল বছর। টেন্ডারবাজিরও অভিযোগ ছিল প্রবল। নতুন বছরে সেটি যাতে না হয় তাও প্রত্যাশা করা হয়েছে সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল থেকে।
রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে সহনশীলতা, সহমর্মিতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও সৌহার্দ্যপুর্ণ পরিবেশ অনুপস্থিতি রাজনীতি সচেতন প্রতিটি মানুষকে দারুণভাবে পীড়া দিয়েছে। সবার কথা দেশ ও জাতি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও আমজনতার প্রত্যাশা পুরণের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই ১০ জেলার ২২ হাজার ৭শ’৩৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৫৯টি থানার ৬শ’৬৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ কোটি মানুষের একটি অংশ তিন যুগ ধরে অস্ত্রবাজ চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি ছিল। সেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে অনেকাংশে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদেও মতে, সন্ত্রাসসহ সব ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কমিউনিটি পুলিশিং গড়ে তোলা দরকার। সুত্র জানায়, ১০ জেলার ৬০১টি ইউনিয়ন ও ৫হাজার ৪৮২টি ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির মোট ১লাখ ৩৫ হাজার ২শ’৪৫ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই কোন ভুমিকা নেই। কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছে কমিউনিটি পুলিশং। যদি তাদেরকে কাজে লাগিয়ে জোরদারভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, তাহলে বহুলাংশে সফলতা আসবে সন্ত্রাস দমনে।
সম্ভাবনাময় অঞ্চলটির সমস্যাদির সমাধানের মাধ্যমে নতুন বছরে মাঠপর্যায়ে জরিপ চালিয়ে কোথায় কি সম্ভাবনা তা চিহ্নিত করে সরকারী পদক্ষেপ নেয়া হবে এটিই আশা করেন আমজনতা। কৃষির ক্ষেত্রে বিরাট উন্নয়ন হয়েছে এটি ধরে রাখার জন্য কৃষকদের সমস্যার সমাধান বিশেষ করে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা দরকার সর্বাগ্রে। বেনাপোল থেকে নড়াইল ছুয়ে ভাটিয়াপাড়া হয়ে রাজধানী ঢাকার প্রস্তাবিত হাইওয়ে সড়ক নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং সতক মহাসড়কে খানাগর্ত মেরামতে যতœবান হওয়ার প্রত্যাশা আমজনতার। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার কমানোর পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি মোটেও। শিল্প কলকারখানারয় গতি আসেনি। শিল্পনগরীর উদ্দেশ্য অধিকাংশস্থানে বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিসিক।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সমস্যা থাকবেই তবে সমাধানের উদ্যোগ ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে কার্যকর। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় বিষগুলো চিহ্নিত করে জনমানুষের স্বার্থে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে এটিই নতুন বছরের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ